কক্সবাজারে পাসপোর্ট করতে গিয়ে গ্রেপ্তার দুই রোহিঙ্গা নারী
Published: 22nd, January 2025 GMT
কক্সবাজারে ভুয়া পরিচয় দিয়ে পাসপোর্ট করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই রোহিঙ্গা নারী। গত সোমবার শহরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। জালিয়াতির অভিযোগে মামলা দিয়ে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে দু’জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার দু’জনের মধ্যে একজন মারজান বিবি ওরফে মায়রাম বিবি (২২)। তিনি উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয় শিবিরের (ক্যাম্প-৪) ‘সি’ ব্লকের রোহিঙ্গা আয়ুব খানের মেয়ে। আরেকজন ১৬ বছরের কিশোরী। সেও একই ক্যাম্পে থাকত।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি ইলিয়াস খান জানান, সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যান মারজান ও রাবেয়া। তারা নিজেদের বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয় দেন এবং কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া এলাকায় নিজেদের ঘর আছে দাবি করেন। দাবির পক্ষে পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহেদা আকতারের স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র জমা দেন তারা। এ ছাড়া কক্সবাজার পৌরসভা থেকে নেওয়া জাতীয়তা সনদও জমা দেন। এতে জাহেদা আকতার ও কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ ওমর ছিদ্দিক লালুর সই রয়েছে। দুই সনদে মারজান ও রাবেয়াকে ‘জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, দু’জনের আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে পাসপোর্ট অফিসের লোকজন যাচাই-বাছাই করে তাদের মিয়ানমারের নাগরিক (রোহিঙ্গা নারী) হিসেবে প্রমাণ পান। এ সময় তাদের কাছে পাসপোর্টের আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া বিভিন্ন কাগজপত্র পাওয়া যায়। পরে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোবারক হোসেন তাদের কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
দুই সনদে সই থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে জাহেদা আকতার বলেন, ‘কাগজপত্র না দেখে এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না।’ প্যানেল মেয়র-২ ওমর ছিদ্দিক লালু বলেন, ‘ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয়তা সনদ দেওয়া হয়। এখানে আমাদের যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ থাকে না।’
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াস খান বলেন, দালালের মাধ্যমে দুই রোহিঙ্গা বাংলাদেশি সেজে পাসপোর্ট তৈরি করে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে পালানোর চেষ্টা করছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার পর দু’জনকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’