মেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বাতিলের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে আজকের মধ্যে ফলাফল বাতিল করে পুনরায় প্রকাশ করার আল্টিমেটাম দেন তারা। 

সোমবার সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একত্রিত হয়ে ‘বাংলাদেশের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ এবং ‘সর্বস্তরের মেডিকেল  ও ডেন্টাল শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকবৃন্দ’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকরা সংহতি জানিয়ে উপস্থিত হন।

শিক্ষার্থীরা ‘অবিলম্বে ফলাফল বাতিল করো, করতে হবে’, ‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা’, ‘মেডিকেলের ফলাফল-পুনঃপ্রকাশ করতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এ সময় মেডিকেল ও ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিও জানান তারা।

কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা আজকের মধ্যে ফলাফল বাতিলের দাবি জানান। তারা বলেন, আজকের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ফলাফল পুনরায় প্রকাশ করতে হবে। নইলে আমরা আগামীকাল আবারও আন্দোলনে নামব। প্রয়োজনে আমরা ঢাকা মেডিকেলসহ সারাদেশের সব মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে নামব।

কর্মসূচিতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলে কলেজের শিক্ষার্থী আবির হোসেন বলেন, ‘আগে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বহাল থাকলেও সেখানে কাট মার্কের চেয়ে এক থেকে দুই মার্কের কম পেলে কোটায় চান্স পেত কিন্তু এই বছর নাতি-নাতনি কোটায় কাট মার্কের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ নম্বর কম পেয়েও সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়েছে যা আমরা মেনে নিতে পারি না আর মানবও না। আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সকল ধরনের কোটার বিলুপ্তি চাই। আজকের মধ্যে কোটা বৈষম্যপূর্ণ ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ফলাফল প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি।

মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, ২৪ গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি মেডিকেলে অযৌক্তিক বৈষম্যমূলক কোটা চালু রয়েছে। অনেকে ৭২ নম্বর পেয়েও চান্স পায়নি অথচ অনেকে ৪০ পেয়েও চান্স পেয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও পোষ্যকোটাসহ অযৌক্তিক কিছু কোটা রয়ে গেছে। আমরা চাই অতি দ্রুত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পুনঃপ্রকাশ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা থেকে সকল প্রকার অযৌক্তিক কোটা বিলুপ্ত করতে হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী দোহা বলেন, বৈষম্য বাতিল চেয়ে কোটার সংস্কার চেয়ে একটি সফল আন্দোলনের পরেও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় বৈষম্যমূলক আচরণ মানা যায় না। যেখানে পাশ নম্বরই ৪০ সেখানে ৩৭ বা ৩৮ পেয়ে কীভাবে কেউ মেডিকেলে পড়তে পারে। আমরা আজকের মধ্যে এই বৈষম্যের সমাপ্তি দেখতে চাই। নইলে আমরা আবার আন্দোলনে নামব।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফল ফল ফল ব ত ল ব ত ল কর পর ক ষ য় ফল ফল প

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও