যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ীতে আজ শুক্রবার শুরু হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম উৎসব মধুমেলা। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় সপ্তাহব্যাপী এ মেলার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। আজ বিকেলে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী মেলা উদ্বোধন করবেন। যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে থাকবেন দেশবরেণ্য লেখক, গবেষক ও কবি-সাহিত্যিকরা।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মোৎসব উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, মেলা উপলক্ষে সাগরদাঁড়িতে কবির জন্মভূমির স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদ, বিদায় ঘাট, জমিদার বাড়ির আম্রকানন, মধুপল্লিসহ মেলা প্রাঙ্গণ সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। মেলা প্রাঙ্গণে মধুমঞ্চের পাশাপাশি সার্কাসের প্যান্ডেল, নাগরদোলা, জাদুমঞ্চসহ আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ। কৃষি ও কুটির শিল্পপণ্য বিকিকিনির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রামীণ পণ্যের পসরা নিয়ে এসেছেন স্থানীয়দের পাশাপাশি দূরদূরান্তের ব্যবসায়ীরা। দর্শনার্থীরাও আসতে শুরু করেছেন।
মেলা উপলক্ষে এলাকাবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। যশোর শহরসহ কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মেলার ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে। সাগরদাঁড়ীর পোস্টমাস্টার মুফতি তাহেরুজ্জামান তাছু বলেন, মেলা উপলক্ষে সাগরদাঁড়ীসহ চারপাশের গ্রামগুলোর অনেকেই মেয়েজামাই, বন্ধু-বান্ধবসহ আত্মীয়দের দাওয়াত দিয়েছেন। তারা সব আসতে শুরু করেছেন। সব বাড়িতে উৎসবের আমেজ রয়েছে। এবারের মেলায় লাখো দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে বলে মনে হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপলক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
নীল-সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে নানা বয়সী মানুষ এসে জড়ো হতে থাকেন। যেন শহরের হৃদয়ে নেমে আসে গ্রামবাংলার ঘ্রাণ। মেঘলা আকাশের নিচে কণ্ঠে সুর, পায়ে তাল, কল্পনায় বর্ষার রূপই দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় গতকাল রোববার এভাবে উদযাপন হলো ‘বর্ষা উৎসব ১৪৩২’।
বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আষাঢ়ের প্রথম দিনে রাগ, রস ও রং মিলে তৈরি হলো এক বর্ষামুখর ক্যানভাস। এবারের আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন নবীন সংগীতশিল্পী সোহানী মজুমদার। সেতারের কোমল তারে বেজে ওঠে রাগ ‘আহীর ভৈরব’। রাগভিত্তিক এ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মিলে যায় প্রাচ্যের সংগীত ঐতিহ্য ও বর্ষার আধ্যাত্মিকতা। সেই মুহূর্তে বকুলতলায় যেন ভেসে বেড়ায় বৃষ্টির সুর আর আকাশের নরম আলো।
‘বর্ষাকথন’ পর্বে বর্ষার ভাবনা, পরিবেশ ও সময়ের প্রেক্ষাপটে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান।
ঘোষণা পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট এবং সভাপতিত্ব করেন লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সংস্কৃতিকর্মী নুসরাত ইয়াসমিন রুম্পা।
ঘোষণাপত্র পাঠে জানানো হয়, ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে আজ ঋতুচক্রে দেখা দিচ্ছে অসামঞ্জস্য। গ্রীষ্ম হয়ে উঠছে খরতর, বর্ষা রুষ্ট, বসন্ত ক্ষীয়মাণ। এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে মানুষের সীমাহীন ভোগবাদী আচরণ, প্রকৃতির ওপর অনবরত অনাচার। ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত, সমুদ্রজল স্ফীত, ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত– প্রকৃতি আজ সংকটে।
এ প্রসঙ্গে মানজার চৌধুরী সুইট সমকালকে বলেন, এ উৎসব শহুরে জীবনে আমরা প্রায় ১৮ বছর ধরে পালন করে আসছি। উৎসবের শিকড় নিহিত রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষামঙ্গল’-এ। আমরা তারই উত্তরসূরি হয়ে আষাঢ়ের প্রথম দিনটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিই। এতে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বরং তার সংকটও তুলে ধরা হয়। আমরা চাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক
গড়ুক, তার বিপন্নতাকে বুঝুক এবং তা রক্ষায় সক্রিয় হোক।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, এ ধরনের উৎসবই সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ। শিকড়ের দিকে ফিরে যাওয়ার মধ্যে নিহিত আমাদের সংস্কৃতি ও চেতনার পুনর্জাগরণ।
বর্ষা মানে নতুন জন্মের বারতা। সেই বারতা ছড়িয়ে দিতে উৎসবে প্রতীকীভাবে শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হয় বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা। এই চারাগুলো শুধু বৃক্ষ নয়, বরং হয়ে উঠেছে সবুজ ভবিষ্যতের আশ্বাস।
উৎসবে একক সংগীত পরিবেশন করেন ইয়াসমিন মুশতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ও নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা।
রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন অণিমা রায়, শামা রহমান, মকবুল হোসেন ও ফেরদৌসী কাকলি। লোকসংগীত পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রাবণী গুহ রায় ও এস এম মেজবাহ। আধুনিক গান গাইতে মঞ্চে ওঠেন রত্না সরকার।
দলীয় সংগীতে অংশ নেয় সীমান্ত খেলাঘর আসর (শিশু-কিশোর), সুর বিহার, বহ্নিশিখা, সুর নন্দন এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি ও আসান উল্লাহ তমাল। শিল্পবৃত্ত শিশু-কিশোর দল পরিবেশন করে আবৃত্তি ও নৃত্য কোলাজ।
নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয় ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বেমুকা ললিতকলা কেন্দ্র, সিনথিয়া একাডেমি অব আর্টস ও নৃত্যম।