দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেলসেতুতে চলল প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন। রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি বুধবার বেলা ১১টা ১৮ মিনিটে রেলসেতুতে প্রবেশ করে। এর মধ্য দিয়ে যমুনা রেলসেতুতে শুরু হলো যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। যাত্রী নিয়ে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে যমুনা সেতু হয়ে পাড়ি দেয় ট্রেন। ফলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের নতুন রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলো।

যমুনা রেল সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান জানান, সেতুর দুটি লাইনের মধ্যে একটি লাইনে আজ বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চালু হলো। পর্যায়ক্রমে শিডিউল অনুযায়ী বাকি ট্রেনগুলো চলবে। ফলে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে আর ট্রেন চলবে না।

তিনি আরও জানান, রেলসেতুতে দুটি লাইন থাকলেও আজ একটি লাইন দিয়েই উভয়দিকে ট্রেন চলাচল করবে। কাল ঢাকা থেকে যেতে ডান পাশের লাইন, অর্থাৎ সেতুর উত্তর পাশের লাইনটি দিয়ে ট্রেন চলবে।

তিনি আরও বলেন, ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যমুনা রেল সেতুতে দুটি লাইন থাকলেও প্রথমে একটি লাইন দিয়েই উভয় দিকে ট্রেন চলাচল করবে। ঢাকা থেকে যেতে ডান পাশের লাইন, অর্থাৎ সেতুর উত্তর পাশের লাইনটি দিয়ে ট্রেন চলবে। আপাতত একটি লাইনে উভয়দিকে ট্রেন চলবে। তবে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। যোগাযোগ উপদেষ্টাসহ কর্মকর্তারা ওই অনুষ্ঠানে থাকবেন। ওই দিন থেকে দুই লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়।

বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর উপর উজানে আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করে সরকার। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর রেল সেতুটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিং কাজ শুরু হয়।

৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের আগস্টে যমুনা নদীর ওপর সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। পরে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি ২ লাখ টাকা ঋণ দেয় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।

প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সেতুটির ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই জয়েন্ট ভেঞ্চার।

১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর অবস্থিত যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল ও সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। দুর্ভোগে পড়তে হয় ট্রেন যাত্রীদের। এই দুর্ভোগ এড়াতে সেতুটির ৩০০ মিটার অদূরে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের দীর্ঘতম যমুনা সেতুর পূর্বের নামকরণ ছিল বঙ্গবন্ধু মুজিব রেলওয়ে সেতু। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের ডিসেম্বরে সেতুর নাম পাল্টে যমুনা রেলসেতু রাখা হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প শ র ল ইন ট র ন চলব ড স ম বর র লস ত ত

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাণের গানে সালাহর উৎসব

শেষ বাঁশি বাজতেই নেচে-গেয়ে উৎসবে মাতেন সালাহ-অ্যালিসন-এলিস্টাররা। তবে পর্বটা খুব বেশি লম্বা হয়নি। অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইক সবাইকে ডেকে মাঠের একটি গোলপোস্টের সামনে জড়ো করেন। আর্নে স্লটের নেতৃত্বে কোচিং স্টাফরাও যোগ দেন সেখানে। গ্যালারি সামনে রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চেইনের মতো করে সারিবদ্ধভাবে দেয়াল বানিয়ে দাঁড়ান সবাই। পুরো এনফিল্ড তখন সমবেত কণ্ঠে গাইতে শুরু করে– You’ll Never Walk Alone...। অলরেডদের হৃদয় থেকে উৎসারিত এ গানেই পূর্ণতা পায় উৎসব।

এ গানের সঙ্গে সঙ্গে অন্য রকম এক আবহ তৈরি হয় সেখানে। বিশ্বের কোনো স্টেডিয়াম ছুঁতে পারবে না এনফিল্ডের এই আবহ। এই আবহ তৈরি অলরেডদের বিশ্বাসে, বছরের পর বছর যারা কেউ কাউকে একা হাঁটতে দেয়নি। রোববার সকাল থেকেই এনফিল্ডের চারপাশে তৈরি হয়েছিল উৎসবের পরিবেশ। আতশবাজি ও লাল আবিরে রঙিন হয়ে উঠেছিল লিভারপুলের আকাশ-বাতাস। আগে থেকেই বন্দর শহরটির দেয়ালে দেয়ালে ঐতিহাসিক গানটির সঙ্গে ‘২০’ লেখা গ্রাফিতি আঁকা শুরু হয়ে গিয়েছিল। 

ম্যাচ শুরুর দুই ঘণ্টা আগেই এনফিল্ড চত্বর রীতিমতো অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আর্নে স্লট, সালাহদের স্বাগত জানাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাজার হাজার সমর্থক। লাল জার্সি পরা কাতারে কাতারে সমর্থকদের মাঝখান দিয়ে লাল বাসে করে লিভারপুলের ফুটবলাররা স্টেডিয়ামের আঙিনায় প্রবেশ করেন অন্যরকম এক পরিবেশে। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমের পর ৩০ বছর ট্রফি জেতেনি তারা। পাঁচ বছর আগে ট্রফি জিতলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে উদযাপন হয়েছিল দর্শকশূন্য গ্যালারিতে। তাই এমন অনেক সমর্থক আছেন, যারা প্রিয় ক্লাবকে লিগ জিততে দেখেননি। সেই তরুণ প্রজন্মের উচ্ছ্বাসটা ছিল বেশি। 

২০তম শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব আর্নে স্লট দিয়েছেন সাবেক কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপকে। এমনকি তিনি সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে পুরো গ্যালারিকে নিয়ে ক্লপের নামে গানও গেয়েছেন। ২০১৫ সালে লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর ক্লপ তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন ক্লাবটিকে। এর মধ্যে দুবার অবিশ্বাস্য লড়াই করেও মাত্র ১ পয়েন্টের ব্যবধানে ম্যানসিটির কাছে শিরোপা হারাতে হয়েছিল তাদের। ২০২০ সালে জিতলেও সমর্থকদের নিয়ে উল্লাস করতে পারেননি।

ক্লপের লিগজয়ী দলের সদস্য ছিলেন মোহামেদ সালাহ। এবার ভিন্ন স্বাদ পেয়েছেন মিসরীয় এ তারকা। শিরোপা জয়ের পর স্কাই স্পোর্টসকে তিনি বলেন, ‘সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে শিরোপা জয়ের অনুভূতি অবিশ্বাস্য। গতবারের (২০২০) চেয়ে এবার শতভাগ ভালো ছিল। এটা অনেক বেশি আনন্দময়। এটা সত্যিই বিশেষ কিছু।’ 

প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগ জেতা আর্জেন্টাইন তারকা এলেক্সিস ম্যাক এলিস্টারের জন্যও এ শিরোপা বিশেষ কিছু, ‘বিশ্বকাপ জিতেছিলাম, এখন জিতেছি প্রিমিয়ার লিগ। আমার জন্য সত্যই এটা বিশেষ কিছু। সতীর্থদের ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। আমাদের দলটি সত্যিই অসাধারণ।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালনের দাবি ট্রাম্পের
  • বাধ্যবাধকতা থাকায় ইশরাকের গেজেট প্রকাশ: ইসি
  • প্রাণের গানে সালাহর উৎসব
  • ‎আবু সাঈদ হত্যায় অভিযুক্তদের হলের সিট বাতিল
  • আবু সাঈদ হত্যায় অভিযুক্ত ৪ শিক্ষার্থীর আবাসিকতা বাতিল