বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট গুলিতে নিহত মামুন খন্দকারের (৪৩) মরদেহ আদালতের নির্দেশে ৫ মাস ২৬ দিন পর কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহতের গ্রামের বাড়ি উপজেলার বেতমোর রাজপাড়া গ্রামের খন্দকার বাড়ি পারিবারিক কবরস্থান থেকে এই মরদেহ উত্তোলন করা হয়।

এ সময় মঠবাড়িয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রাইসুল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার চঞ্চল গোলদার, থানা পুলিশ, জেলা হাসপাতালের ডোম চয়ন ও মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী সাথী খন্দকার উপস্থিত ছিলেন।

নিহত মামুন খন্দকার মঠবাড়িয়া উপজেলার বেতমোর রাজপাড়া গ্রামের মৃত মজিবর খন্দকারের ছেলে। তার দুই ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় গার্মেন্টসের ব্যবসা করতেন।

নিহতের স্ত্রী সাথী জানান, তার স্বামী গত ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়া বাইপাইল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের লোকজনের হাতে গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট সেখানে তার মৃত্যু হয়। পরে ৮ আগস্ট পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় বেতমোর রাজপাড়া গ্রামের খন্দকার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় তিনি গত ২২ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

নিহত মামুন খন্দকারের কলেজ পড়ুয়া ছেলে খন্দকার মো.

হেলাল (১৮) জানান, আন্দোলনে তার বাবা নিহত হবার পর তার বাবার মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়। মা আদালতে তার বাবার লাশের ময়নাতদন্তের আবেদন করলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত, ঢাকা এর ১৭৪৮ নং স্মারকের নির্দেশে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান, তার বাবা বাইপাইল তাওহিদা ইন্টারন্যাশনাল বিডি নামে একটি ব্যবসা পরিচালনা করতেন।

মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আদালতের নির্দেশ পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাইসুল ইসলামের নেতৃত্বে লাশ উত্তোলন করে পিরোজপুর জেলা মর্গে পাঠানো হয়।

মঠবাড়িয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রাইসুল ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে নিহত মামুন খন্দকারের নিহতের ঘটনায় করা মামলায় মরদেহ আদালতের নির্দেশে কবর থেকে তোলা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কবর কবর থ ক উপজ ল র আগস ট মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায় 

উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা। 

৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা! 

অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’ 

রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল। 

রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান। 

উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’ 

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন। 

রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব। 

ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাশাপাশি খোঁড়া হচ্ছে মা-ছেলের কবর, সেই দৃশ্য কাঁদাচ্ছে এলাকার মানুষকে
  • দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায় 
  • সরকারি হিসাবের চেয়ে করোনায় মৃত্যু ছিল বেশি
  • দেশে ফিরেছে ব্যবসায়ী রাকিব ও পাইলট সাইফুজ্জামানের মরদেহ