তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টগুলোতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পরিকল্পনা স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়েছে এ খাতের চার সংগঠন। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন করে গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের আগে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। গ্যাসের সরবরাহ সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা দরকার। একই সঙ্গে গ্যাসের মূল্য বিষয়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন করা উচিত।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে লেখা বস্ত্র ও পোশাক খাতের চার সংগঠনের যৌথ চিঠিতে এ আহ্বান জানানো হয়। সংগঠনগুলো হচ্ছে– তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ, এ খাতের নিট পণ্য রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ এবং টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিটিএলএমইএ)। বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিটিটিএলএমইএর সভাপতি হোসেন মেহমুদ, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ও বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন চিঠিতে সই করেন। 

সোমবার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, শিল্প ও অর্থনীতির স্বার্থে সরকারের সঙ্গে আলোচনা এবং প্রয়োজনীয় আরও তথ্য সরবরাহ করতে সংগঠনগুলো প্রস্তুত রয়েছে। এতে বলা হয়, সরকার শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্য ফের বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এতে প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৭৫ টাকা করা হতে পারে। এ মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর করা হলে তা শিল্পায়ন ও অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর আগে ২০২৩ সালে শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্য ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। তখন শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তার সুফল পাওয়া যায়নি। 

নতুন করে গ্যাসের দর বাড়ানো হলে শিল্পে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তারও একটি চিত্র তুলে ধরা হয় চিঠিতে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, বর্তমানে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন কারখানাগুলো গ্যাসের অপর্যাপ্ত চাপ ও অনিশ্চয়তায় আর্থিক লোকসানের শিকার। শিল্পঘন এলাকা গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভারে অবস্থিত কারখানাগুলোয় গ্যাস সংকটের কারণে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ হারে উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে উৎপাদন শিডিউল এবং সরবরাহ চেইন বিপর্যস্ত। এর প্রভাবে পোশাক খাতে সময়মতো কাঁচামাল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এ কারণে শিল্পে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি রপ্তানি বিঘ্নিত হচ্ছে। লিড টাইম ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিণতি হিসেবে বিদেশি ব্র্যান্ড ক্রেতাদের আস্থা কমছে। এ রকম পরিস্থিতিতে গ্যাসের মূল্য যদি প্রতি ঘনমিটারে ৪৫ টাকা বাড়ানো হয়, তা হলে পোশাক খাতে বছরে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। পাশাপাশি বস্ত্র শিল্পে ক্যাপটিভ পাওয়ারে ইউনিট-প্রতি ৪৫ টাকা মূল্য বাড়ানো হলে এ খাতে বছরে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। এই ব্যাপক হারে খরচ বাড়ানোর কারণে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা হারাবে বস্ত্র ও পোশাক শিল্প। 

শিল্পের বর্তমান সংকট হিসেবে বিনিয়োগ স্থবিরতার কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে পোশাক শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং বস্ত্র খাতে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ১৮ দশমিক ১১ শতাংশ। গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হলে তা বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সংকটে পড়বে মিল ও কারখানাগুলো। দেশে যখন ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ খাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন, তখন এরকম একটি উদ্যোগ বিনিয়োগ সহায়ক নয়।

দেশের অর্থনীতিতে বস্ত্র ও পোশাক খাতের অবদানের কথা তুলে ধরে আরও বলা হয়, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, সামাজিক উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে খাত দুটি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক ও স্থানীয়ভাবে নানা চ্যালেঞ্জে খাত দুটি বর্তমানে সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে চার সংগঠনের সুপারিশগুলো বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র স গঠন সরবর হ

এছাড়াও পড়ুন:

ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য ভোটের সরঞ্জাম সরবরাহ শুরু হয়েছে। কয়েক মাস আগে দেওয়া কার্যাদেশের ভিত্তিতে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে এসব সামগ্রী এনে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

ইসির উপ-সচিব রাশেদুল ইসলাম জানান, লালগালা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লক, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, বড় ও ছোট হেসিয়ান ব্যাগসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রীর একটি অংশ এরইমধ্যে পৌঁছে গেছে। এর মধ্যে বড় ও ছোট হেসিয়ান ব্যাগের পুরো সরবরাহ শেষ হয়েছে। অন্য সামগ্রী ধাপে ধাপে সরবরাহ করা হবে।

ইসির হিসাব অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে প্রায় পৌনে ১৩ কোটি ভোটার থাকবেন। সে অনুযায়ী প্রায় ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্র ও দুই লাখের বেশি ভোটকক্ষের জন্য বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম প্রয়োজন হবে।

সরবরাহ হওয়া সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে—লালগালা: ২৩ হাজার কেজির মধ্যে এক চতুর্থাংশ সরবরাহ। ব্যালট বাক্সের লক: ৫০ লাখের বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ৫ লাখ।

আগস্টের শুরুতে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছিলেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব ধরনের নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনাকাটা শেষ হবে। আটটি আইটেমের মধ্যে একটি পুনরায় দরপত্র দিতে হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই সব সরঞ্জাম পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটের সামগ্রীর বেশির ভাগই কমিশন থেকে সরবরাহ করা হয়। তবে সুঁই-সুতা, দিয়াশলাই, আঠা, কলম, প্লাস্টিকের পাতসহ প্রতিটি কেন্দ্র ও বুথের জন্য প্রয়োজনীয় ২১ ধরনের কিছু জিনিস স্থানীয়ভাবে রিটার্নিং অফিসারদের সংগ্রহ করতে হয়।

তফসিল ঘোষণার পর আসনভিত্তিক ভোটার সংখ্যা, ভোটকেন্দ্র ও বুথ নির্ধারণ শেষে আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা অফিসে এসব সরঞ্জাম বিতরণ করা হবে। নিরাপত্তার মধ্যে থেকে ব্যালট পেপারসহ সব সরঞ্জাম ভোটের আগেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হবে।

ঢাকা/এএএম/ইভা  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে মুখ থুবড়ে পড়েছে ২৪ কোটি টাকার পানি প্রকল্প
  • শাকসু নির্বাচন সামনে রেখে একাধিক শর্তে ছাত্ররাজনীতি চালুর সুপারিশ
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
  • ভিন্ন পরিবেশে নির্বাচন, সবারই প্রথম অভিজ্ঞতা
  • রাকসু নির্বাচনে বামদের প্যানেলে নারী একজন, শক্তি ‘ধারাবাহিক লড়াই’
  • যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মাদক এমডিএমএ, গ্রেপ্তার ৫
  • চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
  • শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে কেমন ছাত্ররাজনীতি দেখতে চান
  • ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে