বাংলাদেশ সবশেষ ওয়ানডে খেলেছে গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে। যেখানে তিন ম‌্যাচের সিরিজে স্রেফ উড়িয়ে গিয়েছিল। নাজমুল হোসেন শান্তর পরিবর্তে সিরিজে নেতৃত্ব দেওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ পেয়েছিলেন হোয়াইটওয়াশের তিক্ত স্বাদ।

সামনে বাংলাদেশ অংশ নেবে চ‌্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। আইসিসি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিজেদের প্রস্তুতি সারছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে অংশ নিয়ে।

গত ১২ জানুয়ারি চ‌্যাম্পিয়নস ট্রফির জন‌্য স্কোয়াড ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ঘোষিত হলে নির্বাচকরা চমক দেখিয়েছেন কেবল পারভেজ হোসেন ইমনকে নিয়ে। সবশেষ স্কোয়াডে ছিলেন। ১ ম‌্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে ৩৯ রান করেছিলেন। কিন্তু বিপিএলে তেমন আলো ছড়াতে পারছেন না বাঁহাতি হার্ডহিটার ওপেনার। ৭ ম‌্যাচে মাত্র ১০৩ রান করেছেন ১৪.

৭১ গড়ে। আশার বিষয় তার স্ট্রাইক রেট, ১২৫.৬০।

পারভেজ দু‌্যতি ছড়াতে না পারলেও সব আলো নিজের ওপর কেড়ে নিয়েছেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। সঙ্গে লিটন দাসও। তবে লিটন দাস চ‌্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে নেই। তানজিদ ১০ ম‌্যাচে ৪২০ রান করে রয়েছেন সবার উপর। পারভেজ ইমন সুযোগ পেয়েছেন লিটনকে টপকে। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে লিটন রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে দেন। বাদ পড়ার দিনই সন্ধ‌্যায় মাঠে নেমে পান নিজের টি-টোয়েন্টি ক‌্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। এরপর তার ব‌্যাটে রানের স্রোত। ৯ ম‌্যাচে করেছেন ৩৪৮ রান।

টপ অর্ডারে তানজিদ যখন রানের ধারাবাহিকতায় তখন উল্টো পথে নাজমুল হোসেন শান্ত। অধিনায়ক শান্ত ফরচুন বরিশালের একাদশেই জায়গা হারিয়েছেন। শেষ দুই ম‌্যাচে ছিলেন না একাদশে। মাঝে দুই ম‌্যাচে তাকে বরিশাল খেলিয়েছিল উইকেট কিপার হিসেবে। জাতীয় দলের অধিনায়ক ৫ ম‌্যাচে রান করেছেন ৫৬। সর্বোচ্চ ৪১। বাকি চারটিতেই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে পারেননি। তার ফর্ম নিয়ে রীতিমত হচ্ছে প্রবল সমালোচনা।

টপ অর্ডারের বাকি দুই ব‌্যাটসম‌্যান সৌম‌্য সরকার ও তাওহীদ হৃদয়। সৌম‌্য এখনও ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সেরে উঠেনি। তাকে পেতে আরেকটু সময় লাগতে পারে। বলার মতো ফর্মে নেই তাওহীদ হৃদয়। টপ অর্ডারে নিয়মিত সুযোগ পেলেও তাওহীদ রান করেছেন ১৫৭, ৭ ইনিংসে। নেই একটিও ফিফটি। সর্বোচ্চ রান ৪৮।

মিডল অর্ডারে মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, জাকের ও মিরাজ দলের ভরসা। মুশফিক বাদে বাদে তিনজনই নিজেদের কাজটা করে যাচ্ছেন ঠিকঠাক ভাবে। মুশফিক ৫ ইনিংসে ৭৮ রান করেছেন। দুয়েকটি ইনিংসে শেষ সময়ে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু বাকিগুলোতে সুযোগ ছিল ইনিংস বড় করার। ইনজুরি থেকে ফিরে এসে ছন্দে ফিরতে সময় নিচ্ছেন এই অভিজ্ঞ ব‌্যাটসম‌্যান।  

মাহমুদউল্লাহ ৮ ম‌্যাচে ৫ ইনিংসে ব‌্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ১৩৪ রান কেরছেন। গড় ৩৩.৫০, স্ট্রাইক রেট ১৪২.৫৫। ওয়েস্ট ইন্ডিজে তিন ওয়ানডেতেই তার ব‌্যাটে এসেছিল ফিফটি পেরিয়ে যাওয়া ইনিংস। বিপিএলেও রানে থেকে তার প্রস্তুতি ভালো হচ্ছে। ভালো করছেন মিরাজও। তবে মিরাজ মিডল অর্ডারে না খেলে ব‌্যাটিং করছেন টপ অর্ডারে। ৯ ইনিংসে মিরাজের রান ২২৯। সবশেষ ম‌্যাচে ৭০ রান করে দলকে জিতিয়েছেন। ১৩২.৩৬ স্ট্রাইক রেটে ব‌্যাটিং করছেন খুলনার অধিনায়ক। জাকের আলী সিলেটের দাবি মেটাতে পারছেন। ৯ ইনিংসে তার ব‌্যাট থেকে এসেছে ১৮৩ রান। ১৪১.৮৬ স্ট্রাইক রেটে এই রান করেছেন। শেষ দিকে নেমে ঝুঁকি নিয়ে রান করার কাজটা সিদ্ধহস্তেই করছেন মারমুখী এই ব‌্যাটসম‌্যান।

বোলিং বিভাগে পেসাররা দারুণ করছেন। মোস্তাফিজুর রহমান, নাহিদ রানা ও তাসকিন আহমেদ ধারাবাহিক দু‌্যতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন। ২২ উইকেট পাওয়া নিশ্চিতভাবেই তাসকিন তাদের সেরা। বোলিংয়ে ডানহাতি পেসার শেষ কয়েক বছরে যে ধারাবাহিকতায় ছিলেন এবারও তা ধরে রেখেছেন।

মোস্তাফিজ আঁটসাঁট পারফরম‌্যান্সে নিজের কাজটা করে যাচ্ছেন। ১০ ম‌্যাচে ৯ উইকেট পেলেও নিজের প্রস্তুতির জায়গাটা ঠিকঠাক রেখেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের দ্রুততম পেসার নাহিদ রানা ৮ ম‌্যাচে ১০ উইকেট পেয়েছেন। নিয়মিত ম‌্যাচ খেলায় তার বোলিংয়ে মাঝে কিছুটা ধার কমেছিল। বিশ্রামের পর আবার পুরোনো ছন্দে ফিরে আসছেন তিনিও।

চতুর্থ পেসার হিসেবে স্কোয়াডে থাকা তানজিদ হাসান সাকিবও দু‌্যতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন। ঘাড়ের রগ ফুলে যাওয়ায় সিলেটের জার্সিতে শেষ দুই ম‌্যাচ খেলা হয়নি তার। ৬ ম‌্যাচে তার শিকার ১১ উইকেট। স্পিনে মিরাজ, নাসুম ও রিশাদ নিজেদের নামের সুবিচার করছেন। তাদের মধ‌্যে মিরাজ ও রিশাদই একটু এগিয়ে। নাসুমকে একটু পিছিয়ে রাখতে হচ্ছে।

মিরাজ পাওয়ার ৯ ম‌্যাচে ৯ উইকেট পেয়ে নিজের মান রেখেছেন। নাসুমের ৭ ম‌্যাচে শিকার ৬ উইকেট। শুরুতে সুযোগ না পাওয়ার রিশাদ এখন মেলে ধরছেন নিজেকে। ৫ ম‌্যাচে তার শিকার ৫ উইকেট।

সব মিলিয়ে ব‌্যাটিং-বোলিংয়ে প্রস্তুতি ভালোই হচ্ছে ক্রিকেটারদের। টুর্নামেন্টের শেষটা তারা কিভাবে করেন সেটাই দেখার।

নির্বাচকরা খুশি

জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটারদের পারফরম‌্যান্সে খুশি নির্বাচক হান্নান সরকার।  চ‌্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রস্তুতি নিয়েও সন্তুষ্ট তিনি।

‘‘ওয়ানডের প্রস্তুতি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে বিচার করা কঠিন। কিন্তু ব‌্যাটসম‌্যানরা যখন রান করেন। বোলাররা যখন উইকেট নেন তখন তাদের আত্মবিশ্বাস ভালো থাকে। তানজিদের কথাই ধরুন। যেভাবে রান করছেন, যেভাবে বোলারদের অ‌্যাটাক করছেন এটা তো তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে অবশ‌্যই। এটাই ক্রিকেট। আবার তাসকিন যেই পরিশ্রম করে উইকেট নিচ্ছে এটা তাকে অবশ‌্যই বড় কিছুর আশা দেখাবে।’’

‘‘আমি কোনো নির্দিষ্ট ক্রিকেটারকে নিয়ে আলাদা করে বলতে চাচ্ছি না। ওভারঅল সবার পারফরম‌্যান্সই সন্তোষজনক। ভালো করার তো শেষ নেই। তারা আসলে শেষটা কেমন করে, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে নিজেরা কতটা চাঙ্গা থাকে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তুতি ভালো হচ্ছে। আমার বিশ্বাস ভালো কিছুই হবে।’’

ঢাকা/ইয়াসিন

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর ছ ন উইক ট প য টসম করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ধোনি কেন আইপিএল ছাড়তে পারছেন না: পেছনে হাজার কোটি টাকার খেলা

বয়স ৪৪, শরীরও আর আগের মতো চলছে না। তবু মহেন্দ্র সিং ধোনি আইপিএল ছাড়েননি। সর্বশেষ মৌসুমে খেলেছেন, শোনা যাচ্ছে, পরের মৌসুমেও খেলবেন। অথচ তাঁর মাঠের পারফরম্যান্স বলছে, সময় ফুরিয়েছে। তবু তিনি খেলে যাচ্ছেন কেন? ক্রিকেট ছাড়তে পারছেন না তাই? নাকি খ্যাতির মোহ? সত্যিটা এসবের চেয়েও বড়—ধোনি এখন শুধুই একজন ক্রিকেটার নন, তিনি একটি বিশাল অর্থনৈতিক ইকোসিস্টেমের মূল স্তম্ভ, যাঁর বিদায় মানে অনেক কিছুর ধস।

চলুন দেখা যাক, কীভাবে ধোনির একটুখানি মাঠে থাকা বদলে দেয় বিশাল অঙ্কের হিসাব।২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ব্র্যান্ড ভ্যালু

২০২৫ আইপিএল ছিল চেন্নাই সুপার কিংসের (সিএসকে) জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিটির ইতিহাসেই সবচেয়ে বাজে মৌসুম। পয়েন্ট তালিকায় একেবারে তলানিতে থেকে মৌসুম শেষ করেছে তারা। কিন্তু অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার, এর কোনো প্রভাবই পড়েনি সিএসকের ব্র্যান্ড ভ্যালুতে; বরং সামান্য বেড়েছে!
হুলিহ্যান লোকির ‘আইপিএল ব্র্যান্ড ভ্যালুয়েশন স্টাডি ২০২৫’ প্রতিবেদন বলছে, ২০২৫ সালে সিএসকের ব্র্যান্ড ভ্যালু বেড়ে হয়েছে ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা ২০২৪ সালে ছিল ২৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। যদিও আইপিএলের সবচেয়ে দামি ফ্র্যাঞ্চাইজির র‍্যাঙ্কিংয়ে চেন্নাই ১ নম্বর থেকে তিনে নেমে গেছে, কিন্তু সেটা পুরোপুরি মাঠের পারফরম্যান্সের কারণে নয়।
তুলনা করে দেখা যাক—রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) প্রথমবার আইপিএল জেতায় তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু দাঁড়িয়েছে ২৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারে, উঠে এসেছে ১ নম্বরে। অথচ সিএসকে কিছু না করেই সেরা তিনে আছে শুধু একজনের জন্য—ঠিক ধরেছেন, এম এস ধোনি!

আরও পড়ুনফিক্সিং, বিদ্রোহ এবং ষড়যন্ত্রে ভরা ড্রেসিংরুম: পাকিস্তান ক্রিকেটের অস্থির অধ্যায়২৭ জুলাই ২০২৫দর্শকসংখ্যায় ‘ধোনি ইফেক্ট’

২০২৩ আইপিএলের একটি মুহূর্তই বলে দেয়, ধোনির উপস্থিতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে মাত্র ৩ বল খেলেছিলেন ধোনি, করেছিলেন ১২ রান। তাতেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ভিউয়ারশিপ পৌঁছায় ১ কোটি ৭০ লাখে, যা ছিল সে মৌসুমের সর্বোচ্চ। এমনকি টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচের ১ কোটি ৬০ লাখ ভিউয়ারকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল ধোনির সেই ৩ বল স্থায়ী ইনিংসটা!
টিএএম মিডিয়া রিসার্চ বলছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরও ধোনি দিনে গড়ে বিভিন্ন প্লাটফর্মে ১৪ ঘণ্টা স্ক্রিন টাইম ধরে রেখেছেন। ২০২৪ সালে তিনি ৪২টি ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন করেছেন, যা অমিতাভ বচ্চন (৪১) ও শাহরুখ খানের (৩৪) চেয়েও বেশি।

মহেন্দ্র সিং ধোনি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্বপ্নের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে জুয়েল, অর্থাভাবে অনিশ্চিত ভুটান যাত্রা
  • রোনালদোর অদম্য ক্ষুধা, দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে জেতালেন আল-নাসরকে
  • ৪৭ দিন ক্যাম্পে থেকে ১০–১২ দিন অনুশীলন, হতাশ ক্রিকেটাররা
  • অস্ট্রেলিয়ায় নারী এশিয়া কাপ: শক্তিশালী গ্রুপে বাংলাদেশ 
  • ধোনি কেন আইপিএল ছাড়তে পারছেন না: পেছনে হাজার কোটি টাকার খেলা