'ডেভিল হান্ট' অভিযানে সুন্দরবনের দস্যুদের দুই সহযোগীসহ মোংলায় পাঁচজন আটক
Published: 10th, February 2025 GMT
সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে পরিচালিত বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্ট’-এর অংশ হিসেবে যৌথ বাহিনী সুন্দরবনের দস্যুদের দুই সহযোগীসহ মোংলায় পাঁচজনকে আটক করেছে। কোস্টগার্ড ও পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
রোববার রাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার চকবারা বাজার এলাকা থেকে কোস্টগার্ডের সদস্যরা একটি অবৈধ দেশীয় একনালা পাইপ গান ও ১৬টি দেশীয় অস্ত্রসহ আব্দুল হাকিম গাজী (৬৮) ও হাফিজুর রহমান (২৫)-কে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে যে, তারা সুন্দরবনের ডাকাতদের সহযোগিতা করতো।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা সদর দপ্তর) অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তারেক আহম্মেদ জানান, আটককৃত ব্যক্তিরা সুন্দরবনের দস্যুদের সহায়তা করতো এবং তারা সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার চকবারা গ্রামের বাসিন্দা। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে কোস্টগার্ডের ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযান চলমান থাকবে।
অন্যদিকে সোমবার ভোর রাতে মোংলার চাঁদপাই এলাকা থেকে পুলিশ আরও তিনজনকে আটক করে। তারা হলেন দুলাল ফকির (৪০), আমজাদ মোড়ল (৪২) ও মো.
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, সুন্দরবন ও আশপাশের এলাকায় দস্যুতার বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিসুর রহমান জানান, আটক তিনজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদের বাগেরহাট জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন দরবন স ন দরবন র
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস