সব রহস্য লুকিয়ে রোনালদোর শরীরে
Published: 7th, February 2025 GMT
তিনতলা কেক। পুরোটাই আল নাসরের জার্সির রঙে বানানো। দ্বিতীয় তলায় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ক্যারিয়ারের টুকরা ছবি। তৃতীয় তলায়ও তাই। স্পোর্টিং লিসবনের সেই কিশোর রোনালদো, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তরুণ, রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাসের পরিণত এবং আল নাসরের ‘বুড়ো’ রোনালদো। বুড়ো? সেটা শুধু বয়সের ভার বিচারে বলা। রোনালদো কি সেই ভার টের পান
মনে হয় না। তার ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে তিনতলা কেকটির ছাদের ওপরে। রোনালদোর বাইসাইকেল কিকের ছোট্ট এক ভাস্কর্য বানানো হয়েছে নিপুণ দক্ষতায়। পরনে আল নাসরের জার্সি। রোনালদো সৌদি ক্লাবের জার্সিতে বাইসাইকেল কিকে গোল করেননি এখনো। আল নাসর সম্ভবত সেই আশায় আছে, আর তাই গতকাল রোনালদোর জন্মদিনের কেকে ওই ভাস্কর্য। চল্লিশ পূর্ণ করা রোনালদোর কাছ থেকে এখনো ওভাবে গোল দেখার আশা করা হয়। ভাবুন একবার!
৫০ বছর বয়সীও বাইসাইকেল কিকে গোল করতে পারেন। কিন্তু সেটা বড়জোর অপেশাদার ম্যাচে। রোনালদোর ব্যাপারটা আলাদা। তাঁর সমসাময়িক বেশির ভাগই আরও আগে বুট তুলে রেখে নেমে পড়েছেন হয়তো কোচিংয়ে। কিংবা জীবনটা থিতু করেছেন অন্য কোনো কাজে। রোনালদো সেখানে একটি দেশের শীর্ষ লিগে শুধু খেলছেনই না, রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতা। মৌসুমে ২৫ ম্যাচে ২৩ গোল হয়ে গেছে। এই যদি হয় চল্লিশ পেরোনো কারও পারফরম্যান্স, দল তাহলে আশা করবে না কেন!
সেই আশায় পুঁজি একটাই—রোনালদোর শরীর। অন্য ভাষায়, তাঁর অবিশ্বাস্য ফিটনেস। কথায় আছে, ‘শরীরের নাম মহাশয়, যা সওয়াবেন তাই সয়।’ রোনালদো যা সইয়ে সইয়ে শরীরকে যেভাবে তৈরি করেছেন, সেটার সঙ্গে মিকেলাঞ্জেলোর ‘ডেভিড’–এর তুলনা চলে। হাতুড়ি-গাইতি কুঁদে দিনের পর দিন নিপুণ মনোবেশে বানানো ডেভিডের ভাস্কর্যটি যেমন চিরায়ত, ফুটবলে রোনালদোর ফিটনেসও যেন তাই—ভবিষ্যতের খেলোয়াড়দের জন্য উদাহরণ, যাঁরা চল্লিশ পেরিয়েও চুটিয়ে খেলতে চান। সে জন্য কী করতে হবে? তেমন কিছুই না, রোনালদোর মতো প্যাশন থাকলেই চলবে।
আরও পড়ুন৪০তম জন্মদিনের আগে জোড়া গোল আর নতুন উদ্যাপন রোনালদোর ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫যেমন ধরুন, চল্লিশ পূর্ণ করার আগের রাতেও রোনালদো ইনস্টাগ্রামে শরীর ঠিক করার একটি ছবি পোস্ট করেছেন। মাসল রিকভারি করতে চার হাজার পাউন্ড দামের ক্রায়ো কমপ্রেশন বুট পরে শুয়ে থাকার ছবি। পর্তুগিজ কিংবদন্তির বাসাতেই ক্রায়ো কমপ্রেশনের জন্য আলাদা কক্ষ আছে। যাকগে সে কথা, সবার তো আর রোনালদোর মতো বিত্ত নেই। কিন্তু কথাটা উল্টোও হতে পারে। ফিটনেসে পরিপূর্ণ ওই রকম শরীর বানিয়ে তা ধরে রেখে প্রতিনিয়ত পারফরম্যান্স নিংড়ে বের করতে পেরেছেন বলেই তো ঘরে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আসছে। ঠিক এ জায়গায় একটি প্রশ্নও জাগে।
রোনালদো আসলে করছেন কী? ধরুন, এখন এই মুহূর্তেও যদি রোনালদো পেশাদার ফুটবল ছাড়েন, তবু তো সর্বকালের সেরাদের কাতারেই থাকবেন। তবু কেন খেলে যাওয়া—অনেকটাই শচীন টেন্ডুলকারের মতো, ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের পরও যেভাবে আরও দুটি বছর খেলেছেন। পার্থক্যটা সম্ভবত মানসিকতায়। টেন্ডুলকার তারপর আর চালিয়ে যেতে চাননি কিংবা পারেননি। রোনালদো ঠিক বয়সের ওই ভার বহনের জায়গা থেকেই অসম্ভবকে সম্ভব করতে চান। তাঁর সতীর্থদের ভাষায়, রোনালদো একটি কথা প্রায়ই বলেন, ‘অসম্ভব বলে কিছু নেই।’ তা, কোন সে অসম্ভব?
জন্মদিনে বিশেষ কেক কাটেন রোনালদো.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়
অভাগাদের বছরে ‘কুফা’ কাটানোর তালিকায় সর্বশেষ নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে গতকাল অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টেস্টের রাজদণ্ড হাতে পেয়েছে টেম্বা বাভুমার দল। প্রোটিয়াদের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসর শেষ হয়েছে।
তবে এর রেশ থাকতেই চলে এসেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসর বা চক্র। ২০২৫-২৭ চক্রের শুরুটা হচ্ছে বাংলাদেশকে দিয়েই। আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এটিই প্রথম সিরিজ।
ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বছর পার দিলেও রেকর্ড ভালো নয়। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আসার পর থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ক্রমশ উন্নতির দিকে।
প্রথম চক্রে (২০১৯-২১) কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দ্বিতীয় চক্রে (২০২১-২৩) মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক জয় বাদ দিলে বলার মতো কিছু নেই। প্রথম দুই চক্র শেষ করতে হয়েছে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে।
তবে তৃতীয় চক্রে (২০২৩-২৫) বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বেশ আশাব্যঞ্জক। ১২ টেস্ট খেলে জিতেছে চারটিতে। এর মধ্যে গত বছর পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের সুখস্মৃতিও আছে। পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান ছিল সাত নম্বরে; পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপরে। তিন চক্র মিলিয়ে বাংলাদেশ খেলেছে ৩১ টেস্ট। জিতেছে পাঁচটি, ড্র করে দুটি আর হেরেছে ২৪টি।
এবার কী হবে? শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে আশার বাণীই শুনিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল। তিনি বলেছেন, ‘গত চক্রে আমরা চারটা ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্য থাকবে এই চক্রে কীভাবে আরও একটা-দুইটা ম্যাচ বেশি জিততে পারি।’ সেটা কতটুকু সম্ভব, সময়ই বলে দেবে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের তিন চক্রের মতো এবারও অংশ নিচ্ছে ৯ দল। প্রত্যেক দল খেলবে ছয়টি করে সিরিজ—তিনটি নিজেদের মাঠে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। পয়েন্ট সিস্টেমেও কোনো পরিবর্তন আসেনি (জিতলে ১২, ড্র করলে ৪, টাই করলে ৬ পয়েন্ট)।
তবে এবার ম্যাচের সংখ্যা গত দুবারের চেয়ে একটি বেড়েছে। ফাইনালসহ মোট ম্যাচ হবে ৭১টি, সিরিজ ২৭টি। প্রত্যেক সিরিজেই সর্বনিম্ন দুই ও সর্বোচ্চ পাঁচটি ম্যাচ হবে।
চতুর্থ চক্রের ফাইনালও লর্ডসে আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ম্যাচ হবে ২০২৭ সালের জুনে। ফাইনালের আগে শেষ সিরিজ হবে সেই বছরের মার্চে; পাকিস্তানে দুটি টেস্ট খেলতে যাবে নিউজিল্যান্ড।
এবার সবচেয়ে বেশি ২২ ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। সবচেয়ে কম ১২টি করে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা, যাদের সিরিজ দিয়েই শুরু হচ্ছে এবারের চক্র। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ দলের টেস্ট সিরিজ এই একটিই। নাজমুল-মুশফিক-তাইজুলদের বাকি পাঁচ সিরিজই ২০২৬ ও ২০২৭ সালে। সব সিরিজেই দুটি করে ম্যাচ।
২০২৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ মার্চে, ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই বছরের আগস্টে দল যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। ২০০৩ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেটিই হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রথম টেস্ট সিরিজ।
এই চক্রে বাংলাদেশের ঘরের মাঠে দ্বিতীয় সিরিজ খেলবে ২০২৬ সালের অক্টোবরে; খেলতে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের মাসে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। বাংলাদেশের শেষ সিরিজ দেশের মাটিতেই; ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসবে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালের পর এটিই হবে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ।
অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো খবর হলো ২০২৫-২৭ চক্রে বাংলাদেশ যে ছয় দলের বিপক্ষে খেলবে, এর চারটির বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তারা হারেনি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করেছে আর পাকিস্তানকে করেছে ধবলধোলাই (দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়)। সিরিজ হেরেছে শ্রীলঙ্কা আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।