জাবি শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব দিলেন শিবির সভাপতি
Published: 23rd, January 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শাখা ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে ৫৪তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কুইজ প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে শিক্ষার্থীদের শিবির সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে সংগঠনটি ‘আস্ক শিবির, নো শিবির’ নামের প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করে। প্রধান অতিধি হিসেবে উপস্থিত থেকে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রিয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটরিয়ামের সেমিনার কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিবের সভাপতিত্বে এতে আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রিয় প্রকাশনা সম্পাদক মো.
জাবি শাখা শিবিরের সদস্য মাজহার ফাহিমের সঞ্চালনায় সাবেক সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১ ব্যাচের শিক্ষার্থী অ্যাড. শাকিল আহমেদ বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইটা লাইন একসঙ্গে দেখা এ মুহূর্তে আমাদের জন্য যেমন আনন্দের তেমনি বিশ্বাস না হওয়ার মত। লাইন দুটি হলো- বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।”
তিনি বলেন, “একটা সময় ছিল জাবিতে অতিথি পাখি মারলে ৫০০ টাকা জরিমানা দেওয়া লাগতো। কিন্তু শিবির মারলে পুরস্কৃত করা হত। এ ক্যাম্পাসে এমনও মানুষ তৈরি হয়েছে, যারা ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে উদযাপন করেছিল। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সারারাত ধরে নির্যাতন চালিয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। এখানে হলের ছাদ থেকে শিক্ষার্থী ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ছাত্র রাজনীতির নামে এখানে হত্যা, খুন, ধর্ষণ, হল দখল, সিট বাণিজ্য ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল।”
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম বলেন, “অনেকে আমাদের আন্দোলনের নায়ক বলেন, মাস্টামাইন্ড বলেন। আন্দোলনের প্রকৃত নায়ক শহীদরা। গণঅভ্যুত্থানে বিজয় এসেছে শহীদ ভাইদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে। শহীদরাই এ আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড।”
তিনি আরও বলেন, “ইসলামি ছাত্রশিবির ব্যক্তিগত স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে জাতীয় স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। এটি শুধু একটি ছাত্র সংগঠন না, এটি একটি স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ছাত্রশিবিরের কর্মী হতে চাইলে তাকে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমরনীতি, বিজ্ঞানসহ সব ক্ষেত্রে অগাধ জ্ঞান রাখতে হয়। জাতীয় স্বার্থে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার কারণে আমাদের অনেক ভাইকে জীবন দিতে হয়েছে। নৈতিকতার দিক থেকে শিবির অনন্য। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শিবির শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। একজন যুবককে নীতি নৈতিকতা ও পরিপূর্ণ খাঁটি মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে শিবির বদ্ধ পরিকর।”
শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা ১৯৪৭ সালে দীর্ঘ ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পাকিস্তান গঠিত হয়। পাকিস্তান সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে না পারায় ৫২ ও ৭১ এর মতো ঘটনা ঘটেছে। ১৯৭৩ এর ভোটচুরি, বাকশাল, ৭৪ এর দূর্ভীক্ষের ঘটনা আমরা দেখেছি। শেখ হাসিনাও সেই ধারাবাহিকতা বহাল রেখেছিলেন।”
তিনি বলেন, “ফেরাউন মারা যাওয়ার পর পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোন ফেরাউন আসেনি। কিন্তু ফেরাউনের কাজগুলো অসংখ্য ব্যক্তি লেবাস পরিবর্তন করে করে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের মূল মাস্টামাইন্ড হাসিনা হয়ত পালিয়ে গেছে। কিন্তু এ জমিন থেকে ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন হয়নি। যারা রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছে, তারা কোনোভাবে চায় না এ দেশে নতুন কোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম হোক।”
তিনি আরো বলেন, “বৃটিশদের দেওয়া শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল গোলাম তৈরির হাতিয়ার। কিন্তু আজও আমরা সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে যাচ্ছি। আজ পর্যন্ত আমরা যুগ, জাতির চাহিদা ও চিন্তার আলোকে কোনো শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে পারিনি। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যখন মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার প্রতিযোগিতা করছে, তখন আমরা হল দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছি। আমরা যখন একে অন্যের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করব, তখনই আমরা সৎ ও যোগ্য হয়ে উঠব।”
শিবির সভাপতি বলেন, “আমাদের যে জনসংখ্যা আছে, সেটাকে মানব সম্পদে রূপান্তর করতে পারলে বাংলাদেশ হবে আধুনিক বিশ্বের রোল মডেল। ছাত্রশিবির সেই কাজই করে যাচ্ছে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, “দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ছাত্রশিবিরের জাবি শাখার আজই প্রথম অনুষ্ঠান। জাবিতে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তারা বিভিন্ন ইতিবাচক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই, জাবিতে শিবির নিয়ে যে ধরনের কথাবার্তা ও সমালোচনা উত্থাপিত হয়েছে, সে বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবে। তাদের সব ইতিবাচক কাজের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। অতীতের মতো আবারও যেন এ ক্যাম্পাসে গণরুম গেস্টরুমের কালচার ফিরে না আসে, সেজন্য একত্রে কাজ করার আশা ব্যক্ত করছি।”
গনঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “অভ্যুত্থানের পরবর্তী মাত্র ৬ মাসে যে সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে, সেটি ইসলামি ছাত্রশিবির। ইসলামী ছাত্রশিবির দেখিয়ে দিয়েছে, কিভাবে পেশি শক্তির রাজনীতি না করে ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করা যায়, রাজনীতি করতে গণরুম থেকে জোর করে শিক্ষার্থী নিয়ে আসতে হয় না, পথে ঘাটে শোডাউন দেওয়া লাগে না। ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো জন্য বিষয়গুলো অনুকরণ করা উচিত।”
জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক ইয়াহিয়া জিসান বলেন, “আমরা যারা দীর্ঘদিন জাবিতে রাজনীতি করেছি, যারাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করেছি, তাদেরই শিবির নামে ট্যাগিং করা হতো। এখনো নতুন দল একই পদাঙ্ক অনুসরণ করছে। আমরা নতুন বাংলাদেশে ছাত্রলীগ মডেলের রাজনীতি আর চাই না। হল দখলের রাজনীতির পরিবর্তে শিবিরের মন দখলের রাজনীতিই পারে আমাদের ২৪ এর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ হ ঙ গ রনগর র র জন ত ক জ কর ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠনে কার্যকর পদক্ষেপসহ ৫ সুপারিশ
‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ দ্রুত জারি করে ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ ৫ দফা সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ তুলে ধরেন সংগঠনটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন।
আরো পড়ুন:
ফেব্রুয়ারিতেই মহোৎসবে জাতীয় নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা
বেড়ায় রবিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল, সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ঘোষণা
অ্যাসোসিয়েশনের সুপারিশগুলো হলো
১. নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করে ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা।
২. প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম অনুমোদন, নতুন পদসৃজন, আপগ্রেডেশন এবং প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সরবরাহ নিশ্চিতকরণ।
৩. জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০২৩ বাতিল করে জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর।
৪. আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর নির্বাচন ভবনে সব কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে ‘নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫’ আয়োজন।
৫. নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫ আয়োজনে প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন কমিটি গঠন।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশন আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ