সমতার লড়াইয়ের চেতনা নিয়ে শুরু হলো উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন
Published: 6th, February 2025 GMT
শুরু হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন। এবারের জাতীয় সম্মেলনের স্লোগান, ‘আমরা তো লড়ছি সমতার মন্ত্রে, থামব না কখনোই শত ষড়যন্ত্রে।’ বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তিন দিনের সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেনের ঘনিষ্ঠ সহচর প্রবীণ কৃষক নেতা লীনা চক্রবর্তী। শুরুতে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন লীনা চক্রবর্তী। সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শুরু হয় সারা দেশ থেকে আসা উদীচীর হাজারো শিল্পী-কর্মীর শোভাযাত্রা। তাঁরা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ফিরে আসেন।
এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা পর্ব। স্বাগত বক্তব্যে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটেছে, ছাত্র–জনতাই বারবার বাংলায় মুক্তি এনেছে। কিন্তু প্রতিবারই অল্পতে এ দেশের মানুষের স্বপ্ন চুরি হয়ে যায়। এবারও তাই ঘটছে। যে আন্দোলনে সবাই একত্র হয়েছিল, সেই এক হওয়ার জায়গায় আঘাত হানা হয়েছে। দেশের ঐতিহ্য, ভাস্কর্য, সংগীতে আঘাত হানা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে যত বাধাই আসুক, উদীচীর কণ্ঠস্বর শোনা যাবে বলে উল্লেখ করেন অমিত রঞ্জন দে।
লীনা চক্রবর্তী বলেন, ‘সবকিছুর দাম মেটাতে হয়। সত্যেন সেন উদীচী করতে গিয়ে সে দাম মিটিয়েছিলেন শত যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়ে। অথচ কোনো দিন কাউকে অভিযোগ করেননি। তিনি সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিয়েছিলেন।’ এ সময় একবার জেলখানা থেকে বের হওয়ার পরপর সত্যেন সেনের সংবর্ধনা ও প্রেসক্লাবে সন্জীদা খাতুন আর ওয়াহিদুল হকের একসঙ্গে গান গাওয়ার স্মৃতিচারণা করেন লীনা চক্রবর্তী।
রাফিউর রাব্বি বলেন, ‘এত রক্তপাতের পরও আমরা জানি না কীভাবে সুফল আসবে।’ এ দেশের সাধারণ মানুষকে নিয়ে সব সময়ই শুধু রাজনীতি হয়ে আসছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। রফিউর রাব্বি তাঁর বক্তব্যে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য চরিত্রগতভাবে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যে মিল কোথায়, সেসব উদাহরণ দেন। আলোচনা পর্বের সমাপনী বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। তিনি বলেন, এখন সময়টা অন্য রকম। প্রতিবার উদীচীর সম্মেলনে এখানে অনেক রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠান হয়। এবার সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এ দেশের ইতিহাস শুধু গত ১৫ বছরের নয়। ১৯৭৫ সালের পর ২১ বছরে দুবার সামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের ইতিহাস ৫৪ বছরের। এই আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম।
এরপর গীতি-নাট্যালেখ্য ‘প্রতারিত চিরকাল’ দিয়ে শুরু হয় প্রথম দিনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে শুরু হবে সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন। সন্ধ্যায় হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শনিবার সম্মেলনের সমাপনী দিনের কার্যক্রম। সেদিন পরবর্তী দুই বছরের জন্য নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন।
১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর প্রতিষ্ঠার পর থেকে সৃজনশীল মাধ্যমে সমাজের নানা অসংগতি, শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার-নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে চলেছে উদীচী। প্রতি দুই বছর পরপর জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করে উদীচী।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কমিটি নেই, সবাই নেতা
কয়রা উপজেলা বিএনপির কমিটি নেই একযুগ। দীর্ঘদিন ধরে চলেছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। সেটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে ৪ মাস আগে। কমিটি না থাকায় দলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে। ভেঙে পড়ছে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাও। কেউ কারও কথা শুনছেন না। অবস্থা এমন, যেন সবাই নেতা– অভিযোগ স্থানীয় নেতাকর্মীর।
কমিটি না থাকলেও উপজেলার একশ মিটারের মধ্যে পৃথক দুটি কার্যালয় রয়েছে। একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে বহিষ্কৃত) নুরুল আমিন বাবুল। আরেকটি কার্যালয় চলছে খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য এম এ হাসানের নেতৃত্বে। নেতৃত্বের এ দ্বন্দ্বের কারণে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি নেই। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছাড়া অন্যান্য কর্মসূচিতে কার্যক্রমও সীমিত। এ অবস্থায় দ্রুত কমিটি দেওয়ার দাবি দলীয় নেতাকর্মীর।
পৃথক কার্যালয়ের বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য এম এ হাসান বলেন, উপজেলায় একটি দলীয় কার্যালয় ছিল। পরে স্থানীয় একজন নেতা তাঁর অনুসারীদের নিয়ে আরেকটি কার্যালয় খুলেছেন; যা সংগঠনবিরোধী কাজ। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ওই নেতাকে বহিষ্কার করা হলেও এখন পর্যন্ত তিনি কার্যালয়টি বন্ধ করেননি।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মনজুর আলম বলেন, ৫ আগস্টের পর দুই নেতার বিরোধ স্পষ্ট হয়েছে। আগে দলে বিভক্তি থাকলেও আলাদা কার্যালয় ছিল না। এখন দুটি কার্যালয় থাকায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন কর্মী-সমর্থকরা।
২০১৩ সাল পর্যন্ত উপজেলায় বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছিল। এরপর দুই দফায় আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৪ মার্চ মোমরেজুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও নুরুল আমিন বাবুলকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা বিএনপি। এরপর থেকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে নুরুল আমিনকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এ অবস্থায় চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু।
এদিকে কমিটি না থাকায় বেশির ভাগ নেতা স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। কয়েকজনের বিরুদ্ধে হাট, ঘাট, খাল দখলের অভিযোগ রয়েছে। সরকারি সুবিধায় হস্তক্ষেপেরও অভিযোগ আছে। এতে দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত কমিটি গঠন করা জরুরি বলে মনে করেন বিএনপির সাবেক নেতা আব্দুস সামাদ।
সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আমিন বলেন, ভিত্তিহীন অভিযোগে আমাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বর্তমানে দলীয় কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছি না। আশা করছি খুব দ্রুতই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হবে। তখন গ্রহণযোগ্য কমিটি গঠনের চেষ্টা করব।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম বলেন, এ মুহূর্তে কয়রায় বিএনপির কোনো কমিটি নেই। কমিটি হলে দলীয় সব বিরোধ মিটে যাবে বলে আশা করছি।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, কয়রায় কমিটি গঠনের জন্য জেলা বিএনপি থেকে ৫ সদস্যের সার্চ কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটি নেতাকর্মীর বিরোধও নিষ্পত্তি করবে। দ্রুতই ঐক্যবদ্ধ একটি কমিটি উপহার দেওয়া হবে।