রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার পাহাড়ি তুলা গবেষণা উপকেন্দ্র কার্যালয়ের জমি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অধীন এ কার্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সময় কিছু লোক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি দিয়েছেন। এ ঘটনায় তুলা উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছে।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪-৮৫ সালে জেলা প্রশাসন কাউখালী উপজেলার কচুখালী মৌজায় তুলা উন্নয়ন বোর্ডকে ৮ একর জমির বন্দোবস্ত দেয়। সেখানে পাহাড়ি তুলা গবেষণার জন্য তুলা উন্নয়ন বোর্ডের উপকেন্দ্র ভবন নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে জেলা প্রশাসনকে খাজনা প্রদানের মাধ্যেম দখলে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরপরও কিছু মানুষ জমির মালিকানা দাবি করে জোরপূর্বক খুঁটি গেড়ে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন।
সম্প্রতি রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের উদ্যোগে টেন্ডারের মাধ্যমে ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে কচুখালী মৌজায় তুলা উন্নয়ন বোর্ডের ওই ৮ একর জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু হয়। শ্রমিকরা কাজ করতে গেলে কিছু লোক বাধা দেন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেরে ফেলার হুমকি দেন। এ ঘটনায় গত ১৩ জানুয়ারি তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কাউখালী উপজেলা কর্মকর্তা মো.
সূত্র আরও জানায়, স্থানীয় ও চট্টগ্রাম রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কয়েকজন ভূমিদস্যু জানতে পারে কাউখালী তুলা উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ৯০ শতক রেকর্ডীয় জমি রয়েছে। ওই জমি পাহাড়িদের নামে রয়েছে। পরে ভূমি কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র বের করা হয়। রাঙ্গুনিয়া ও কাউখালী উপজেলার চার ব্যক্তি প্রকৃত জমির মালিকের সব তথ্য ও কাগজপত্র সংগ্রহ করে। একপর্যায়ে ২০২২ সালে প্রকৃত জমি মালিকের ওয়ারিশ ৬ জনের কাছ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নেন। পরে ওই জমি তাদের স্ত্রীদের নামে বন্দোবস্ত করে নেন তারা।
তবে জমির প্রকৃত মালিক মৃত তেজেন্দ্র লাল চাকমার ছেলে আলোক কুসুম চাকমা জানান, তার কাছ থেকে কেউ জমির বন্দোবস্তের জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নিতে স্বাক্ষর নেননি। অপর মালিক মৃত রাজেন্দ্র লাল চাকমা ছেলে তুনিয়া চাকমা জানান, তার কাছ থেকে ৩-৪ বছর আগে একটি স্বাক্ষর নেওয়া হলেও কী জন্য নেওয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না। এ ছাড়া মৃত রাজেন্দ্র লাল চাকমার ছেলে মিঠু চাকমার নাম পাওয়ার অব অ্যাটর্নি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, তার বাবা জায়গাটি বিক্রি করেছেন শুনেছেন, কিন্তু দলিলপত্রে বিক্রি করে দিয়েছেন কিনা জানি না। তবে একসময় ওই জায়গায় আমাদের ঘরবাড়ি থাকলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বাবা অন্য স্থানে চলে যান।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জুলফিকার হোসাইন ও মোহাম্মদ জানে আলম বলেন, ‘আমাদের স্ত্রীদের নামে রেকর্ডীয় ৯০ শতক জায়গা দখল করে নিয়েছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। প্রকৃতপক্ষে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের জায়গাটি রয়েছে পাহাড়ের টিলার ওপর। সীমানা প্রাচীর নির্মাণে রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ বাধা দিয়েছে। আমরা কাউকে হুমকি বা বাধা দিইনি। উল্টো আমাদের নানাভাবে হয়রানি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যে জায়গাটি তুলা উন্নয়ন বোর্ড দাবি করছে সেটি রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পড়েছে, কাউখালীতে নয়।’
তারা আরও বলেন, ‘আমরা ৩ থেকে ৪ বছর আগে ৬ জন পাহাড়ির কাছ থেকে ৯০ শত জমি কিনেছি। পরবর্তী সময়ে আমাদের স্ত্রীদের নামে বন্দোবস্ত করে নেওয়া হয়েছে। রাঙামাটি ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন ৯০ শতক জমি আমাদের বলে চিহ্নিত করে দিয়েছে। এখন আমরা ক্রয়সূত্রে ওই জায়গার মালিক।’
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের রাঙামাটি কার্যালয়ের প্রধান মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘ভূমিদস্যু জুলফিকার হোসাইন, জানে আলমসহ বেশ কিছু ব্যক্তি কার্যালয়ের সীমানা প্রাচীর দেওয়া জমি নিজেদের বলে দাবি করছেন। তুলা উন্নয়ন বোর্ড দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এসব জমির ভোগদখল ও খাজনা দিয়ে আসছে। সম্প্রতি কার্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে গেলে কিছু লোক বাধা দেওয়ায় কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আমল মাসঊদের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিনোদপুরের মণ্ডলের মোড় এলাকায় তাঁর বাড়ির দরজার সামনে এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ আহত হয়নি।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে। তবে কে বা কারা এটি করেছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও কেউ করেনি। তাঁরা দুর্বৃত্তদের শনাক্তের চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আমল মাসঊদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে ঘটনার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী অপশক্তির জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। কোনো রক্তচক্ষুর ভয়ংকর হুমকি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তবে তারা কখনো বাড়ি পর্যন্ত আসার ঔদ্ধত্য দেখাতে পারেনি। কিন্তু আজ আমার বাড়ির দরজায় গভীর রাতের অন্ধকারে হামলার সাহস দেখিয়েছে কাপুরুষের দল! এরা কারা? এদের শিকড়সহ উৎপাটনের দাবি জানাই।’
এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভেবেছিলাম বাড়ির গেটে কিংবা গেটের বাইরে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম একেবারে বাড়িতে হামলা হয়েছে। গতকালই ওনার অসুস্থ বাবা হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় এসেছেন। জানি না শেষ কবে একজন শিক্ষকের বাড়িতে রাতের আঁধারে এভাবে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আমরা শঙ্কিত, স্তম্ভিত।’
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে এ সমাবেশের আয়োজন চলছে।