সিনেমার বিশেষ শোতে অতিথি শতাধিক রিকশাচালক
Published: 9th, February 2025 GMT
‘আয়নাবাজি’খ্যাত নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী। তার নতুন সিনেমা ‘রিকশা গার্ল’। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি যেমন প্রশংসিত হয়েছে, তেমনি পুরস্কারও জিতেছে। গত ২৪ জানুয়ারি দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে এটি।
সাধারণত, সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনীতে বিশেষ শ্রেণি-পেশার মানুষ আমন্ত্রণ পেয়ে থাকেন। এবার প্রান্তিক মানুষের জন্য ‘রিকশা গার্ল’ সিনেমার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় কেরানীগঞ্জের জয় সিনেমাসের লায়ন শপার্স ওয়ার্ল্ড সিনেমাসে এই প্রদর্শনী হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রদর্শনীতে শতাধিক রিকশাচালক উপস্থিত হবেন, থাকবেন সিনেমার নির্মাতা-শিল্পীরাও।
আরো পড়ুন:
যতটা পাপ কামিয়েছি, তার সবটা মুছে সুন্দরভাবে মরতে চাই: পপি
আমি বোধহয় অদৃশ্য গণ্ডি ভাঙতে পেরেছি: ইধিকা
‘রিকশা গার্ল’ সিনেমার অভিনেত্রী নভেরা বলেন, “যখন শুটিং চলছিল তখনই এ ধরনের একটি পরিকল্পনা হয়েছিল। এটি বাস্তবে রূপ লাভ করতে যাচ্ছে। এর আগে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ সিনেমার একটি প্রদর্শনী হয়েছিল গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে। ওই শোতে আমি থাকতে পারিনি। আশা করছি, এ সিনেমার প্রদর্শনীতে উপস্থিত হয়ে দর্শকের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করব। শো শেষে তাদের সঙ্গে কথা বলব; সিনেমা নিয়ে তাদের মতামত শুনব।”
এদিকে, মুক্তির তিন সপ্তাহের মাথায় ‘রিকশা গার্ল’ উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গতে মুক্তি পাবে সিনেমাটি।
শিল্পমনা নারী নাঈমাকে ঘিরে এগিয়েছে ‘রিকশা গার্ল’ সিনেমার কাহিনি। ছবি আঁকতে পছন্দ করে সে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্রোতের প্রতিকূলে লড়াই শুরু হয় নাঈমার। ছবি এঁকে যেহেতু পয়সা মেলে না, তাই উপায়ন্তর না পেয়ে রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হয় সে। জটিল হতে থাকে সিনেমার গল্প। প্রশ্ন উঠে, নাঈমা কীভাবে তার স্বপ্নপূরণ করবে।
সিনেমাটিতে নাঈমা চরিত্রে অভিনয় করেছেন নভেরা রহমান। অন্যান্য চরিত্র রূপায়ন করেছেন চম্পা, মোমেনা চৌধুরী, নরেশ ভূঁইয়া, অ্যালেন শুভ্র প্রমুখ।
যুক্তরাষ্ট্রের লেখক মিতালি পারকিন্সের উপন্যাস অবলম্বনে ‘রিকশা গার্ল’ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনায়। প্রযোজনা করেছেন এরিক জে অ্যাডামস, ফরিদুর রেজা সাগর, জিয়াউদ্দিন আদিল ও শিহাব আহমেদ সিরাজী।
করোনা মহামারির আগেই শেষ হয় ‘রিকশা গার্ল’ সিনেমার শুটিং। ২০২০ সালে মুক্তির কথা থাকলেও বদলে যায় পরিকল্পনা। দেশে মুক্তির আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এটি। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কারও জিতেছে ‘রিকশা গার্ল’। দেশে সিনেমাটি মুক্তির আগ পর্যন্ত বিশ্বের ৩০টির বেশি আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রদর্শনের পাশাপাশি ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮ রাজ্যের ৫২টি শহরে এটি প্রদর্শিত হয়।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র প রদর শ
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।