দিল্লিকে সম্পর্ক আর খারাপ না করার বার্তা দেবে ঢাকা
Published: 10th, February 2025 GMT
ওমানের মাসকাটে আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বৈঠকে ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থান ও তাঁর ‘উস্কানিমূলক বক্তব্য’ প্রদান নিয়ে আপত্তি জানানো হবে। পাশাপাশি সম্পর্ককে ‘আর খারাপ না করার’ বার্তা দিল্লিকে দেওয়া হবে ঢাকার পক্ষ থেকে।
আগামী ১৬-১৭ ফেব্রুয়ারি ওমানে অনুষ্ঠিত হবে অষ্টম ইন্ডিয়ান ওশান সম্মেলন (আইওসি ২০২৫)। ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এতে যোগ দিতে গত জানুয়ারিতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ওমানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ সম্মেলনে যোগ দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা। সেখানেই বৈঠক করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে।
এটি হতে যাচ্ছে তৌহিদ-জয়শঙ্কর দ্বিতীয় বৈঠক। প্রথম বৈঠকটি ২০২৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন তারা। এ ছাড়া গত ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের সময়ে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ৫ আগস্ট-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিটি বৈঠকেই সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে দুই দেশ। তবে ভারতের নানা আচরণ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে সমকালকে বলেন, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে শুরুতে শেখ হাসিনাবিহীন বাংলাদেশকে ভারতের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবে এখন এটাই বাস্তবতা। ভারত কোনো প্রকার উষ্কানি ছাড়া সীমান্তে অযাচিত উত্তেজনা তৈরি করা, কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে হামলা ও ভাঙচুর, শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা বা ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে ক্রমাগত মিথ্যাচার করাকে শক্তি প্রদর্শন হিসেবে দেখছে ঢাকা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপকে মোটেই ভালোভাবে দেখার সুযোগ নেই। এগুলো বন্ধ করতে আহ্বান জানাবে ঢাকা। সেই সঙ্গে তাদের দেশে আশ্রয় দেওয়া পলাতক অপরাধী যাতে ভারতে বসে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না করে, তার আহ্বান জানানো হবে। মোটকথা, বাংলাদেশ বরাবরই সম্পর্কের উন্নয়ন চেয়েছে। ফলে সম্পর্ক আর যাতে খারাপের দিকে না যায়, সে বার্তা ঢাকার পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।
ভারত তো বলছে, শেখ হাসিনার বক্তব্যের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ ক্ষেত্রে ঢাকা কেন দিল্লিকে দোষারোপ করছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে এই কর্মকর্তা বলেন, ভারতের মাটিতে বসে কেউ বাংলাদেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে সে দায় এড়ানোর সুযোগ দিল্লির নেই। উদাহরণস্বরূপ, ভারতকে অস্থিতিশীল করতে পারে এমন কোনো ব্যক্তিকে যদি বাংলাদেশ আশ্রয় দিত আর সেই ব্যক্তি যদি বাংলাদেশে বসে ভারতের বিরুদ্ধে কাজ করত, তাহলে সে দায় কি ঢাকা এড়াতে পারত? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আসন্ন তৌহিদ-জয়শঙ্কর বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং দুই দেশের সীমান্ত নিয়ে যে নিষ্পত্তি হওয়ার বোঝাপড়া রয়েছে, তা মেনে চলতে বলা হবে। সীমান্তে শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে উত্তেজনা না ছড়ানোর আহ্বান করা হবে।
ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
আসন্ন সফরে আইওসি ২০২৫-এ যোগ দেওয়ার পাশাপাশি ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। দেশটিতে বড় সংখ্যা প্রবাসী বাংলাদেশিরা বসবাস করেন। প্রবাসীকল্যাণসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বাকি বিষয় নিয়ে বৈঠক হবে দুই দেশের। এ ছাড়া দেশটির কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন মো.
আইওসি ২০২৫-এ অংশ নেওয়ার পাশাপাশি ভারত ও ওমান ছাড়া আরও কয়েকটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র পরর ষ ট রমন ত র পরর ষ ট র উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
গণভোটে সংস্কার চায় নুরের গণঅধিকার
গণভোটের মাধ্যমে সংস্কারের বৈধতা চায় গণঅধিকার পরিষদ। দলটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন, প্রধানমন্ত্রী পদ দুইবারে সীমাবদ্ধ রাখা ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুপারিশে একমত হয়েছে। সুপারিশ করেছে, গঠনের তিন বছর পর নিবন্ধন পাবে রাজনৈতিক দল।
সোমবার সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এসব মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরে গণঅধিকার। দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, সংস্কার কিংবা জুলাই সনদকে ভবিষ্যতে যাতে কেউ চ্যালেঞ্জ বা বাতিল করতে না পারে, সে সিদ্ধান্ত গণভোটে চূড়ান্ত করতে হবে।
দ্রুত নির্বাচনের দাবি করা বিএনপি আগামী সংসদে সংস্কার বাস্তবায়ন চায়। নুরুল হক নুরও সম্প্রতি কয়েকবার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। গতকাল সংলাপের পর নুর বলেন, ‘গণভোটের পরে জাতীয় নির্বাচনের আশা করি। যেসব সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হবে, সেগুলো বর্তমান সরকারের অধীনেই বাস্তবায়ন চায় গণঅধিকার। বাকিগুলো নির্বাচিত সরকার এসে করবে।’
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা খর্বে এনসিসি গঠনের সুপারিশে গণঅধিকার একমত জানিয়ে নুর বলেন, কাউন্সিলের পরিবর্তে পরিষদ নামকরণের প্রস্তাব করেছি।
সুপারিশে বলা আছে, এনসিসি প্রধান বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, তিন বাহিনীর প্রধানগণ ও প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ দেবে। গণঅধিকার চায়, নির্বাচনকালীন উপদেষ্টা পরিষদও এনসিসির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে হবে। পুলিশপ্রধানের নিয়োগও এনসিসির মাধ্যমে করার সুপারিশ করে গণঅধিকার।
কমিশন সুপারিশ করেছে, সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের আসন জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে বণ্টন হবে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ, আসন পেতে কমপক্ষে ৩ শতাংশ ভোট পেতে হবে। গণঅধিকার আনুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের নির্বাচনে একমত হলেও দলটি প্রস্তাব করেছে ১ শতাংশ ভোট পেলেই আসন পাবে রাজনৈতিক দল। একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, তত শতাংশ আসন পাবে।
বিএনপি এনসিসি, আনুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ দুইবারে সীমাবদ্ধ করার সুপারিশে একমত নয়। কমিশন এই তিন সুপারিশকে মৌলিক পরিবর্তন বলছে। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এই তিন সুপারিশে একমত। একই অবস্থান জানিয়েছে বিএনপির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত গণঅধিকার। একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা এবং দলীয় প্রধান হতে পারবেন না– কমিশনের এ সুপারিশেও একমত দলটি। যদিও বিএনপির এ সুপারিশে ঘোর আপত্তি আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে নবগঠিত এনসিপির সমালোচনায় মুখর হয়েছেন গণঅধিকারের নেতারা। যদিও এনসিপির উদ্যোক্তার বড় অংশই একসময় গণঅধিকার নেতাদের সঙ্গে ছিলেন। ২০২১ সালে গঠিত গণঅধিকার সভাপতি নুর বলেছেন, ‘মাসে গড়ে আটটি করে রাজনৈতিক দল গঠিত হচ্ছে। রাজনৈতিক শৃঙ্খলার জন্য নিবন্ধনের শর্ত বহাল রাখা উচিত। আমরা বলেছি, একটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন পেতে ন্যূনতম তিন বছর সক্রিয় কার্যক্রম চালাতে হবে।’
সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদের পরিবর্তে ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি’ যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে গণঅধিকার। সংসদের মেয়াদ চার বছর, প্রার্থী হতে ন্যূনতম বয়স ২৩ বছর করারও প্রস্তাব দিয়েছে। সংবিধান সংশোধনে সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ সংশোধনে গণভোটের সুপারিশ করেছে। ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সুপারিশে একমত নয় গণঅধিকার। দলটি প্রস্তাব করেছে, অর্থবিল এবং আস্থা প্রস্তাব বাদে বাকি সব বিষয়ে এমপিরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন।
নুর বলেছেন, আস্থা ভোট দলের বাইরে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকলে এমপি কেনাবেচার নজির উপমহাদেশের রাজনীতিতে রয়েছে।
গণঅধিকার ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬ সুপারিশের ১২৭টিতে একমত জানিয়েছে। ১৫টিতে একমত নয়। বাকি ২৩টিতে আংশিক একমত বলে জানিয়েছে। গতকাল আরও আটটি সুপারিশে নতুন করে একমত হয়েছে। সংলাপে সভাপতিত্ব করা কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সবার লক্ষ্য জাতীয় সনদ তৈরি, যাতে করে ক্ষমতার বিন্যাসে পরিবর্তন ঘটে।