বস্ত্র ও পোশাক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা স্থগিতের আহ্বান
Published: 27th, January 2025 GMT
তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টগুলোতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পরিকল্পনা স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়েছে এ খাতের চার সংগঠন। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন করে গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের আগে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। গ্যাসের সরবরাহ সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা দরকার। একই সঙ্গে গ্যাসের মূল্য বিষয়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন করা উচিত।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে লেখা বস্ত্র ও পোশাক খাতের চার সংগঠনের যৌথ চিঠিতে এ আহ্বান জানানো হয়। সংগঠনগুলো হচ্ছে– তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ, এ খাতের নিট পণ্য রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ এবং টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিটিএলএমইএ)। বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিটিটিএলএমইএর সভাপতি হোসেন মেহমুদ, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ও বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন চিঠিতে সই করেন।
সোমবার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, শিল্প ও অর্থনীতির স্বার্থে সরকারের সঙ্গে আলোচনা এবং প্রয়োজনীয় আরও তথ্য সরবরাহ করতে সংগঠনগুলো প্রস্তুত রয়েছে। এতে বলা হয়, সরকার শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্য ফের বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এতে প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৭৫ টাকা করা হতে পারে। এ মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর করা হলে তা শিল্পায়ন ও অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর আগে ২০২৩ সালে শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্য ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। তখন শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তার সুফল পাওয়া যায়নি।
নতুন করে গ্যাসের দর বাড়ানো হলে শিল্পে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তারও একটি চিত্র তুলে ধরা হয় চিঠিতে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, বর্তমানে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন কারখানাগুলো গ্যাসের অপর্যাপ্ত চাপ ও অনিশ্চয়তায় আর্থিক লোকসানের শিকার। শিল্পঘন এলাকা গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভারে অবস্থিত কারখানাগুলোয় গ্যাস সংকটের কারণে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ হারে উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে উৎপাদন শিডিউল এবং সরবরাহ চেইন বিপর্যস্ত। এর প্রভাবে পোশাক খাতে সময়মতো কাঁচামাল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এ কারণে শিল্পে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি রপ্তানি বিঘ্নিত হচ্ছে। লিড টাইম ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিণতি হিসেবে বিদেশি ব্র্যান্ড ক্রেতাদের আস্থা কমছে। এ রকম পরিস্থিতিতে গ্যাসের মূল্য যদি প্রতি ঘনমিটারে ৪৫ টাকা বাড়ানো হয়, তা হলে পোশাক খাতে বছরে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। পাশাপাশি বস্ত্র শিল্পে ক্যাপটিভ পাওয়ারে ইউনিট-প্রতি ৪৫ টাকা মূল্য বাড়ানো হলে এ খাতে বছরে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। এই ব্যাপক হারে খরচ বাড়ানোর কারণে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা হারাবে বস্ত্র ও পোশাক শিল্প।
শিল্পের বর্তমান সংকট হিসেবে বিনিয়োগ স্থবিরতার কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে পোশাক শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং বস্ত্র খাতে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ১৮ দশমিক ১১ শতাংশ। গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হলে তা বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সংকটে পড়বে মিল ও কারখানাগুলো। দেশে যখন ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ খাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন, তখন এরকম একটি উদ্যোগ বিনিয়োগ সহায়ক নয়।
দেশের অর্থনীতিতে বস্ত্র ও পোশাক খাতের অবদানের কথা তুলে ধরে আরও বলা হয়, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, সামাজিক উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে খাত দুটি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক ও স্থানীয়ভাবে নানা চ্যালেঞ্জে খাত দুটি বর্তমানে সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে চার সংগঠনের সুপারিশগুলো বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হাসপাতালে ডায়রিয়ার প্রকোপ শয্যা ও স্যালাইন সংকট
আক্কেলপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর ভিড় বেড়েছে। শয্যাসংকটে রোগীদের মেঝে ও বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। এদিকে হাসপাতালে খাওয়ার স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। বাইরে থেকে বেশি দামে রোগীদের স্যালাইন কিনতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ৫০টি। গতকাল সোমবার পর্যন্ত এখানে ভর্তি ছিলেন ৭৫ জন রোগী। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ২৯ জন। শয্যা না পেয়ে তাদের অনেককেই বারান্দায়, মেঝেতে ঠাঁই নিতে হয়েছে। এ সময় কথা হয় রামশালা গ্রামের আসমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাতে ডায়রিয়া ও বমি শুরু হলে হাসপাতালে ভর্তি হই। রোগী বেশি থাকায় শয্যা পাইনি। বারান্দার মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছি। হাসপাতাল থেকে একটি স্যালাইন পেলেও ৪টি স্যালাইন বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। একই অভিযোগ করেন তেমারিয়া গ্রামের নুর বানু। তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১০ মাস বয়সী মেয়েকে রোববার হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। এদিকে রোগীর চাপ বাড়লেও এ হাসপাতালে রয়েছে চিকিৎসক সংকট। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ২৬টি পদের বিপরীতে মাত্র ৩ জন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। রয়েছে তীব্র স্যালাইন সংকট। রোগীদের বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে।
হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলেরা স্যালাইনের জন্য সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে চাহিদা দেওয়া হয়েছিল চার হাজার পিস। এর মধ্যে এক হাজার মি.লি. স্যালাইন ২ হাজার পিস ও ৫০০ মি.লি. স্যালাইন ২ হাজার পিস। পাওয়া গেছে মাত্র ৬০০ পিস। ইতোমধ্যে ৩০০ পিস রোগীদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে।
আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আসিফ আদনান জানান, হঠাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। অন্য সময়ের তুলনায় ৩ গুণ বেশি ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে আসছে। রোগীর চাপ বাড়লেও চিকিৎসক সংকট রয়েছে। স্যালাইনের সরবরাহও কম। রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। নানা সীমাবদ্ধতায় সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা আমাদের। তিনি ডায়রিয়া হলে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থেকে কিছু নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফি মাহমুদ বলেন, চিকিৎসক সংকটের বিষয়ে কয়েকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সরকারিভাবে নিয়োগ না হওয়ায় আমরাও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক পাচ্ছি না। স্যালাইনের সরবরাহ বাড়াতে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে।