ট্রাম্পের দূতের সফরের পর যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিককে ছাড়ল রাশিয়া
Published: 12th, February 2025 GMT
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূতের রাশিয়া সফরের পর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের এক বন্দীকে ছেড়েছে মস্কো। ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার এটাই প্রথম ঘোষিত রাশিয়ায় সফর। একটি ‘বিনিময় চুক্তির’ আওতায় ওই বন্দীকে ছাড়া হয়েছে। কিন্তু চুক্তিটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। এই চুক্তি ভবিষ্যতে ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস।
এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মুক্ত মার্কিন নাগরিকের নাম মার্ক ফোগেল। ২০২১ সাল থেকে তিনি রাশিয়ার কারাগারে বন্দী ছিলেন।
মার্ক ফোগেলের মুক্তিতে দূতিয়ালি করেছেন স্টিভ উইটকফ। আবাসন খাতের এই ব্যবসায়ী ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও তাঁর মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক দূত। মুক্ত ফোগেল ও উইটকফ একই উড়োজাহাজে করে ‘রাশিয়ার আকাশসীমা’ ত্যাগ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, স্টিভ উইটকফ এবং প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টারা বিনিময় চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এতে রাশিয়ার ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। ইউক্রেনের নৃশংস ও ভয়ংকর যুদ্ধের ইতি টানতে আমরা যে সঠিক পথে এগোচ্ছি, এটা সেটারই একটি নিদর্শন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) রাতের মধ্যে মার্ক ফোগেল যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পা রাখবেন এবং তাঁর পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলিত হবেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।’
গত মাসে ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতিতেও মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন উইটকফ। গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষিতভাবে তিনিই প্রথম রাশিয়া সফর করলেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে, বিশেষ করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন হামলার পর রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক এক ধরনের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। তবে এই সময়ে দেশ দুটির গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা তৃতীয় কোনো দেশে বৈঠক করেছেন।
তবে বাইডেনের আমলেও ওয়াশিংটন-মস্কো গুরুত্বপূর্ণ বন্দী বিনিময় করেছে।
এমন এক সময়ে ফোগেলের মুক্তির খবর এল, যার কয়েক ঘণ্টা আগে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী (ট্রেজারি সেক্রেটারি) স্কট বেসেন্ট ইউক্রেন সফর করবেন বলে ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। সফরে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করবেন।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্ক ফোগেল সাবেক স্কুলশিক্ষক ও কূটনীতিক। মাদক পাচারের অভিযোগে ২০২২ সালে তাঁকে ১৪ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র্যাব, চায় সাইবার ইউনিট
অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।
কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।
হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।
এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।