গত ৫ আগস্ট সরকারের পতন এবং শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ করে ভারত যাওয়ার পর অনেক অব্যক্ত আকাঙ্ক্ষা আমাদের সামনে উত্থাপিত হয়েছে। শিক্ষার্থী, শ্রমিক, কৃষক, রিকশাচালক, অটোচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে রাজপথে নেমে দাবি উত্থাপন করতে দেখা গেছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের ছাত্রলীগের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রও চোখে পড়েছে। ছাত্র সংগঠনটি এখন নিষিদ্ধ। তবে ২৬ জানুয়ারির (রোববার) দিবাগত রাতটি এ ক্ষেত্রে ভিন্নই বলতে হবে। কারণ তা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ‘এলিটিজমের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।


২৬ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে যান। সে সময়কার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, অধ্যাপক মামুন আহমেদ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উত্তেজিত আচরণ করছেন; যা কোনোভাবেই শিক্ষকসুলভ বলার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ বিগত সরকারের আমলে যে প্রশাসন ছিল, তার কথাই মনে করিয়ে দেয়। এই অপ্রীতিকর ও উস্কানিমূলক আচরণের বিপরীতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা মামুন আহমেদের দুঃখপ্রকাশসহ কয়েক দফা দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেন। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি তখন সেই সংঘর্ষ থামাতে দৌড়ে গিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। যদিও তাতে আন্দোলন থামেনি, সংঘর্ষও হয়েছে; কিন্তু হাসনাত যে এমন বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে সেখানে গিয়েছেন, চেষ্টা করেছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের, সে জন্য অবশ্যই তাঁর ধন্যবাদ প্রাপ্য। তিনি সে রাতের সংঘাত হয়তো থামাতে পারেননি; কিন্তু কিছুটা হলেও এর মাত্রা যে কমেছে তা বলাই বাহুল্য। সংঘর্ষে আহত হলেন সেই শিক্ষার্থীরা, যারা মাত্র কয়েক মাস আগে পতিত সরকারের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের গুন্ডাদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন; আবার এ সংঘর্ষ হয়েছে তাদের সঙ্গে, যারা সে সময় ছিলেন রাজপথের সহযোদ্ধা।


এর পরদিন সোমবার জানা গেল, ২০২৪-২৫ সেশন থেকে সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ভর্তি করা হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। কিন্তু সংকট কতটা কেটেছে? শিক্ষাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের মতে, এই সংকটের শুরু ওই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর ঢোকানোর পর থেকেই। তিনি এই সংকটের মূলে হাত দেওয়ার কথা বলেন। আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই একটা সংকট। এতগুলো কলেজ, যেখানে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী কোনোভাবেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনকার কাঠামো দিয়ে সামলানো সম্ভব নয়। এ জন্য একটি নয়, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান লাগবে। এ ক্ষেত্রে কলেজগুলোকে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাগ করতে হবে। এই সাতটি কলেজ নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে অথবা একটি বোর্ডের অধীনে আনা যেতে পারে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ভাঙা দরকার। মনে হচ্ছে এটি চলছে; কিন্তু আসলে এটি চলছে না। পড়াশোনার মান, পরীক্ষা, শিক্ষক– সব ক্ষেত্রেই অনিয়ম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ধরেই এর সমাধান চিন্তা করতে হবে। এ জন্য নড়াচড়া করতে হবে। চুপচাপ বসে থেকে আলস্য দেখালে হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে যথযথ সক্রিয় হওয়া দরকার। আগের সরকার বিষয়টি ফেলে রেখেছিল; এই অন্তর্বর্তী সরকারও এ বিষয়ে সমাধানের পথে সক্রিয় কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি।’


দুই.


এখন কেউ আর কলেজ থাকতে চায় না; সবাই বিশ্ববিদ্যালয় হতে চায়। এই সাত কলেজ যদি বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করে, তাহলে এমন আরও যেসব কলেজ আছে, সেগুলোও একই দাবি জানাতে পারে। সেই দাবি কি মেনে নেওয়া সম্ভব? এর পেছনে রয়েছে সার্টিফিকেটকেন্দ্রিক শিক্ষা পদ্ধতি। শিক্ষার মান নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা সেভাবে চোখে পড়ে না; যেমনটা আমাদের সমাজে দেখা যায় ‘কলেজ শিক্ষার্থী’র বদলে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী’ তকমার দাম বেশি; আবার প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা বা অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা অথবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যকার সার্টিফিকেটের তুলনা। অথচ কোনো শহরতলির কলেজে পড়া একজন শিক্ষার্থী সমাজে যে ভালো কিছু করতে পারেন, সেই বাস্তবতা আমরা তৈরি করতে পারিনি। এর পেছনে রয়েছে অর্থনীতির সঙ্গে কর্মসংস্থান এবং কর্মসংস্থানের সঙ্গে শিক্ষার আন্তঃসম্পর্ক তৈরি করতে না পারা।


বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার পর উচ্চতর শিক্ষা এবং গবেষণার জায়গা। এখানে সবাই আগ্রহী নাও হতে পারে বা সবার প্রয়োজন নাও হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করবে এবং সমাজের বিভিন্ন দিকের তাগিদ অনুযায়ী গবেষণা করবে। শুধু ক্লাসরুমে পড়ানো আর সার্টিফিকেট দেওয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় বলা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হবে বিশ্বজ্ঞান এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা। বাংলাদেশে ষাটের দশকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন, শিক্ষকরাও আন্দোলন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসনের দাবি ওঠে। পরে ১৯৭৩ সালের আইন অনুযায়ী চারটি বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসন লাভ করে।


এখন ৫০টির মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়; অথচ ওই চারটি বাদে আর কোনো স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় নেই। সেটাও গত কয়েক দশকে ভেঙে পড়েছে। বিগত সরকারের আমল থেকে তা পঙ্গু অবস্থায় রয়েছে। তখন থেকে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা হয়ে ওঠে সরকারের ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের একটি সম্প্রসারণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানচর্চা, জ্ঞান সৃষ্টির কি হবে না হবে, সেটা ঠিক করেছে সরকার ও তার আজ্ঞাবহ প্রশাসন। জ্ঞানচর্চার বেশি দরকার নেই, তার দরকার অনুগত একটি বুদ্ধিবৃত্তিক গোষ্ঠী; যারা সরকারকে সেবা করবে, সরকার যা বলবে সেটাকে সমর্থন করবে– এ ধরনের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন বদলে এখন যাদের নেওয়া হচ্ছে, তারাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন; কারণ এই শিক্ষকরাও দলবাজ। এর বাইরে লবিংমুক্ত নিয়োগ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই নিশ্চিত করা যায়নি। বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তন বা সংস্কার না হলে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক দু’দিকেই আধিপত্যের দলবাজি রাজনীতি চলতে থাকবে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের পরিবেশ বিপর্যস্ত হবে এবং শিক্ষক যারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান, তাদের পক্ষেও কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে।


তিন.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার মাধ্যমে সাত কলেজের সংকট শেষ হয়নি। কিন্তু কলেজগুলো নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল থেকে এখনও তেমন কোনো শক্তিশালী পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। এ ক্ষেত্রে প্রথমত, সাত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করা দরকার। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কিছু প্রস্তাবনা এখানে তুলে ধরা হলো–


১. কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করে সমাধান আসবে না। এ ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ভেঙে দিয়ে কয়েকটি কলেজ নিয়ে একেকটি আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা বোর্ড গঠন করা যেতে পারে।
২. ওই বিশ্ববিদ্যালয় বা বোর্ড কর্তৃক কলেজগুলোর শিক্ষার মানোন্নয়ন তদারক করা হবে।
৩. প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
৪. শিক্ষার্থীদের আসন সংখ্যা সীমিত করা যেতে পারে।
৫. ভর্তি পরীক্ষা এবং সেমিস্টার পরীক্ষায় মান নিয়ন্ত্রণ করা হবে কেন্দ্রীয়ভাবে।
৬. শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি নির্ধারণে সম্ভাব্য বিশ্ববিদ্যালয় বা বোর্ডের বিশেষায়িত কমিটি থাকবে।
৭. বিশ্ববিদ্যালয় বা বোর্ডের প্রশাসনিক ও পরিচালনা কমিটিতে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোর সরাসরি অংশগ্রহণ থাকবে। 
৮. সব কলেজের সুযোগ-সুবিধা একরকম নয়। এ জন্য কলেজগুলোতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। 
৯. গবেষণার জন্য যৌক্তিক বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
১০. পাঠদান বাদে সব কাজ অনলাইনে নিশ্চিত করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় বা বোর্ডে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের অনলাইন তথ্য হস্তান্তর করা হবে। এ জন্য ডেটাবেজ আপডেটসহ শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতায় বিশেষায়িত বিভাগ থাকতে হবে।


শাহেরীন আরাফাত: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
shaherin.arafat1@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ত কল জ স ত কল জ র শ ক ষ র থ ন শ চ ত কর ত সরক র র স ঘর ষ এ জন য দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিবাদী আচরণের’ অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বললেন আসিফ মাহমুদ

একজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কুমিল্লার মুরাদনগরে ‘ফ্যাসিবাদী আচরণের’ অভিযোগ করেছেন একদল ব্যক্তি। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মুরাদনগর উপজেলা সনাতন ধর্মাবলম্বী জনতা’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে মুরাদনগর থেকে আসা সনাতন ধর্মের কয়েকজন কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বাবা ও চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অভযোগ করা হয়। তা ছাড়া পুলিশকে ব্যবহার করে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ তুলে এই উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করেন সংবাদ সম্মেলনকারীরা। তবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এলাকার সাবেক একজন সংসদ সদস্যের অনুসারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ‘সর্ব ধর্ম মিশন’র প্রচারক পরিচয় দিয়ে দুলাল দেবনাথ বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ইউসুফ আবদুল্লাহর (আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন) নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করা আওয়ামী লীগের দোসরেরা আজ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার ও ভাইয়ের নেতৃত্বে মুরাদনগরে পুনর্বাসিত হওয়ার চেষ্টা করছে এবং কায়কোবাদ (বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ) সাহেবের সুনামকে নষ্ট করার জন্য তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে আমরা তার (উপদেষ্টার) পদত্যাগ চাই।’

অভিযোগ করে দুলাল দেবনাথ আরও বলেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ ভুঁইয়ার বাবা আজকে আমার বাড়িতে দুজন হিন্দু কমিউনিটির লোক পাঠিয়ে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমি যেন এই প্রোগ্রামে না আসতে পারি। এ ছাড়া আমরা মুরাদনগর থেকে ঢাকায় আসার পথে কুমিল্লার দাউদকান্দি টোল প্লাজায় গাড়ির কাগজপত্র চেকের (যাচাই বাছাই) নামে এক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুরাদনগর উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সহসভাপতি দীন দয়াল পাল। তিনি বলেন, মুরাদনগর উপজেলায় যানজট নিরসনে সাবেক পাঁচবারের এমপি মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেন। তবে পুলিশকে ব্যবহার করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা, চাচাতো ভাই ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের দিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের মারধর করায়। পরে এই স্বেচ্ছাসেবকদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে থানার সামনে বিক্ষোভ মিছিল হয় এবং সেদিন সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে রাতভর সালিসও চলে। অথচ রাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সালিসে বসে বিষয়টি সমাধান করতে আসা বিএনপি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দেয় এবং পবিত্র ঈদ ও রমজানজুড়ে পুরো মুরাদনগরে পুলিশ ও ডিবি আতঙ্ক বিরাজ করে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মুরাদ নগর ইউনিয়ন পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রঞ্জন রায়, কামাল্লা দেবপরি মন্দির কমপ্লেক্সের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব কুমার সাহা, নিবাস চন্দ্র ঘোষ, দয়ানন্দ ঠাকুর।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন এর আগেও একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছিল। আমার কাছে যে তথ্য রয়েছে, কয়েকজন সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাকে সামনে রেখে এটি করা হচ্ছে, যারা সাবেক এমপি কায়কোবাদের সঙ্গে রাজনীতি করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেককে এসি বাসে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেককে নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা অর্থ দেওয়া হয়েছে।’

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কায়কোবাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, ‘বরং কায়কোবাদ আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক এমপি জাহাঙ্গীরের সঙ্গে থেকে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, বালু উত্তোলন, মাটি উত্তোলনের অবৈধ কাজগুলোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করছেন এবং সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করছেন।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘একটা ভিডিওতে দেখেছি, যারা এক সময় কায়কোবাদের ফাঁসি চেয়ে মিছিল করেছিল, তারা এখন কায়কোবাদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করেন। যদি আপনি মুরাদনগরের সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন কী অবস্থা এলাকার? তাহলে তারা চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের যে অত্যাচার, সে কথা আপনাদের বলবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ
  • অফিসে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে জুতাপেটা করার অভিযোগ
  • মাওলানা রঈস উদ্দিন হত্যার বিচার দাবি ১০৪ নাগরিকের
  • গোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
  • শারীরিক শাস্তি শিশুর বিকাশে বড় বাধা, বিলোপ জরুরি
  • সন্তানের বন্ধু হতে চাইলে
  • উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিবাদী আচরণের’ অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বললেন আসিফ মাহমুদ
  • সবুজ এলাকায় পুলিশের প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার কম হয়
  • গোবিপ্রবিতে কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলাবিষয়ক কর্মশালা শুরু
  • মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা সম্পৃক্ত করা দরকার: শিক্ষা উপদেষ্টা