গাজা পুনর্গঠনে ৫৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ লাগবে: জাতিসংঘ
Published: 12th, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ধ্বংসযজ্ঞ কাটিয়ে ওঠা ও পুনর্গঠনের জন্য ৫৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থের প্রয়োজন পড়বে বলে অনুমান করেছে জাতিসংঘ। এই অর্থের মধ্যে প্রথম তিন বছরেই ২০ বিলিয়ন ডলার লাগবে।
তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলুর খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এই হিসাব উঠে এসেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “গাজা উপত্যকায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের চাহিদা ৫৩.
সংঘাতের ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালে গাজার অর্থনীতি ৮৩ শতাংশ ভেঙে পড়েছে, বেকারত্ব ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ২০২৪ সালে দারিদ্র্যতা বেড়ে ৭৪.৩ শতাংশ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা ২০২৩ সালের শেষে ৩৮.৮ শতাংশ ছিল।”
জাতিসংঘের মহাসচিব জোর দিয়ে বলেন, “যুদ্ধবিধ্বস্তা গাজা উপত্যকায় তাৎক্ষণিক মানবিক চাহিদা পূরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি বলেন, “তাৎক্ষণিক এবং স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগ হিসেবে, মানবিক সংকটের তীব্র মাত্রা মোকাবিলা করার জন্য জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা প্রদানের ওপর অব্যাহত মনোযোগ প্রয়োজন।”
প্রতিবেদনে দুটি মূল অগ্রাধিকারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে – শক্তিশালী বেসামরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সাহায্যের নিরাপদ ও বাধাহীন অ্যাকসেস নিশ্চিত করা।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, “গাজায় বেশিরভাগ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, প্রায় ১০ লাখ ১৩ হাজার মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র বা তাঁবুতে রয়েছে, যা পর্যাপ্ত সুরক্ষা প্রদান করে না। স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলো খুবই অপর্যাপ্ত।”
প্রতিবেদনে ডিসেম্বর ও জানুয়ারির শুরুতে হাইপোথার্মিয়ার কারণে গাজায় কমপক্ষে আট শিশুর মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে এবং গাজায় পূর্ণাঙ্গ শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রস্তুত করার জন্য আরো শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন গুতেরেস।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং অর্থনৈতিক সংস্কারেরও প্রয়োজন হবে, তবে সেগুলো অর্জনযোগ্য এবং যথাযথভাবে অর্থায়ন করা উচিত।”
জাতিসংঘের প্রধান জোর দিয়ে আরো বলেন, “গাজাকে অবশ্যই একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে থাকতে হবে, এর ভূখণ্ডে কোনো ধরনের দখলদারিত্ব ছাড়াই। অধিকৃত পশ্চিম তীরের সঙ্গে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ঐক্য বজায় রাখতে হবে।”
বিএইচ
উৎস: SunBD 24
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।