দেশের পার্বত্য অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ মৌসুমি ফল উৎপাদন হলেও সংরক্ষণে নেই কোনো ব্যবস্থা। দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পাঠানো যায় না অন্য এলাকাতেও। এতে কৃষক যেমন পান না ন্যায্য দাম, আবার নষ্টও হয় অনেক ফল। তবে মৌসুমি ফল দিয়ে চিপস তৈরি শুরু করেছেন রাঙামাটির তিন তরুণ উদ্যোক্তা। তাদের তৈরি পাহাড়ি কাঁঠাল ও কলার চিপস ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে বাজারে। 

ওই তিন উদ্যোক্তা হলেন– সুবিমল চাকমা, প্রমথ চাকমা ও সৌদি আরবপ্রবাসী শান্তু চাকমা। তারা জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ থেকে ২০২২ সালে তারা প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ২০২৪ সালের মে মাসে রাঙামাটি শহরের আসাম বস্তি এলাকায় বাঁশের বেড়ার ছোট্ট একটি ঘরে কাঁঠাল ও কলার চিপস তৈরি শুরু করেন। পাহাড়ি আনারসহ অন্যান্য ফলের চিপস উৎপাদনের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। 

তারা আরও জানান, ইতোমধ্যে বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত চিপস দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে। কলা ও কাঁঠালের এসব চিপসের একটি প্যাকেটের দাম ধরা হয়েছে ৩০ টাকা। 
সরেজমিন দেখা যায়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছোট একটি কক্ষে ভ্যাকুয়াম ফাইন প্রযুক্তির মাধ্যমে দু’জন কারিগর ফ্রিজিং করা কাঁঠাল ও কলা থেকে চিপস তৈরি করছেন। পাশেই একজন তা প্যাকেটজাত করছেন। এক কারিগর জানান, মৌসুমের সময় কাঁঠাল সংগ্রহ করে তা প্রক্রিয়াজাত করে ডিপ ফ্রিজে রেখেছিলেন। সেগুলো দিয়েই এখন চিপস তৈরি করছেন। 
প্রধান কারিগর রিটন চাকমা জানান, কলা ও কাঁঠাল চিপসের আকারে কেটে ফ্রিজে রাখা হয়। এরপর তা একটি মেশিনের মাধ্যমে তেলে ভাজা হয়। ২৫ থেকে ৩০ প্যাকেট চিপস ভাজতে লাগে ২২ থেকে ২৪ মিনিট। পরে স্বাদের জন্য কিছু মসলা মিশিয়ে তারপর প্যাকেটজাত করা হয়। বর্তমানে দিনে দুই থেকে আড়াইশ প্যাকেট চিপস তৈরি করছেন। 

উদ্যোক্তা প্রমথ চাকমা জানান, চিপস বাজারজাত করতে দুটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছেন। ওই কোম্পানিগুলো  তাদের কাছ থেকে চিপসের প্যাকেট নিয়ে বিক্রি করছে। 
কারখানাটি দেখতে যাওয়া পরিতোষ তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কলা, আনারসসহ বিপুল পরিমাণ ফল উৎপাদন হয়। এগুলো যদি প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করা যায় তাহলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বেকারত্ব দূর করতেও সহায়তা করবে। আরেক দর্শনার্থী শিমুল চক্রবর্তী বলেন, কাঁঠাল ও কলার এসব চিপস অত্যন্ত সুস্বাদু। আবার প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত ফল থেকে তৈরি হচ্ছে ভেজালমুক্ত খাবার। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। 

প্রধান উদ্যোক্তা সুবিমল চাকমা বলেন, পাহাড়ে উৎপাদিত কলা ও কাঁঠালের দাম পাওয়া যায় না বললেই চলে। আবার সংরক্ষণের ব্যবস্থাও নেই। কৃষক যেন উৎপাদিত ফলের সঠিক দাম পান সে জন্যই এ উদ্যোগ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই চিপস বিদেশে রপ্তানিও সম্ভব। 

তিনি আরও বলেন, এখন পাইলট প্রকল্প হিসেবে চিপস তৈরি করা হচ্ছে। খুব দ্রুত উন্নত মেশিনের মাধ্যমে কলা ও কাঁঠাল থেকে চিপস তৈরি শুরু করবেন।   
রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহনাজ পারভীন বলেন, তিন তরুণ যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। কারণ পাহাড়ে ব্যাপকভাবে কাঁঠাল উৎপাদন হলেও খাওয়ার লোক পাওয়া যায় না। অপচয় না করে অতিরিক্ত কাঁঠাল আধাসিদ্ধ করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কলাও একইভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্ভাবিত মেশিনের মাধ্যমে তা তেলে ভেজে এবং আর্দ্রতা পরিমাপের পর প্যাকেটজাত করে বিক্রি হচ্ছে। 
যেসব যুবক পড়াশোনা শেষ করে বেকার অবস্থায় রয়েছেন, তারা এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঠ ল ও কল উৎপ দ ত জ ত কর করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

যে জীবন মানুষের উপকারে আসে না, সে জীবন সার্থক নয়: ববিতা

চিরসবুজ অভিনেত্রী ফরিদা আক্তার ববিতা। ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাগেরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। আজ ৭১ বছর পূর্ণ করলেন সত্তরের দশকের অন্যতম সেরা এই অভিনেত্রী। জন্মদিন উপলক্ষে গত বছর একটি সাক্ষাৎকার দেন ববিতা। এ আলাপচারিতায় জীবনবোধ নিয়ে কথা বলেন এই শিল্পী।

জীবন নিয়ে ববিতা বলেন, “যে জীবন মানুষের কোনো উপকারে আসে না, সে জীবন সার্থক নয়। মরে গেলে আমার ছেলে অনিক আমাকে অনেক মিস করবে। একমাত্র ছেলে তো, ওর কথা খুব ভাবি। ভক্তরা আমাকে কতটুকু মনে রাখবেন, জানি না।”

একটি ঘটনা উল্লেখ করে ববিতা বলেন, “এই জীবনে একটা জিনিস খুব ভালো লেগেছে। অনেক শিল্পীকে তা দেওয়া হয়নি, হোক তা ভারতে কিংবা বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে আমাকে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের মেয়র আজীবন সম্মাননা দিয়েছেন। সেদিন আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ সম্মান দিয়েছেন, ৬ আগস্টকে ‘ববিতা ডে’ ঘোষণা করেছেন। তার মানে আমি বেঁচে না থাকলেও দিনটা উদযাপিত হবে। এটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।”  

আরো পড়ুন:

বধূবেশে অভিষেক কন্যা

জসীম পুত্রের মৃত্যু: ভাই রাহুলের আবেগঘন পোস্ট

মৃত্যুর কথা স্মরণ করে ববিতা বলেন, “তবে কবরে একা থাকার কথা ভাবলে হঠাৎ কেমন যেন লাগে। আরেকটা বিষয়, আমি অনেক দিন বেঁচে থাকতে চাই না। অসুখ–বিসুখে কষ্ট পেয়ে, বিছানায় পড়ে বাঁচতে চাই না। আমি কারো বোঝা হয়ে বাঁচতে চাই না।” 

কারণ ব্যাখ্যা করে ববিতা বলেন, “চারপাশে অনেক আত্মীয়স্বজনকে দেখেছি, দিনের পর দিন বিছানায় অসুস্থ হয়ে কষ্ট পেয়েছেন। যারা একা থাকেন, তাদের জন্য এই কষ্ট যেন আরো বেশি। তাই সব সময় এটা ভাবি, কখনোই যেন অন্যের বোঝা না হই।” 

সিনেমায় অভিনয়ের ইচ্ছা ববিতার কখনো ছিল না। পরিচালক জহির রায়হানের ‘সংসার’ সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও প্রথমে রাজি হননি। পরে মা আর বোনের পীড়াপীড়িতে অভিনয় করেন। তখন তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন। মুক্তির পর সিনেমাটি সুপারফ্লপ হয়। 

পরিচালক জহির রায়হান আবারো ‘জ্বলতে সুরজ কে নিচে’ উর্দু সিনেমার নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করতে বললে প্রথমে রাজি হননি ববিতা। তখন বয়স মাত্র ১৪। কিন্তু সিনেমার বেশির ভাগ শুটিং হওয়ার পরও শিল্পীদের শিডিউল মেলাতে না পারায় সিনেমাটি আর শেষ করা হয় না। 

এরপর জহির রায়হান ববিতাকে নিয়ে বাংলা সিনেমা বানান। মুক্তির পর সিনেমাটি সুপারহিট হয়। অভিনয় করার ইচ্ছা না থাকলেও সিনেমা হিট হওয়ায় আবারো ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি। এরপর ‘স্বরলিপি’, ‘পিচঢালা পথ’, ‘টাকা আনা পাই’ সিনেমায় জুটি বাঁধেন রাজ্জাক-ববিতা। প্রতিটি সিনেমাই সুপারহিট।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিরাজ–কৃষ্ণাতে ম্যাচে ফিরল ভারত
  • ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আবারও হতাশায় ডুবিয়ে এগিয়ে গেল পাকিস্তান
  • জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ভিপিএনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল
  • রূপ নয়, সাহস দিয়ে জয় করা এক নায়িকা
  • টানা দুই জয়ের পর এবার হার বাংলাদেশের যুবাদের
  • ভারতের অর্থনীতি মৃত, ট্রাম্প ঠিকই বলেছেন: রাহুল
  • হেনরির ৬ উইকেটের পর দুই ওপেনারে নিউজিল্যান্ডের দিন
  • অসুখবিসুখে কষ্ট পেয়ে, বিছানায় পড়ে বাঁচতে চাই না: ববিতা
  • নিশ্ছিদ্র দাপটে উরুগুয়েকে উড়িয়ে ফাইনালে ও অলিম্পিকে ব্রাজিল
  • যে জীবন মানুষের উপকারে আসে না, সে জীবন সার্থক নয়: ববিতা