আ.লীগকে তৃতীয়বার গণহত্যার সুযোগ দেওয়া হবে না: রাশেদ খাঁন
Published: 18th, January 2025 GMT
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেছেন, “শেখ মুজিবের নেতৃত্বে প্রথম গণহত্যা, দ্বিতীয়বার হাসিনার নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগকে তৃতীয়বার গণহত্যার সুযোগ দেওয়া হবে না।”
গতকাল শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর আল রাজী কমপ্লেক্সের সামনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “গত ৫ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো আওয়ামী হাইকমান্ড ও শেখ পরিবারের খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদের অনুপস্থিতিতে রায় ঘোষণা হওয়া মানে বিচারের নামে প্রহসন করা। আমাদের স্পষ্ট কথা, শেখ হাসিনা ও কাদেরসহ ভারতে পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনতে হবে। এদের শাস্তি না হলে শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। আর এ খুনি দলটি বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “বিচারের পূর্বে তারা কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আমাদের দাবি, আওয়ামী লীগসহ তাদের অঙ্গ সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও নিবন্ধন স্থগিত করতে হবে। ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ‘সরকার বা হাইকোর্টের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ না হলে, তারা নির্বাচনে যেতে পারবে।’ আমাদের কথা হলো, স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ দিলে, তার বিরুদ্ধেই আন্দোলন শুরু হবে। আওয়ামী লীগকে কেউ পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে, সেটা আমাদের রক্তের উপর দিয়ে করতে হবে।”
রাশেদ বলেন, “৭১ এর পর শেখ মুজিবের নেতৃত্বে একবার গণহত্যা হয়েছে, ২৪ এ তার মেয়ের নেতৃত্বে গণহত্যা। আওয়ামী লীগকে তৃতীয়বার আর গণহত্যার সুযোগ দেওয়া যাবে। আওয়ামী লীগকে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর মত নিষিদ্ধ করতে হবে। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় সংলাপে প্রায় প্রতিটি দল ও স্টেকহোল্ডার প্রতিনিধি সরকারের সমালোচনা করেছে। আমি প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, আপনি সবার বক্তব্য শুনে নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পারছেন, কিভাবে সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ ৫ মাসেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, ভ্যাট- ট্যাক্স বেড়েছে।”
রাশেদ আরো বলেন, “ছাত্ররা যে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল, তারই বাংলা অনুবাদ সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়েছে। তাহলে কি ধরে নিবো সরকার শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করছে? দেখেন, এখন কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম না। এটাকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রকৃত নেতৃত্ব ও আন্দোলনকারীদের মাইনাস করে কমিটি গঠন হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব নিয়ে হট্টগোল হয়েছে। সুতরাং একটি জাতীয় কমিশন গঠন করার মাধ্যমে সরকারকে সবার মতামত নিয়েই ঘোষণাপত্র তৈরির উদয়োগ নিতে হবে।”
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ৮৩৪ জন শহীদের গেজেট প্রকাশ করেছে। বাকিদের তালিকা কই? ৭১ এর মত কোন বিকৃত ইতিহাস শুনতে চাই না। দ্রুত শহীদের সঠিক তালিকা করুন, শহীদ পরিবারকে ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিন এবং আহতের ধরণভেদে ৫০ লাখ করে ক্ষতিপূরণ দিন।”
গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য শাকিল উজ্জামান, দলের উচ্চতর পরিষদ সদস্য হাসান আল মামুন, গণমাধ্যম সমন্বয়ক আভ হানিফ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঈসমাইল আহমেদ বন্ধন, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নুরুল করিম শাকিল প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে গণঅধিকার পরিষদ। মিছিলটি নাইটিংগেল, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলার মোড়, পল্টন মোড় ঘুরে পুনরায় আল রাজী কমপ্লেক্সের সামনে এসে শেষ হয়।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র গণহত য সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)