ঢাবিতে কমল মেডি এইডের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প
Published: 29th, January 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের ফ্রি চিকিৎসা সেবা দিতে দিনব্যাপী মেডিকেল ক্যাম্প করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শাখা কমল মেডি এইড।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান এ মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন। ঢাবি শাখা কমল মেডি এইড এর ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পটি চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, “এমন স্বোচ্ছাসেবী কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সোহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। আমি বিশ্বাস করি অনেক শিক্ষার্থী এই মেডিকেল ক্যাম্প এর মাধ্যমে উপকৃত হবে। এমন কার্যক্রমকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় সাধুবাদ জানাবে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম ভূইঁয়া ইমন প্রমুখ।
সরেজমিনে মেডিকেল ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, ১৩টি বুথের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে মেডিকেল সেবা দেওয়া হচ্ছে। মেডিসিন, নাক-কান-গলা, গাইনি, চর্ম, চক্ষু ও অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তররা দিনব্যাপী শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা দেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও সরবরাহ করা হয়েছে।
সেবা নিতে আসা শিক্ষার্থী মুনিরা আক্তার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মেডিকেল সেন্টার থাকলেও চিকিৎসা সেবা খুবই অপ্রতুল। এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহজেই বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারছেন। আজকের আয়োজন অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের উচিত এমন কাজে উৎসাহ দেওয়া।”
কমল মেডি এইডের প্রতিষ্ঠাতা তানবীর বারী হামিম বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে কোন ফার্মেসি নেই। অনেক দূরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ঔষধ কিনতে হয়। শিক্ষার্থীরা যেন খুব সহজেই রুমে বসে এ সেবা পেতে পারেন, সে লক্ষ্যেই আমি কমল মেডি এইড চালু করি। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “আজ কমল মেডি এইড, ঢাবির মেডিকেল সেবা ও স্বাস্থ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ক্যাম্প থেকে সকাল থেকে ১ হাজার ৯৮৭ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ভবিষ্যতেও এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা’ স্লোগান নিয়ে কমল মেডি এইড, ঢাবির যাত্রা শুরু হয়। এছাড়াও স্বোচ্ছাসেবী এ সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডেলিভারি চার্জ ছাড়াই প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহের কাজ করে থাকে।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’