জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শাখা ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে ৫৪তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কুইজ প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এতে শিক্ষার্থীদের শিবির সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে সংগঠনটি ‘আস্ক শিবির, নো শিবির’ নামের প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করে। প্রধান অতিধি হিসেবে উপস্থিত থেকে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রিয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটরিয়ামের সেমিনার কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

জাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিবের সভাপতিত্বে এতে আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রিয় প্রকাশনা সম্পাদক মো.

আবু সাদিক কায়েম এবং জাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি ও সাবেক কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাড. সাকিল উদ্দিন।

জাবি শাখা শিবিরের সদস্য মাজহার ফাহিমের সঞ্চালনায় সাবেক সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১ ব্যাচের শিক্ষার্থী অ্যাড. শাকিল আহমেদ বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইটা লাইন একসঙ্গে দেখা এ মুহূর্তে আমাদের জন্য যেমন আনন্দের তেমনি বিশ্বাস না হওয়ার মত। লাইন দুটি হলো- বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।”

তিনি বলেন, “একটা সময় ছিল জাবিতে অতিথি পাখি মারলে ৫০০ টাকা জরিমানা দেওয়া লাগতো। কিন্তু শিবির মারলে পুরস্কৃত করা হত। এ ক্যাম্পাসে এমনও মানুষ তৈরি হয়েছে, যারা ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে উদযাপন করেছিল। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সারারাত ধরে নির্যাতন চালিয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। এখানে হলের ছাদ থেকে শিক্ষার্থী ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ছাত্র রাজনীতির নামে এখানে হত্যা, খুন, ধর্ষণ, হল দখল, সিট বাণিজ্য ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল।”

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম বলেন, “অনেকে আমাদের আন্দোলনের নায়ক বলেন, মাস্টামাইন্ড বলেন। আন্দোলনের প্রকৃত নায়ক শহীদরা। গণঅভ্যুত্থানে বিজয় এসেছে শহীদ ভাইদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে। শহীদরাই এ আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড।”

তিনি আরও বলেন, “ইসলামি ছাত্রশিবির ব্যক্তিগত স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে জাতীয় স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। এটি শুধু একটি ছাত্র সংগঠন না, এটি একটি স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ছাত্রশিবিরের কর্মী হতে চাইলে তাকে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমরনীতি, বিজ্ঞানসহ সব ক্ষেত্রে অগাধ জ্ঞান রাখতে হয়। জাতীয় স্বার্থে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার কারণে আমাদের অনেক ভাইকে জীবন দিতে হয়েছে। নৈতিকতার দিক থেকে শিবির অনন্য। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শিবির শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। একজন যুবককে নীতি নৈতিকতা ও পরিপূর্ণ খাঁটি মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে শিবির বদ্ধ পরিকর।”

শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা ১৯৪৭ সালে দীর্ঘ ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পাকিস্তান গঠিত হয়। পাকিস্তান সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে না পারায় ৫২  ও ৭১ এর মতো ঘটনা ঘটেছে। ১৯৭৩ এর ভোটচুরি, বাকশাল, ৭৪ এর দূর্ভীক্ষের ঘটনা আমরা দেখেছি। শেখ হাসিনাও সেই ধারাবাহিকতা বহাল রেখেছিলেন।”

তিনি বলেন, “ফেরাউন মারা যাওয়ার পর পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোন ফেরাউন আসেনি। কিন্তু ফেরাউনের কাজগুলো অসংখ্য ব্যক্তি লেবাস পরিবর্তন করে করে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের মূল মাস্টামাইন্ড হাসিনা হয়ত পালিয়ে গেছে। কিন্তু এ জমিন থেকে ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন হয়নি। যারা রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছে, তারা কোনোভাবে চায় না এ দেশে নতুন কোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম হোক।”


তিনি আরো বলেন, “বৃটিশদের দেওয়া শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল গোলাম তৈরির হাতিয়ার। কিন্তু আজও আমরা সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে যাচ্ছি। আজ পর্যন্ত আমরা যুগ, জাতির চাহিদা ও চিন্তার আলোকে কোনো শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে পারিনি। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যখন মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার প্রতিযোগিতা করছে, তখন আমরা হল দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছি। আমরা যখন একে অন্যের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করব, তখনই আমরা সৎ ও যোগ্য হয়ে উঠব।”

শিবির সভাপতি বলেন, “আমাদের যে জনসংখ্যা আছে, সেটাকে মানব সম্পদে রূপান্তর করতে পারলে বাংলাদেশ হবে আধুনিক বিশ্বের রোল মডেল। ছাত্রশিবির সেই কাজই করে যাচ্ছে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, “দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ছাত্রশিবিরের জাবি শাখার আজই প্রথম অনুষ্ঠান। জাবিতে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তারা বিভিন্ন ইতিবাচক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই, জাবিতে শিবির নিয়ে যে ধরনের কথাবার্তা ও সমালোচনা উত্থাপিত হয়েছে, সে বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবে। তাদের সব ইতিবাচক কাজের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। অতীতের মতো আবারও যেন এ ক্যাম্পাসে গণরুম গেস্টরুমের কালচার ফিরে না আসে, সেজন্য একত্রে কাজ করার আশা ব্যক্ত করছি।”

গনঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “অভ্যুত্থানের পরবর্তী মাত্র ৬ মাসে যে সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে, সেটি ইসলামি ছাত্রশিবির। ইসলামী ছাত্রশিবির দেখিয়ে দিয়েছে, কিভাবে পেশি শক্তির রাজনীতি না করে ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করা যায়, রাজনীতি করতে গণরুম থেকে জোর করে শিক্ষার্থী নিয়ে আসতে হয় না, পথে ঘাটে শোডাউন দেওয়া লাগে না। ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো জন্য বিষয়গুলো অনুকরণ করা উচিত।”

জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক ইয়াহিয়া জিসান বলেন, “আমরা যারা দীর্ঘদিন জাবিতে রাজনীতি করেছি, যারাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করেছি, তাদেরই শিবির নামে ট্যাগিং করা হতো। এখনো নতুন দল একই পদাঙ্ক অনুসরণ করছে। আমরা নতুন বাংলাদেশে ছাত্রলীগ মডেলের রাজনীতি আর চাই না। হল দখলের রাজনীতির পরিবর্তে শিবিরের মন দখলের রাজনীতিই পারে আমাদের ২৪ এর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ হ ঙ গ রনগর র র জন ত ক জ কর ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই ডকুমেন্টরিতে ‘ফুটেজ’ না থাকায় জাবি ছাত্রদল নেতার হট্টগোল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য ২৪’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রচারিত ডকুমেন্টরিতে ফুটেজ না থাকায় এক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে হট্টগোল করা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের (২০০৯-১০ সেশন) সাবেক শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হলের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে এ হট্টগোল করেন তিনি।

আরো পড়ুন:

জুলাই শহীদ পরিবারদের সংবর্ধনা দিল জাবি

জুলাই শহীদদের স্মরণে জাবি ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ

এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে ওই ছাত্রদল নেতা উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে থাকেন, “এই‌ ডকুমেন্টরিতে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। ডকুমেন্টরিতে ছাত্রদলের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে। আমরাও আন্দোলন মাঠে ছিলাম, জেল-জুলুম, মামলা আমরাও খেয়েছি।”

এ সময় তার সঙ্গে শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক রোমান রাশিদুল ও হাসান শাহরিয়ার রমিমকেও হট্টগোল করতে দেখা যায়।

অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের জন্য তাদের দুইদিন সময় দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে একটি মাত্র ক্যামেরা দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জনের ইন্টারভিউ নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট ও‌ সময় না পাওয়ায় তাদের পূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্টরি নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

তবে এ ঘটনার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের এক প্রভাবশালী শিক্ষকের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।

তারা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের পূর্বে তারা জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ছবি ও ভিডিও ফুটেজ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব পাবলিক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের পাঠানো ও সাংবাদিকদের থেকে সংগৃহীত ছবি ও ফুটেজ দিয়ে ডকুমেন্টরি নির্মাণ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি দাবি করেছেন তার ছবি বা ফুটেজ দেয়া হয়নি, তার ছবি বা ফুটেজ তাদের কাছে কেউ দেয়নি। এজন্য তারা ডকুমেন্টরিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি?

এ নিয়ে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আজ যে একটা বিশেষ পরিস্থিতি দেখেছি, এটাও জাহাঙ্গীরনগরের বৈশিষ্ট্য, এটাও ২৪ এর অর্জন। খারাপভাবে দেখার প্রয়োজন নেই। প্রত্যেকটি কাজের মধ্যে ভুল থাকতে পারে, এখানে শিক্ষার বিষয় রয়েছে। ঠিক একইসঙ্গে প্রতিবাদের যে ভাষা, সেখানেও শিক্ষিত হবার প্রয়োজন রয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সমালোচনা ও কুৎসার পার্থক্য শিখবে। একইসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশংসা ও পূজার পার্থক্য শিখবে ও বুঝবে।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশে নতুন প্রজাতির ব্যাঙ
  • ‘বিচার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে’
  • জুলাই ডকুমেন্টরিতে ‘ফুটেজ’ না থাকায় জাবি ছাত্রদল নেতার হট্টগোল
  • দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের থেকে তরুণদের দূরে থাকতে হবে: মজিবুর রহমান
  • শিশু নাঈমের পাশে ইবি ক্রিকেট ক্লাব
  • রংপুরে হিন্দুপাড়ায় হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল
  • ছয় দফা দাবিতে ‘আমরা ভোলাবাসী’র আন্দোলন ‘সরকারি আশ্বাসে’ স্থগিত