হোঁচট খেয়ে আর্তেতা দুষলেন ফুটবলার স্বল্পতাকে
Published: 19th, January 2025 GMT
দুই গোলে এগিয়ে গিয়েও অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা দৌড়ে পিছিয়ে গেল আর্সেনাল। শেষ মুহূর্তে অবশ্য জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তবে ভিএআর নাটকে ‘সোনার হরিণ’ জয়টা আর পাওয়া হয়নি আর্সেনালের। ম্যাচ শেষে দলের এমন পারফরম্যান্সের জন্য বেঞ্চে ‘অপর্যাপ্ত খেলোয়াড়’ থাকাকে দুষলেন গানার বস মিকেল আর্তেতা।
ঘরের মাঠ এমিরেটস স্টেডিয়ামে বিরতির আগে ও পরে গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি ও কাই হাভার্টজের গোলে শক্ত অবস্থানে ছিল আর্সেনাল। ম্যাচের ৫৫ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকা স্বাগতিকরা ৮ মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল হজম করে। ভিলার পক্ষে ইউরি টিয়েলেমান্স ব্যবধান কমান। এরপর ওলি ওয়াটকিন্স সমতায় ফেরান সফরকারীদের।
অল্প সময়ের মধ্যেই দুই গোল হজম করে আর্সেনাল দিশেহারা হয়ে যায়। তবে শেষদিকে আবারও কক্ষপথে ফেরেন তার। ম্যাচের ৮৭ মিনিটে তাদেরকে পুনরায় এগিয়ে নেওয়ার কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন মিকেল মেরিনো। এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার বল জালে জড়ালেও ভিএআরের ফাঁদে গোলটা আর পাওয়া হয়নি। এমনকি যোগকরা সময়ে বেশ কয়েকবার গোলের খুব কাছাকাছি গিয়েও বঞ্চিত থাকতে হয় স্বাগতিকদের।
আরো পড়ুন:
ড্রয়ের পর লিভারপুল ম্যানেজার জানালেন, ‘এর বেশি চাওয়া যায় না’
লিভারপুলের পয়েন্টে ভাগ বসালো ম্যানইউ
ম্যাচ শেষে হতাশ আর্তেতা শিরোপা প্রতিদ্বন্দ্বী লিভারপুলের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, “শিরোপা দৌড়ের কিছু মুহূর্ত থাকে, লিভারপুল সেটা ভালোভাবে পাড়ি দিচ্ছে।” এরপর এই স্প্যানিশ ম্যানেজার দাবি করে বসেন প্রিমিয়ার লিগে লড়াই করার মত বেঞ্চের শক্তি তার নেই! দারউইন নুনেজ যেভাবে বদলি হিসেবে নেমে যোগকরা সময়ে লিভারপুলকে জিতিয়েছেন সেই প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
“তারা (লিভারপুল) খেলোয়াড় বদল করে এবং সেটা ম্যাচে প্রভাব ফেলে। যেই বদলি খেলোয়াড়রা ম্যাচের ফলাফল বদলে দিতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের দলে ঠিক বিপরীত ঘটেছে। এগিয়ে যাওয়ার পরও আমি জানতাম বিপদ ছিল। আমি খেলোয়াড়দের অবস্থান জানি।”- জানান আর্তেতা। তাহলে কি শীতকালীন দলবদলের জানালা বন্ধ হওয়ার আগে আর্সেনালের নতুন কিছু সাইনিং দরকার? এই প্রশ্নের জবাবে ৪২ বছর বয়সী গানার ম্যানেজার বলেন, “আমরা যেমন পারফরম্যান্স করছি, আমি জানি না লিগে বাকি কয়টা দল এই পর্যায়ের ফুটবল খেলছে । কিন্তু আপনি আমাদের বেঞ্চের দিকে তাকালে বলবেন যে আমরা খুব স্বল্পতায় (মানসম্মত ফুটবলারের) আছি।”
লিগে সবশেষ তিন ম্যাচের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার পয়েন্ট হারাল আর্সেনাল। তাতে শিরোপা দৌড়েও বড় একটা ধাক্কা খেল দলটি। ২২ ম্যাচে ১২ জয় ও আট ড্রয়ে ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে তারা। এক ম্যাচ কম খেলে ১৫ জয় ও ৫ ড্রয়ে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল আর স ন ল আর স ন ল আর ত ত
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
পরাজয়ের গ্লানি থেকে গর্বের গাঁথায় ফেরার গল্প যখন লেখা হয়, সেখানে একজন নায়ক থাকেন। এইবার সেই নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। সিলেটের লজ্জাজনক হার ভুলিয়ে দিয়ে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ যেন ঘুরে দাঁড়াল মেঘ ফুঁড়ে রোদ ওঠার মতো। অলরাউন্ড মিরাজের ব্যাটে-বলে দ্যুতি ছড়ানো আর তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে বিধ্বস্ত জিম্বাবুয়ে। ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়।
প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে কোনো সুযোগই দেয়নি বাংলাদেশ। তাইজুল ও নাঈম ইসলামের নির্ভুল বোলিংয়ে মাত্র ২২৭ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। এরপর ব্যাট হাতে পাল্টা জবাব দেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। সাদমান ইসলামের ধারাবাহিকতা আর মিরাজের সংগ্রামী সেঞ্চুরিতে দল পৌঁছে যায় ৪৪৪ রানে। নেয় ২১৭ রানের লিড।
সাদমান তুলে নেন দারুণ এক সেঞ্চুরি, কিন্তু ম্যাচের মূল চিত্রনাট্য লিখলেন মিরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতকে তিনি ছিলেন নির্ভার, নিবেদিত এবং নিখুঁত। ১৪৩ বলের ইনিংসে ১১টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো তার ১০৪ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস শুধু দলীয় সংগ্রহে রানের সংযোজন ছিল না, ছিল প্রতিরোধ আর প্রতিশোধের প্রতীক।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করে মুজারাবানির ইতিহাস
ইনিংস ব্যবধানে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বদলা নিলো বাংলাদেশ
তাইজুলের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে গড়েন ৬৩ রানের জুটি। এরপর তানজিম হাসান সাকিবের সঙ্গে নবম উইকেটে যোগ করেন আরও ৯৬ রান। তানজিম নিজেও খেলেন ৪১ রানের কার্যকর ইনিংস। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজ যখন আউট হন, তখন স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশ—৪৪৪।
প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নামা জিম্বাবুয়ের মাসেকসা ১১৫ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে রেখেছিলেন আলোচনার খোরাক।
দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ের ইনিংস যেন শুরুই হলো পতনের ধ্বনি বাজিয়ে। মাত্র ৮ রানেই পড়ল ২ উইকেট। তাইজুল প্রথমে বোল্ড করলেন ব্রিয়ান বেনেটকে। এরপর এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেললেন নিক ওয়েলচকে। স্কোর যখন ৬৯, তখন উইকেট ৫টি। এরপর নাম মাত্র প্রতিরোধ গড়ে বেন কুরান ও ক্রেইগ আরভিন। কুরান করেন সর্বোচ্চ ৪৬ রান, আরভিন ২৫। বাকিরা যেন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা সারলেন। ১১১ রানে অলআউট হয়ে লজ্জার হার বরণ করে নেয় জিম্বাবুয়ে।
মিরাজ বল হাতেও রচনা করলেন অনন্য মহাকাব্য। ২১ ওভারে ৮ মেডেনসহ মাত্র ৩২ রানে শিকার ৫ উইকেট। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৩তম পাঁচ উইকেট শিকার। তাকে দারুণ সহায়তা দেন তাইজুল, ৩টি উইকেট নেন ৪২ রানে। নাঈম ইসলামের ঝুলিতে যায় ১ উইকেট।
একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ফাইফার, এমন কীর্তির সাক্ষী হওয়া সবসময় ঘটে না। মেহেদী হাসান মিরাজ সেই বিরল অর্জনের মালিক হয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন। শুধু এখানেই শেষ নয়, দুই টেস্টে মোট ১৫ উইকেট ও একটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরির সুবাদে সিরিজ সেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতেই।
চট্টগ্রামে এই জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ শুধু সিরিজে সমতা ফেরায়নি, সিলেটের ক্ষতচিহ্নও কিছুটা মুছে দিয়েছে। মিরাজের ব্যাট-বলের বীরত্বে লেখা হলো এক প্রত্যাবর্তনের মহাকাব্য—যেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেট আবারও প্রমাণ করেছে, তারা হার মানে না, হারিয়ে দিতে জানে।
ঢাকা/আমিনুল