রি-প্যাকিংয়ের নামে সার-কীটনাশকে ভেজাল
Published: 10th, February 2025 GMT
দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী প্রসিদ্ধ এলাকার মধ্যে অন্যতম ঝিনাইদহের শৈলকুপা ও মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা। এ দুই উপজেলার পেঁয়াজ চাষিদের লক্ষ্য করে জাল বিস্তার করেছেন মানহীন ও ভেজাল সার-কীটনাশক ব্যবসায়ীরা। গোপনে সার ও কীটনাশকের রি-প্যাকিং কারখানা গড়ে তুলে স্থানীয় সার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে কৃষককে ভেজাল পণ্য গছিয়ে দিচ্ছেন তারা। এসব সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে আর্থিকভাবে প্রতারিত হওয়ার সঙ্গে ফসলহানি ও জমির উর্বরতা বিনষ্টের ঝুঁকিতে পড়ছেন চাষি।
জানা গেছে, কয়েক মৌসুম ধরেই শৈলকুপা ও শ্রীপুরের পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন এক শ্রেণির সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা গড়ে তুলেছেন ফসলের বালাইনাশক, ভিটামিনসহ সার কীটনাশকের রি-প্যাকিং কারখানা। পুলিশি ঝামেলা এড়াতে দুই জেলার সীমান্তবর্তী লাঙ্গলবাঁধ এলাকায় এসব রি-প্যাকিং কারখানা গড়ে তোলা হয়। বেশি লাভের আশায় এসব কারখানার মানহীন কীটনাশক চাষির হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন স্থানীয় কিছু সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী। ফলে সহজেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন দুই উপজেলার বিপুল সংখ্যক পেঁয়াজ চাষি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে শুধু শৈলকুপায় এবার ১৩ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে; যা গত মৌসুম থেকে ৫ হাজার হেক্টর বেশি।
শৈলকুপার আউশিয়া গ্রামের চাষী মিল্টন বিশ্বাস বলেন, পেঁয়াজের ফলন বাড়াতে চাষিরা বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। পেঁয়াজ মৌসুমে চাষিদের বাকিতে পণ্য দেওয়ার সুযোগে বিভিন্ন ধরনের নিম্নমানের সার ও কীটনাশক সরবরাহ করা হয়; যা মাঠে প্রয়োগ করে কোনো কাজ হয় না। তিনিও এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
একই গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি গত বছর পেঁয়াজ ক্ষেতে আগাছা দমনের জন্য কীটনাশক ছিটিয়ে ছিলেন। সেবার আগাছাসহ পেঁয়াজ ধ্বংস হয়। এবার সেই ক্ষেতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করলেও গত বছর প্রয়োগ করা কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় তা নষ্ট হয়। পরে ক্ষেতের উপরিভাগের মাটি কেটে তুলে তিনি নতুন করে আবাদ করেছেন।
শৈলকুপার বিসিআইসি ডিলার আলম ট্রেডার্সের মালিক নোমান পারভেজ বলেন, চাষিরা মাঝে মধ্যেই পেঁয়াজ ক্ষেতে প্রয়োগ করা বিভিন্ন সার ও কীটনাশক নিয়ে তাঁর কাছে অভিযোগ করেন। এক শ্রেণির অসাধু সার-কীটনাশক ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে চাষীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন।
শৈলকুপা ও শ্রীপুর সীমান্ত এলাকায় গড়ে ওঠা রি-প্যাকিং কীটনাশক জেপিআর এগ্রো কেয়ার ও মজিদ এগ্রো সায়েন্সের মালিক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম সালফার, জিপসাম, বোরন সারসহ বিভিন্ন কীটনাশক তিনি রি-প্যাকিং করে বাজারে সরবরাহ করে থাকেন। এসব সার ও কীটনাশক উৎপাদনে তাঁর খামারবাড়ির লাইসেন্স রয়েছে। তবে কোনো কেমিস্ট ছাড়াই রি-প্যাকিং করা এবং সার ও কীটনাশক রি-প্যাকিং করার বৈধতা আছে কিনা জানতে চাইলে বিষয়গুলো এড়িয়ে যান তিনি।
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, তিনি রি-প্যাকিং করা মানহীন ও ভেজাল সার এবং কীটনাশক নিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন। সার ও কীটনাশকের রি-প্যাকিংয়ের বৈধতা আছে কিনা খতিয়ে দেখে গোপনে গড়ে ওঠা এসব কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সার ও কীটনাশক রি-প্যাকিং নিয়ে ঢাকার খামারবাড়ির উপপরিচালক (সার ব্যবস্থাপনা) আমিনুল ইসলাম বলেন, কেউ যদি কোনো বৈধ আমদানিকারকের পরিবেশক হয়ে থাকেন, তাহলে শুধু সেই কোম্পানির পরিবেশক হিসেবে তিনি সার-কীটনাশক রি-প্যাকিং করতে পারেন। তবে রি-প্যাকিংয়ের আগে কোন ধরনের প্যাকেটে পণ্যটি প্যাকেটজাত হবে– এ বিষয়ে খামারবাড়ির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল রিচার্ড কোরেল ভেবেছিলেন, দেশটির পারমাণবিক বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানি সহজভাবেই শেষ হবে। তবে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের আগের দিন বুধবার রাত ৯টা ৪ মিনিটে সে আশা ভেঙে গেছে।
ওই সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা অবিলম্বে শুরু করতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের পেছনে থাকতে পারে না।
ট্রাম্প বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় এবং চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিনেটে সশস্ত্র বাহিনী কমিটির প্রায় ৯০ মিনিটের শুনানিতে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বারবার কোরেলকে প্রশ্ন করা হয়। ট্রাম্পের মন্তব্যে অনেক আইনপ্রণেতাই এ সময় ছিলেন বিভ্রান্ত। এ থেকে বোঝা যায়, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন ও এর বাইরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করেননি যে ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার পরীক্ষা করতে বলছেন, নাকি বিস্ফোরক পরীক্ষায় ৩৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্পের নির্দেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যা শীতল যুদ্ধের ভয়ংকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড কোরেলকে প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা শুরু করলে তা কি বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।
কোরেল বলেন, ‘যদি আমাকে স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের (স্ট্র্যাটকম) কমান্ডার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, আমার কাজ হবে, পারমাণবিক পরীক্ষাবিষয়ক যেকোনো আলোচনা সম্পর্কে সামরিক পরামর্শ দেওয়া।’
ভাইস অ্যাডমিরাল কোরেলকে গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প স্ট্র্যাটকমের প্রধান করার জন্য মনোনীত করেন। স্ট্র্যাটকম পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধ ও আক্রমণের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে। কোরেল পুরো শুনানিতে সতর্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় ও চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টশুনানির এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প কি পারমাণবিক ডিভাইসের বিস্ফোরক পরীক্ষা নয়, বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা বলছেন কি না।
জবাবে কোরেল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য জানি না, তবে এটি এমন একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমি তা মেনে নিই।’
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে গত বৃহস্পতিবার মুখোমুখি বৈঠকে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিং