বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাইলেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফি
Published: 12th, February 2025 GMT
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফি তাঁর বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও তাঁদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। আজ বুধবার দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রজপাড়া গ্রামে পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সরকারকে এ ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিচারের জন্য সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন।
নুরুজ্জামান কাফি তাঁর পুড়িয়ে দেওয়া ঘরের ধ্বংসস্তূপের সামনে বসে আক্ষেপ করে বলেন, ‘ঘরের বাইরে থেকে দরজা আটকে আমার মা–বাবা, ভাই-ভাতিজি সবাইকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল। আমি তো নতুন বাংলাদেশ গড়তে আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনে ছিলাম। অথচ আমার এখন পুরো ঘরটা নাই। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, সাত দিন টাইম। যারা জড়িত, তাদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। নইলে সাত দিন পরে রাজপথে একা দাঁড়াব।’
কাফি আবেগপ্রবণ হয়ে আরও বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি রেখে দুবার কান্না শুনেছি মা–বাবার। ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্টে পালিয়ে থাকা অবস্থায় একবার, আর গত রাতে বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পরে আরেকবার।’
নুরুজ্জামান কাফির বাবা রজপাড়া দ্বীন-ই-ইলাহী দাখিল মাদ্রাসায় সুপার হিসেবে কর্মরত। তাঁরা দুই ভাই। এ বিষয়ে নুরুজ্জামান কাফির বাবা এবিএম হাবিবুর রহমান বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে আমাদের ঘরটিতে দুর্বৃত্তরা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। যে যার মতো করে দরজা ভেঙে আমরা বের হয়েছি। কিছু রক্ষা করতে পারিনি, সব শেষ হয়ে গেছে। আমার ছেলে দেশ গড়ার কাজ করেছেন। এতে প্রতিপক্ষ শক্তি ক্ষুব্ধ হয়েছে। সে কারণে আমাদের পুড়ে মারার জন্যই এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমরা এ নাশকতার তদন্তপূর্বক বিচার চাই।’
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া দুইটার দিকে নুরুজ্জামান কাফির গ্রামের বাড়ি দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। কাফির বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার খবর শোনার পর কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কলাপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র হুমায়ুন সিকদারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ সময় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো.
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন সিকদার বলেন, ‘কাফির বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা নাশকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এর সঙ্গে জুলাই বিপ্লবে পরাজিত শক্তি জড়িত রয়েছে। যথাযথ তদন্ত করে এ ঘটনায় জড়িত অপশক্তিকে খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা অতি দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা দেখতে চাই। আশা করি, পুলিশ বিভাগ তাদের দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এ নাশকতার রহস্য বের করবে।’
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স কল প ড় র ঘটন ঘটন য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভাঙা বেড়িবাঁধ, আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় মাতারবাড়ীর চাষিরা
চলতি মৌসুমে আমন চাষ করার জন্য এক ব্যক্তির এক একর জমি ১৮ হাজার টাকায় ইজারা নেন কক্সবাজারের মহেশখালীর সাগর উপকূলীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়নের নয়াপাড়ার কৃষক জাকের হোছাইন। এই মাসের শেষের দিকে আমন চাষ শুরু করার কথা তাঁর। তবে সাগরে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে বর্ষায় ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কায় আমনের চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেবল জাকের হোছাইন নন, তাঁর মতো একইভাবে আমনের চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মাতারবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত ২০০ চাষি।
কুহেলিয়া নদীর পশ্চিমে আর বঙ্গোপসাগরের পূর্বে জেগে ওঠা প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার চর নিয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়ন। এর পশ্চিম পাশে রয়েছে আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, যার মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে এক দশক ধরে। ওই অংশ দিয়ে আশপাশের লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়া ঠেকাতে সর্বশেষ চার বছর আগে বসানো হয়েছিল জিও টিউব। তবে গত ২৯ ও ৩০ মে নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে জিও টিউব বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বেড়িবাঁধের ওই ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।সরওয়ার কামাল, সদস্য, মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদবেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি ইউনিয়নের ষাইটপাড়া এলাকায়। গত শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বেড়িবাঁধের পাশে বসানো জিও টিউব সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সাগরের পানি ঢেউয়ের সঙ্গে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ উপচে পাশের ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ছে। সেখানে স্থানীয় মাঝের ডেইল এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদেরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, বেড়িবাঁধের জিও টিউব বিলীন হওয়ার দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা খুবই উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমনচাষিরা চাষাবাদ করতে পারবেন কি না তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মানুষ তাঁদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা উচিত।
মাতারবাড়ী ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরুল হোছাইন মোহাম্মদ তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে ষাইটপাড়াসহ আশপাশের চারটি গ্রামে জলাবদ্ধতার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এসব এলাকার অন্তত ৮০ একর জমিতে আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সরওয়ার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।’ ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল আরও বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই এলাকার মানুষের উদ্বেগ বাড়ে। অথচ ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।
মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি নিম্নচাপের প্রভাবে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় অন্তত ১ হাজার ৬০০ মিটারের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি টেকানোর জন্য ভাঙা বেড়িবাঁধের ওপর জিও টিউব বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জামাল মুর্শিদ প্রথম আলোকে বলেন, মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নে স্থায়ী বাঁধের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চারপাশে ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার সুপার ডাইকের আদলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ ও ৭টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া খনন করা হবে সাড়ে ১৯ কিলোমিটার কুহেলিয়া নদী। গত এপ্রিলে প্রকল্প প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।