ইউএসএআইডির কর্মীদের ছুটিতে পাঠানোর ট্রাম্পের পরিকল্পনা স্থগিত করলেন মার্কিন বিচারক
Published: 8th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির ২ হাজার ২০০ কর্মীকে সবেতনে ছুটিতে পাঠানোর পরিকল্পনা স্থগিত করেছেন একজন মার্কিন বিচারক। এই কর্মীদের ছুটিতে পাঠানোর বিষয়টি কার্যকর হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে এ পদক্ষেপ নিলেন তিনি।
এর আগে গতকাল শুক্রবারই এই বিচারক ইউএসএআইডিকে ভেঙে দিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপ আটকাতে ‘সাময়িক’ নির্দেশের অংশ হিসেবে ওই স্থগিতাদেশ দেবেন বলে জানিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউএসএআইডির বিপুলসংখ্যক কর্মীর মধ্যে মাত্র ৬১১ জনকে চাকরিতে বহাল রাখা হবে। ওয়াশিংটনে সংস্থাটির সদর দপ্তর থেকে ইউএসএআইডির চিহ্ন সরিয়ে ফেলার পর বিচারক ওই আদেশ দেন।গত বৃহস্পতিবার ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টকে (ইউএসএআইডি) ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা রুখতে ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল আদালতে মামলা করা হয়। মামলার বাদী ‘আমেরিকান ফেডারেশন অব গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ’ ও ‘আমেরিকান ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’। মামলার ওপর শুনানিতে বিচারক ওই আদেশ দেন।
কর্মীদের ছুটিতে পাঠানোর পরিকল্পনা স্থগিত করার এ আদেশ দেন ওয়াশিংটনের ডিস্ট্রিক্ট বিচারক কার্ল নিকোলস। প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন।
বিদেশে ইউএসএআইডির মাধ্যমেই মূলত যুক্তরাষ্ট্র তার উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সংস্থাটির কর্মীর সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। তাঁদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই বিভিন্ন দেশে কাজ করেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনার অধীন ইউএসএআইডির প্রায় ২ হাজার ২০০ কর্মীকে সবেতনে ছুটিতে পাঠানো হবে। এ ছাড়া ৫০০ কর্মীকে এরই মধ্যে ছুটি দেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মনে করেন, ইউএসএআইডি দুর্নীতি ও জালিয়াতি করে।ব্রেট শুমেট, মার্কিন বিচার বিভাগের কর্মকর্তাট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউএসএআইডির এই বিপুলসংখ্যক কর্মীর মধ্যে অপরিহার্য হিসেবে মাত্র ৬১১ জনকে চাকরিতে বহাল রাখা হবে। ওয়াশিংটন ডিসিতে সংস্থাটির সদর দপ্তর থেকে ইউএসএআইডির চিহ্ন সরিয়ে ফেলার পর বিচারক ওই আদেশ দেন।
মামলার শুনানি চলাকালে বিচারক নিকোলস বলেছিলেন, শুক্রবার (গতকাল) দিন শেষে এ বিষয়ে লিখিত আদেশ দেবেন তিনি।
শুনানিতে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীদের একজন কার্লা গিলব্রাইড বলেন, ‘ব্যাপকসংখ্যক কর্মীকে অপসারণের পাশাপাশি সংস্থার কার্যালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়া, কর্মীদের জোরপূর্বক অন্যত্র স্থানান্তর—সবই করা হয়েছে নির্বাহী কর্তৃত্বের বাইরে গিয়ে। এটি ক্ষমতা বিভাজন নীতির লঙ্ঘন।’
ওই স্থগিতাদেশ দেওয়ার আগে মার্কিন বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ব্রেট শুমেট বিচারক নিকোলসকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনার অধীন ইউএসএআইডির প্রায় ২ হাজার ২০০ কর্মীকে সবেতনে ছুটিতে পাঠানো হবে। এ ছাড়া ৫০০ কর্মীকে এরই মধ্যে ছুটি দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট মনে করেন, ইউএসএআইডি দুর্নীতি ও জালিয়াতি করে।
যাহোক, বিচারকের আদেশের ফলে ওই দুই হাজারের বেশি কর্মীকে ছুটিতে পাঠানোর বিষয়টি আটকে যাবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কর্মরত ইউএসএআইডির মানবিক সহায়তাকর্মীদের অন্যত্র স্থানান্তরের সিদ্ধান্তও স্থগিত হয়ে যাবে।
গতকাল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে কোনো প্রমাণ হাজির না করেই ইউএসএআইডির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও প্রতারণামূলকভাবে অর্থ খরচের অভিযোগ করেন।
ইউএসএআইডির সহায়তা স্থগিতের প্রতিবাদে ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউএসএআইড র কর ম দ র কর ম ক র কর ম
এছাড়াও পড়ুন:
রাতারাতি তারকা হলে দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন: রিচি
রিচি সোলায়মান। ছোটপর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী এখন অনেকটাই আড়ালে। আজ বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে প্রকাশ হয়েছে বিশেষ গানচিত্র ‘বাবা শুনতে কী পাও’। এতে অভিনয় করেছেন রিচি সোলায়মান। এই গানচিত্র এবং সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মীর সামী
আপনার অভিনীত গানচিত্র ‘বাবা শুনতে কী পাও’ নিয়ে কিছু বলুন?
‘বাবা শুনতে কি পাও’ শিরোনামের এই বিশেষ গানটি তৈরি করেছেন প্রান্তিক সুর। তাতে কণ্ঠ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী গজল ঘরানার শিল্পী শিরিন চৌধুরী। গানটির কথাও লিখেছেন শিল্পী নিজে। গানচিত্রে একটি সুন্দর সামাজিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিয়ের পর একটা মেয়ের স্বপ্ন যেন মরে না যায় এবং শুধু মানুষটাকে নয়, তার স্বপ্নকেও ভালোবাসার সংবেদনশীল এবং হৃদয়স্পর্শী বাবার অনুরোধের বার্তা থাকছে এতে। গানের কথার সূত্র ধরে গল্পনির্ভর ভিডিওটিতে বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত আর মেয়ের ভূমিকায় আমি। অনেকদিন পর হায়াত চাচার সঙ্গে কাজ করলাম।
এই কাজটির সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?
কিছুদিন আগে নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী আমায় গানচিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য বললেন। যখন শুনলাম এই গানে বাবার ভূমিকায় অভিনয় কবেন আবুল হায়াত চাচা; ঠিক তখনই রাজি হয়েছি। কারণ, আমি হায়াত চাচার পরিচালনায় অনেক নাটকে তাঁর মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। তাই ভাবলাম বাবা দিবসের এই কাজটি আমাদের আরও একটি ডকুমেন্টেশন হয়ে থাক। আমাদের এই কাজে একজন মেয়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে বাবাকে ঘিরে তার স্মৃতি, ভালোবাসা আর না বলা কথাগুলো উঠে এসেছে। কাজটি করার সময় আমার বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল। একজন বাবার অবদান যে কত বিশাল, সেটি অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না–এই গানচিত্রে সেটিই তুলে ধরা হয়েছে।
আপনাকে এখন টিভি নাটকে খুব কম দেখা যায়। ইচ্ছা করেই দূরে সরে আছেন?
আমি এখন পরিবার আর নিজের সময়কে প্রাধান্য দিচ্ছি। পাশাপাশি কাজের মানের প্রতিও সবসময় সংবেদনশীল ছিলাম। নাটকের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে কখনও বিশ্বাসী ছিলাম না। এখন তো অনেক সময় দেখা যায় গল্প বা চরিত্রের গভীরতা কম, কাজগুলো অনেকটাই ‘কনটেন্ট ভিউ’ নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই, যখন কাজ করি, সেটি যেন দর্শকের মনে থাকে। তাই শুরু থেকে এখনও বেছে বেছেই কাজ করছি।
এখন নাটকে ‘ভিউ’ ও ‘ট্রেন্ড’ অনুসারে শিল্পী নির্বাচন হয় বলে অভিযোগ আছে...
এটি ঠিক যে এখন ‘ভিউ’ একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন হলো– দীর্ঘ মেয়াদে এই দর্শক আসলে কাদের মনে রাখে? আমার মনে হয়, একটি শিল্পমাধ্যমে যখন কেবল সংখ্যা দিয়ে শিল্পী বা কাজের মান বিচার হয়, তখন সেখানে অন্তর্নিহিত শিল্পবোধ অনেকটা হারিয়ে যায়। আমি বিশ্বাস করি অভিনেতা বা অভিনেত্রী হিসেবে আমাদের প্রথম দায় নিজের চরিত্রের প্রতি। ‘ভিউ’ দিয়ে নয়, শিল্পের গভীরতা দিয়ে একজন শিল্পীকে বিচার করা উচিত।
বর্তমান সময়ে ওটিটি মাধ্যমের প্রসারে নাটকের গুণগত মানে কী প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন?
ওটিটি একটা বড় প্ল্যাটফর্ম। নতুন গল্প আর নতুন নির্মাতাদের সুযোগ এনে দিয়েছে। এখানেও একটি সিন্ডিকেট তৈরি হচ্ছে। যারা আগে টিভিতে প্রভাবশালী ছিলেন, এখন তারা ওটিটিতেও আধিপত্য রাখছেন। এটি শিল্পের জন্য মোটেই ভালো নয়। প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও অনেক শিল্পী সুযোগ পাচ্ছেন না। আমি বলব, ওটিটি হোক কিংবা টিভি–প্রতিভা ও গল্পকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত, ‘চেনা মুখ’ বা ‘সেলিব্রেটি প্যাকেজ’কে নয়।
যে সিন্ডিকেটের কথা বললেন, তা কী ভাঙা যায় না?
অবশ্যই যায়। যারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন, তারাই এখন সেই দলের হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? আমি যখন নিয়মিত কাজ করেছি, সেই সময় কিন্তু সবাই যার যার যোগ্যতা দিয়ে কাজ করেছেন। এখন পরিচয়ের ভিত্তিতে হচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে আমাদের নাট্যাঙ্গনের শিল্পটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ওটিটির কাজে আগ্রহ অনুভব করেন?
অবশ্যই। যদি ভালো গল্প আর শক্তিশালী চরিত্র পাই, আমি ওটিটিতেও কাজ করতে চাই। অশ্লীলতা বা অহেতুক সাহসী দৃশ্যের নামে যদি গল্পের গুরুত্ব হারিয়ে যায়, তাহলে সেটি আমাকে টানে না। শিল্পমান থাকলেই আমি আগ্রহী।
বর্তমান প্রজন্মের নতুন অভিনেত্রীদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
নতুনদের মধ্যে অনেকেই খুব ভালো করছেন। আমি তাদের একটা কথাই বলি, নিজেকে সময় দিন, নিজেকে গড়ুন। রাতারাতি তারকা হওয়া যায়। দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন। টিকে থাকার জন্য শুধু সৌন্দর্য নয়, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, অধ্যবসায় ও আত্মসমালোচনাও জরুরি।