অমর একুশের বইমেলার মেয়াদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি সময় পেরিয়ে গেল। কিন্তু এবার বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না প্রকাশকেরা। মেলার শুরুর দিন থেকেই লোকসমাগম ছিল প্রচুর। সে কারণে যথেষ্ট বিক্রি হবে, এমন আশা ছিল তাঁদের।
গতকাল মঙ্গলবারও মেলা চত্বরে নানা বয়সের লোকসমাগম প্রচুর দেখা গেল। পুরোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আহমদ পাবলিশিং হাউসের ব্যবস্থাপক শাহ আলম বললেন, মেলায় যত মানুষ আসে, তার শতকরা দুজনও বই কেনেন না। তা ছাড়া বিশেষ এক শ্রেণির পাঠক এবার মেলায় আসছেন না। ক্রেতার একটা বড় অংশ ছিলেন তাঁরা।
নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিনের আগে প্রকাশিত বই স্টলে রাখায় সোমবার সব্যসাচী প্রকাশনীর স্টলে বাগ্বিতণ্ডা ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। গতকাল স্টলটির ঝাঁপ বন্ধ দেখা গেছে। এ সম্পর্কে বাংলা একাডেমির সচিব ও বইমেলার টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক ড.
বেচাকেনা কম হলেও নতুন বই প্রকাশের কমতি নেই। গতকাল ৯১টি নতুন বইয়ের নাম এসেছে মেলার তথ্যকেন্দ্রে। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে বাঙ্গালা গবেষণা এনেছে আবুল কাসেম ফজলুল হকের প্রবন্ধ আধুনিকতাবাদ ও জীবনানন্দের জীবনোৎকণ্ঠা, মাওলা ব্রাদার্স এনেছে মশিউল আলমের সঞ্চায়ন ও অনুবাদে বিষয় দস্তইয়েফ্স্কি, প্রথমা এনেছে আবুল বাসারের বিজ্ঞানভিত্তিক বই আবিষ্কারের কাহিনি, ঐতিহ্য এনেছে আনোয়ারা সৈয়দ হকের আত্মজৈবনিক দহসী জীবন, চৈতন্য এনেছে পার্থ প্রতীম নাথের পরিবেশবিষয়ক প্রবন্ধ রাতারগুলের ছাতা, আহমদ পাবলিশিং হাউস এনেছে মাহমুদুর রহমানের মোগল সম্রাটদের নিয়ে ঐতিহাসিক উপন্যাস মোগলনামা, অভিযান এনেছে সঞ্জয় দেওয়ানের কবিতা জলের ক্যালিগ্রাফি, আগামী এনেছে ফরহাদ মজহারের কবিতা আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বিপ্লবের সামনে, অনুপম এনেছে মৃত্যুঞ্জয় রায়ের জীববিজ্ঞানবিষয়ক সুন্দরবনের প্রাণী বৈচিত্র্য, ময়ূরপঙ্খি এনেছে শিশুতোষ গল্প আমি সত্য কথা বলতে চাই, জাগৃতি এনেছে আফজাল হোসেনের উপন্যাস কারিন।
প্রথমার স্টলে কাল উপন্যাসের বিক্রি বেশি ছিল। ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন জানালেন, আসিফ নজরুলের বেকার দিনের প্রেম, বিশ্বজিৎ চৌধুরীর আশালতা, সুমন্ত আসলামের অর্ধেক তুমি অর্ধেক বনলতা সেন উপন্যাসসহ মঈনুস সুলতানের ভ্রমণ কাবুলের ক্যারাভান সরাই ও জাফর আলম অনূদিত মীর্জা গালিবের সিপাহী বিদ্রোহের রোজনামচা দস্তাম্বুও ভালো চলেছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয়েছে। সেই খসড়ায় বলা হয়েছে, দুই বছরের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনার বিরতিতে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা যেটা পেয়েছি, এটা জুলাই জাতীয় সনদ নামে একটা খসড়া পেয়েছি। সেটা ভূমিকা, বিস্তারিত বিষয়গুলো নেই। এই খসড়ার সঙ্গে আমরা মোটামুটি একমত। কিন্তু খসড়ার কিছু বাক্য, শব্দ ও গঠনপ্রণালি নিয়ে কারও কোনো মতামত আছে কি না, তা জানতে রাজনৈতিক দলগুলোকে খসড়াটি দিয়েছে কমিশন। আমাদের যে সংশোধনী থাকবে, আমরা তা কাল জমা দেব।’
খসড়ায় যে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে বিএনপি একমত বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, ‘খসড়ায় দুই বছরের ভেতরে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা একমত।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ আইনের মাধ্যমে করতে চাই। এতে আইনি ত্রুটি থাকলে সংশোধন সহজ হবে।’ তিনি বলেন, ‘কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সক্রিয় নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজন। তবে সেই নির্বাহী বিভাগকে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে রাখতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংবিধানে যত বেশি যুক্ত করা হবে, সংশোধন তত বেশি জটিল হয়ে পড়বে। তাই আমরা চাই, আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা হোক এবং সেই আইনে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন আনা সহজ হবে।’
নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রথম ধাপে প্রস্তাব করেছি, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫টি আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। পরবর্তী নির্বাচনে তা ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৩০টি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, নারীরা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হোক। কিন্তু সমাজের বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে চাই।’
সংস্কার কমিশনের ৭০০–এর বেশি সুপারিশ সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এর মধ্যে প্রায় ৬৫০টির মতো প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে পরামর্শ বা সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সব প্রস্তাব সনদে আসবে না। তবে যেগুলো মৌলিক, যেমন সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত, সেগুলো অবশ্যই গুরুত্ব পাবে।’