রুনা খান। মডেল ও অভিনেত্রী। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আজ বিকেলে রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় অডিটরিয়ামে থাকছে তাঁর অভিনীত ‘নীলপদ্ম’ সিনেমার প্রদর্শনী। এই সিনেমা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।

গত বুধবার ‘নীলপদ্ম’ সিনেমার প্রথম প্রদর্শনী হয়। দর্শকের প্রতিক্রিয়া কেমন দেখলেন?
যারা সিনেমাটি দেখেছেন, তারা প্রত্যেকেই বেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। যদিও শুরুতে বিষয়টি নিয়ে কিছুটা স্নায়ুচাপে ছিলাম। এরপর যখন দর্শকদের সঙ্গে সিনেমাটি দেখলাম, তখন দেখলাম আমার অভিনীত ‘নীলা’ চরিত্রটির সঙ্গে দর্শকরা একাত্ম হচ্ছেন। এটি একজন অভিনয়শিল্পীর জন্য অনেক বেশি আনন্দের।

নীলপদ্ম সিনেমার দৃশ্যধারণের সময়কার কথা.

..
এ সিনেমাকে অন্য আট-দশটি সিনেমার সঙ্গে মেলালে হবে না। ‘নীলপদ্ম’ গল্পের সিনেমা। নির্মাতা এ সিনেমার মাধ্যমে যৌনকর্মীদের কথা বলেছেন। ফলে এ কাজটি নিয়ে দীর্ঘসময় যৌনকর্মীদের জীবন, সামাজিক অবস্থান নিয়ে গবেষণা করতে হয়েছে। কাজের সুবাদে অনেকটা সময় দৌলতদিয়া পল্লিতে যেতে হয়েছে। শুটিংয়ের অবসরে ওখানকার মেয়েদের সঙ্গে গল্প করেছি। তারা আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন, এমন ভালোবাসা আমি কোথাও পাইনি। ওদের আচার-আচরণ আমাকে আবারও বুঝিয়ে দিয়েছে সবকিছুর ওপরে সবাই মানুষ।

আমাদের দেশে বর্তমানে জীবনধর্মী গল্প কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে হয়?
সত্যি বলতে কী, আমাদের এখানে জীবনঘনিষ্ঠ গল্পের গুরুত্ব কম। কারণ, এসব কাজে ঠিকমতো বাজেট পাওয়া যায় না। তারপরও অনেক নির্মাতা এমন গল্প নিয়ে চিন্তা করছেন। এই যেমন ‘নীলপদ্ম’ সিনেমার কথাই বলি। এ সিনেমার গল্পটি যখন নির্মাতা তৌফিক এলাহী তৈরি করছেন; তিনি কিন্তু এই গল্পের জন্য ঠিকঠাক বাজেট পাননি। যদি তিনি ভালো বাজেট পেতেন, তাহলে সিনেমাটি আরও ভালো হতো বলে আমার বিশ্বাস।  নির্মাতার এই চেষ্টাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সাধুবাদ জানাই। তিনি অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কাজটি করেছেন। 

নিজের অভিনীত চরিত্রগুলো নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট?
কখনোই আমার কাজ আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারে না। শুটিং সেটে শুধু মনে হয় এটি হচ্ছে না, ওটি হচ্ছে না। সব সময় একটি অপূর্ণতা মনে হয়। যেমনটি হয়েছে ‘নীলপদ্ম’ সিনেমার ক্ষেত্রে। এ সিনেমা দিয়ে নির্মাতা সমাজের এক অংশের কথা বলতে চেয়েছেন। সেখানে আছে বিশেষ কিছু বার্তা। তিনি সিনেমার মাধ্যমে যে শ্রেণির মানুষের বার্তা দিতে চেয়েছেন সেটি যদি দেশের মানুষের কাছে পৌঁছায় তাহলেই আমাদের সার্থকতা।

ক্যারিয়ারের এ সময়ে এসে নিজেকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
মূল্যায়ন কীভাবে করব! আমি নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সফল ও সুখী মানুষদের একজন মনে করি। এক জীবনে সব কিছুর স্বাদ পেয়েছি। সংসারে সুখ ও ভালোবাসা পেয়েছি, ব্যক্তিজীবনে সাফল্য পেয়েছি, আর কী লাগে!

সহকর্মীরা যখন অভিনয়ের প্রশংসা করেন, তখন কী মনে হয়?
আমার আড়ালে কেউ যখন আমার প্রশংসা করেছে বলে জানতে পারি। তখন সেই প্রশংসা আমার কাজে অনুপ্রেরণা জোগায়। যখন কেউ সামনাসামনি আমার কাজের জন্য ভালো কিছু বলেন, তখন লজ্জায় পড়ে যাই।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে