Samakal:
2025-08-02@00:18:18 GMT

দুদকের হাতে ২৭ মালিকের তালিকা

Published: 12th, February 2025 GMT

দুদকের হাতে ২৭ মালিকের তালিকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ‘কয়েন ভল্টের’ লকারের মালিক ২৭ কর্মকর্তার নামের তালিকা এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে। তারা সবাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। লকারে অপ্রদর্শিত অর্থসম্পদ জমা রাখার বিষয়ে এরই মধ্যে দুদকে আসা অভিযোগে ওই ২৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। লকারগুলোতে অপ্রদর্শিত অর্থ ও মূল্যবান সম্পদ জমা রাখা হয়েছে– এমন সন্দেহে গত ২৬ জানুয়ারি একটি লকার খুলে চার কোটি টাকার অর্থসম্পদ পেয়েছে দুদক। 

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েন ভল্টে মোট লকার ২৫২টি। এর মধ্যে একটি লকার খোলা হয়েছে। বাকি ২৫১টি লকার পর্যায়ক্রমে খোলার পরিকল্পনা রয়েছে দুদকের। আদালতের অনুমতি নিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লকার খোলার কাজ সম্পন্ন করছে দুদক। আদালতের অনুমতি নিয়ে গত ২৬ জানুয়ারি দুদক প্রথমে একটি লকার খুলতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নেতিবাচক আচরণ করেছেন– এমন একটি অভিযোগ এরই মধ্যে দুদক চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়েছে।

লকার নিয়ে দুদকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের বিরাট একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহানিরাপত্তা এলাকায় জমা রাখা হয়েছে। কোনো ধরনের ফি ছাড়াই বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লকারে ২০ বছরের জন্য অর্থসম্পদ জমা রাখার সুযোগ পাচ্ছেন। দেশের অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের লকারে উচ্চমূল্যের ফি পরিশোধ করে মূল্যবান সম্পদ ও বিদেশি মুদ্রা জমা রাখার সুযোগ পান সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা। 

দুদকে দেওয়া অভিযোগে লকার মালিক যে ২৭ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন– বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মো.

রাজীব আলী, লুৎফে আরা বেগম, প্রদীপ রঞ্জন দেবনাথ, মো. এনামুল করিম খান, মো. সাজ্জাত হোসেন খান, ইশতেকামাল হোসাইন, একেএম কামরুজ্জামান, মো. আক্কাছ উদ্দিন, ওয়াহিদা নাসরিন, ড. শাহ মো. মাইনুদ্দিন, নাসিমা খাতুন, মনি শঙ্কর কুণ্ডু, আরিয়াত হোসেইন খান ও মিজানুর রহমান আকন্দ।

এ ছাড়া অতিরিক্ত পরিচালক গোলাম মোস্তফা, মাহমুদ সালাউদ্দিন নাসের, মোস্তফা আজাদ কামাল, দিলীপ কুমার দত্ত, আলাউদ্দীন আল আজাদ, নির্বাহী পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক ও বিএফআইইউর উপপ্রধান মো. কাউসার মতিন, বিএফআইইউর অতিরিক্ত পরিচালক কাজী মনির উদ্দীন ও ডেপুটি ম্যানেজার (ক্যাশ) কল্যাণী সাহার নাম রয়েছে। লকার মালিক সাবেক চার কর্মকর্তা হলেন– সাবেক ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, সাবেক নির্বাহী পরিচালক অসীম কুমার দাশগুপ্ত, মোহাম্মদ মাসুম কামাল ভূঁইয়া ও শুভংকর সাহা। বাকি ২২৪ জনের নাম জানা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, আদালতের আদেশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর (এস কে সুর) নামের লকার খুলতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অসহযোগিতা ও অহেতুক সময়ক্ষেপণ করেন। লকার খোলা নিয়ে এই বিষয়গুলো লিখিতভাবে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে জানিয়েছে দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান টিম।
 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ