শেখ হাসিনা পালিয়েছে, অর্ধেক সংস্কার তো হয়ে গেছে: হাফিজ উদ্দিন আহমদ
Published: 12th, February 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা চলে গেছে, শেখ হাসিনা পালিয়েছে, সংস্কারের অর্ধেক তো হয়েই গেছে। বাকি যেসব সংস্কার নির্বাচন করতে প্রয়োজন, সেগুলো দু-তিন মাসের মধ্যেই করা যায়। আর যেসব দীর্ঘমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো করার প্রকৃত অধিকার রয়েছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের।’
খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাফিজ উদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন। নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। বিকেল ৫টা ২৮ মিনিটে তিনি বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন।
হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের অধিকার নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া আর কারও নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা দাবি করেছি, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। যেসব সংস্কারের কথা আকাশে–বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, বুদ্ধিজীবীরা ছড়াচ্ছেন, ছাত্রদের মুখ দিয়ে বলাচ্ছেন, সেসব সংস্কার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা করবে। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো একটি সুষ্ঠু–নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তর করা।’
বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। একে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হলে, জনজীবনে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করুন। যে পুলিশ বাহিনী ১৭টি বছর আওয়ামী বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। অনেক মায়ের বুক তারা খালি করেছে। অনেক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আমরা দেখেছি। অপরাধীরা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। শীর্ষ পদে দু-একজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে কিংবা সম্মানের সঙ্গে অবসর দেওয়া হয়েছে বা বদলি করা হয়েছে। কিন্তু তাদের দুষ্কর্মের বিচার তো হয়নি। এদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।’
উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘যে উপদেষ্টা পরিষদ তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) গঠন করেছেন, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শেখ হাসিনার দোসর ছিলেন। এর মধ্যে অনেকেই রাষ্ট্র পরিচালনায় একবারেই অনভিজ্ঞ। বাংলাদেশের জনগণ গিনিপিগ নয়। বাংলাদেশ ১৮ কোটি মানুষের দেশ। যুদ্ধ করে আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি, নানা ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য নয়। জনগণের বাস্তব দুঃখ-দুর্দশা ফেস করার অভিজ্ঞতা যাদের নেই, তারাই আজ বাংলাদেশের ভাগ্য–নিয়ন্ত্রক হয়ে বসে আছে।’
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু করেছে। ডেভিল বলতে আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকেই বুঝি। কালবিলম্ব না করে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দিন, সবাই সাধুবাদ জানাবে। জনগণ অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই শক্তিকে দৃশ্যমান করতে হবে। একজন (শেখ হাসিনা) ষড়যন্ত্র করে কাপড় নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এখন যাঁরা নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন, তাঁরা আগামী দিনে পালানোর পথ পাবেন না।’
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ছয় মাস গত হলেও সার্বিক পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি। আজও শাসনযন্ত্রে ফ্যাসিবাদের দোসররা বর্তমান। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফ্যাসিবাদের দোসরদের বসিয়ে আপনারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম করতে চাইবেন, আবার জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের স্পিরিটের কথা বলবেন; এটি দ্বিচারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত র ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।