Samakal:
2025-06-16@02:36:49 GMT

জাতিসংঘ প্রতিবেদন আমলে লউন

Published: 13th, February 2025 GMT

জাতিসংঘ প্রতিবেদন আমলে লউন

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমাইতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেইভাবে সরাসরি বল প্রয়োগের নির্দেশ দিয়াছিলেন, উহা ছিল নজিরবিহীন। তাঁহার ক্ষমতা টিকাইবার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই নির্দেশ প্রতিপালনের পরিণতিতেই ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনা ঘটে; যেইগুলি ইতোমধ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশিত।

মঙ্গলবার প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনেও উহার স্বীকৃতি মিলিবার বিষয়টি অধিকতর তাৎপর্যপূর্ণ বলিয়া আমরা মনে করি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে স্পষ্ট– বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে মারণাস্ত্র দিয়া গুলি চালানো, গ্রেপ্তার, আটক, নির্যাতন, চিকিৎসাপ্রাপ্তির অধিকার কাড়িয়া লইবার ন্যায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করিয়াছে আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জাতিসংঘ সংগত কারণেই ইহাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলিয়াছে।

বস্তুত গত বৎসরের জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার শুরু হইতেই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে অনুসন্ধানের দাবি উঠিয়াছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল আসিয়া তদনুযায়ী অনুসন্ধান করে এবং ছয় মাস পর হইলেও সংস্থাটি যেই প্রতিবেদন প্রকাশ করিয়াছে, উহাকে আমরা স্বাগত জানাই।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা, তৎসহিত তাঁহার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে আসাদুজ্জামান খান কামালকেও দায়ী করা হইয়াছে। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী লইয়া জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের স্মরণে রহিয়াছে, আওয়ামী লীগের সময়েই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‍্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছিল যুক্তরাষ্ট্র। এতদ্ব্যতীত পুলিশ যেইভাবে বিগত সরকারের ‘দলীয়’ বাহিনীর ন্যায় বিরোধীদের দমন এবং জুলাই-আগস্টে যেইরূপে বল প্রয়োগ করিয়াছিল, তাহার পরিণতিতেই সংস্থাটির শীর্ষ নেতৃত্বের অনেককে গা-ঢাকা দিতে হইয়াছে। র‍্যাব-পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর আচরণের কতটা পরিবর্তন হইয়াছে, উহাও প্রশ্নসাপেক্ষ। যদিও সরকার তাহাদের সংস্কারে কমিশন গঠন করিয়াছে এবং ইতোমধ্যে প্রতিবেদনও প্রকাশ পাইয়াছে। কিন্তু জাতিসংঘ ইহাও উল্লেখ করিয়াছে, পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হইলেও কেবল পুলিশের ব্যাপারেই অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা লইয়াছে।

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে জাতিসংঘের প্রতিবেদনেই চৌদ্দশত মানুষ নিহত হইবার বিষয়টি আসিয়াছে; যথায় তাহারা উল্লেখ করিয়াছে, অধিকাংশই বিভিন্ন বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারাইয়াছে। এমনকি শিশুরাও তাহাদের হস্ত হইতে নিষ্কৃতি পায় নাই; আন্দোলনের প্রারম্ভে নারীরা আক্রান্ত হইবার বিষয়েও জাতিসংঘের প্রতিবেদন তাৎপর্যপূর্ণ। জাতিসংঘ ও বিশ্বের অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ আমলে লইয়া মানবতাবিরোধী এই সকল অপরাধের বিচার জরুরি হইলেও সেই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট নহে বলিয়াই প্রতীয়মান। বিশেষত তাহাদের ক্ষমতা গ্রহণের পর যেইভাবে গড়পড়তা মামলা হইয়াছিল, উহাতে যদ্রূপ নিরপরাধ মানুষের হয়রানির উপলক্ষ রহিয়াছে, তদ্রূপ অপরাধীর পার পাইবার শঙ্কাও তৈয়ার হইয়াছে। বিশেষ করিয়া জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে যাহারা শহীদ এবং আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছেন, তাহাদের ন্যায়বিচারের স্বার্থেই অপরাধীদের বিচার করিতে হইবে।

অধিকতর উদ্বেগের বিষয়, জাতিসংঘ প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, সরকারের পরিবর্তন হইলেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তৎসহিত নিয়মিত আদালতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সহিত জড়িত বিগত সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করিবার উদ্যোগ প্রশংসনীয় হইলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগের বিদ্যমান কাঠামোগত ত্রুটির কারণে সরকারের এই সকল প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হইবার যেই আশঙ্কা জাতিসংঘ করিয়াছে, উহা অমূলক নহে।

আমরা বিশ্বাস করি, জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি যদ্রূপ বিচারের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য পথপ্রদর্শক হইবে, তদ্রূপ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও শিক্ষা গ্রহণ করিবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই আগস ট সরক র র কর য় ছ অপর ধ হইয় ছ হইল ও

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেল কক্ষে তল্লাশি, সমালোচনা 
  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচনের জন‌্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • গাজীপুরে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কারখানার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর, আটক ৪৩
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • বিএনপি ও গণ অধিকারের মধ্যে উত্তেজনার জেরে পটুয়াখালীর ২ উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি
  • দীর্ঘ ছুটি শেষে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ফিরছে মানুষ