জুমার নামাজের পর তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
Published: 31st, January 2025 GMT
রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো অনশন কর্মসূচি পালন অব্যাহত রেখে সড়কে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিল করেন কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় তারা কলেজের প্রধান ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে মহাখালী রেলগেট হয়ে কলেজের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন।
এ সময় একজন শিক্ষার্থী বলেন, “রাষ্ট্রের আর কোনো টালবাহানা আমরা মানব না। রাজপথে নেমেছি, যতক্ষণ না পর্যন্ত রাষ্ট্র আমাদের দাবি মেনে নিবে, ততক্ষণ আমরা আমাদের রাজপথের লড়াই ছাড়ব না।”
আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রুপান্তরের ৭ দফা দাবিকে সরকারের ঘোষণা দিতে হবে। এটিই আমাদের এখন একমাত্র দাবি।”
৭ দফা দাবি:
১।তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা।
২। তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা।
৩। শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা নতুবা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন।
৪। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম দুটি বিষয় ল' এবং জার্নালিজম সাবজেক্ট সংযোজন।
৫। একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষকদের নিয়োগ প্রদান।
৬। শিক্ষার গুনগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিতকরণ।
৭। আন্তর্জাতিকমানের গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তিনি তাদের অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান ও তাদের দাবি রাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দেন। তবে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
ঢাকা/হাফছা/হাসান/সাইফ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ
পাঁচ বছরে দেশের ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়াবে ৫৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি বেড়ে হবে ৫৬ দশমিক ৬ ০ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বৃদ্ধি পাবে ৫০ শতাংশ। অর্থ বিভাগের করা সাম্প্রতিক এক প্রক্ষেপণে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট ঋণের স্থিতি ছিল আঠারো লাখ ৮১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। সেখানে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ঋণের এই স্থিতি বেড়ে দাঁড়াবে ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই হিসেবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ঋণের স্থিতি টাকার অঙ্কে বৃদ্ধি পাবে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
গত ২ জুন অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি ২০২৫-২০২৬ হতে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ২০১৪-২০১৫ হতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে অভ্যন্তরীণ ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ধারবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসময় ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ১৫.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২১.৫২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের ১১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ১০ শতাংশে পৌঁছেছে।
পূর্বাভাষ অনুযায়ী, ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এটি জিডিপি’র ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ হবে। যদিও বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপি’র অনুপাত বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত নিরাপদ সীমার মধ্যে রয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক শৃঙ্খলা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এক্ষেত্রে নিবিড় মনিটরিং ও সময়োপযোগী সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক।
একটি স্থিতিশীল এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি নিশ্চিত করার পথে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম রাজস্ব সংগ্রহ এবং ক্রমবর্ধমান ঋণ পরিশোধ ব্যয়-বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
অর্থ বিভাগ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি সহায়ক খাতে ঋণ গ্রহণকে অগ্রাধিকার দিলেও এটি মুদ্রার বিনিময় হার ঝুঁকি, ব্যয়বহুল অভ্যন্তরীণ ঋণ এবং অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট রাজস্ব আহরণ আশানুরূপ না হওয়ায় সরকারের ওপর অর্থায়নের চাপ থাকছে। অন্যদিকে, উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য দেশজুড়ে ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো তৈরির প্রয়োজন।
এ প্রেক্ষাপটে, সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে একটি মধ্যমেয়াদি ঘাটতি অর্থায়ন কৌশল অনুসরণ করছে। ঘাটতি অর্থায়নের অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ট্রেজারি বন্ড ও বিল এবং জাতীয় সঞ্চয় স্কিম প্রধান ভূমিকা পালন করছে। বৈদেশিক উৎসসমূহের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উৎস থেকে নমনীয় ও অ-নমনীয় ঋণ উল্লেখযোগ্য।
ঋণ প্রোফাইলের এক চিত্র উপস্থাপন করে নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের শেষে মোট সরকারি ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপি’র ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, যার মধ্যে ২১.৫২ শতাংশ এসেছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং ১৬ .১০ শতাংশ বৈদেশিক উৎস থেকে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ঋণের সিংহভাগ (৫৮%) এসেছে ব্যাংকিং খাত থেকে, এরপর রয়েছে জাতীয় সঞ্চয় স্কিম যার অবদান ৩৪ শতাংশ।
অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ পাওয়া গেছে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাজেন্সি (আইডিএ) থেকে, এরপর আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপান।
ঋণ স্থিতির মধ্যমেয়াদি প্রক্ষেপণ বিষয়ে বলা হয়েছে, মধ্যমেয়াদে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ জিডিপি’র অনুপাতে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরের শেষে মোট ঋণ জিডিপি’র ৩৭ দশমিক ৭২ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ হতে পারে জিডিপি’র ২১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণ হতে পারে ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
বিগত বছরগুলোর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের বন্টন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ফলে বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে অনুদান এবং নমনীয় ঋণ (কম সুদের হার, দীর্ঘ পরিশোধকাল) পাওয়ার সুবিধাদি ক্রমান্নয়ে হ্রাস পাচ্ছে।
সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে তুলনামূলক উচ্চ সুদের হার ও স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক ঋণের ওপর আরও বেশি নির্ভর করতে হতে পারে। যার ফলে ঋণ পরিশোধ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এসময় বাংলাদেশের ঋণ পরিস্থিতির মধ্যমেয়াদী চিত্র অনেকটাই নির্ভর করবে সরকারের গৃহীত কার্যকর কৌশলগুলোর বাস্তবায়নের ওপর।
যদি রাজস্ব আহরণ, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ এবং ঋণ ব্যবস্থপনায় কার্যকর সংস্কার না আনা যায়, তাহলে ঋণের স্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। তবে, মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশ এই উত্তরণের পথ দক্ষতার সাথে অতিক্রম করতে পারবে এবং উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থানের সুফল গ্রহণের পাশাপাশি একটি টেকসই ঋণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে সক্ষম হবে।
ঢাকা/এস