মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদের প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদারের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তিনি মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভের আয়োজন করেন। এতে বদিউজ্জামান দিদারের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার ও তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রোকনুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির পরিচালক আনিসুর রহমান, কর্মকর্তাদের সংগঠন সবুজ দলের সভাপতি মিজানুর রহমান আকন, হামলায় আহত পরিচালক বদিউজ্জামান দিদার, অতিরিক্ত পরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তী, জিয়া পরিষদের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস ও যুগ্ম পরিচালক সাহেদুল ইসলাম।

সমাবেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় নগদে দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিযুক্ত প্রশাসক কঠোর পরিশ্রম করে সেই দুর্নীতির মূল হোতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আর এ কারণেই তাঁর ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। যাঁরা এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা ব্যাংকের ভেতরের বা বাইরের যে–ই হোন, তাঁদের বিচার চাই।’

কর্মকর্তাদের সংগঠন সবুজ দলের সভাপতি মিজানুর রহমান আকন বলেন, নগদের দুর্নীতি তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কাজে বাধা দিতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনা কোনো ব্যক্তিবিশেষের ওপর হামলা নয়; বরং এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ।

জিয়া পরিষদের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, যেসব কর্মকর্তা ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদের জন্য ঝুঁকির ভাতা চালু করতে হবে এবং দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভুক্তভোগী পরিচালক বদিউজ্জামান দিদার বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছিলাম। বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও শুধু সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগকে জানালে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। যার ফলে আমি হামলার শিকার হয়েছি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’

এদিকে আজ দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল মতিঝিল শাপলা চত্বরে মানববন্ধন করে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। সরকারের পক্ষ থেকে অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানায় সংগঠনটি। পাশাপাশি দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কার–সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিশেষ নিরাপত্তা প্রদানের দাবি জানানো হয়।

নগদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিযুক্ত প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদারের ওপর গতকাল বুধবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকেলে রাজধানীর বনানী–১২ নম্বর সড়কে তাঁর ওপর হামলা হয়। এতে তিনি আহত হন। হামলাকারীরা হাতুড়ি দিয়ে তাঁর গাড়িও ভাঙচুর করে। হামলায় তাঁর গাড়িচালক গুরুতর আহত হন।

এর আগে গতকাল সকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক রুহুল হক ও তানজির আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল নগদে অভিযান পরিচালনা করে। তখন নগদের প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে নগদের ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা পাচার ও ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি তৈরিসংক্রান্ত অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুদক টিম এ-সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করেছে। তারা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখবে।

৩ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত ৬৪৫ কোটি টাকার ইলেকট্রনিক মানি (ই-মানি) তৈরির অভিযোগে নগদের সঙ্গে যুক্ত ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ মামলায় সরকারের ডাক বিভাগের আট সাবেক ও বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি), নগদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তানভীর আহমেদ মিশুককে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক সরকার আমির খসরু বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন (নম্বর ২)। মামলায় অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক মানি বা ই-মানি তৈরি ও নথিপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে ৬৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ দ র র ওপর র রহম ন নগদ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত ও নিপীড়ন বন্ধের দাবি সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের

গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষা, ন্যায্য মজুরি, অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত ও শ্রমিক নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে সমাবেশ ও মিছিল করেছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট। একই সঙ্গে তারা বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তারকৃত শ্রমিকনেতাদের মুক্তির দাবিও জানায়।

মে দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জুলফিকার আলী, আইনবিষয়ক সম্পাদক বিমল চন্দ্র সাহা, নির্বাহী সদস্য আফজাল হোসেন, নির্বাহী সদস্য ও বোম্বে সুইটস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রতন মিয়া প্রমুখ।

সমাবেশে নেতারা বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন করার চেষ্টার অপরাধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দিয়ে গার্মেন্টস উইংয়ের সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, রবিনটেক্স শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সীমা আক্তারসহ ৭ জনকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে এবং রিকশা শ্রমিকদের রুটি–রুজির আন্দোলনে সংহতি জানানোর অপরাধে চট্টগ্রামে রিকশা সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি আল কাদেরি জয়, মিরাজ উদ্দিন ও রোকন উদ্দিনকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। অথচ সরকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তারা শ্রমক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রমমান বাস্তবায়ন করবে।

এ সময় নেতারা শ্রম সম্পর্ক উন্নয়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হচ্ছে কি না, তা জানতে চান। তাঁরা বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার অধিকার চর্চায় বাধা দেওয়া বন্ধ না হলে, শ্রমিকের ওপর নিপীড়ন বন্ধ না হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র পরিচালনা বা বৈষম্য নিরসনের প্রতিশ্রুতি শ্রমজীবী মানুষের কাছে প্রতারণা হিসেবে পরিগণিত হবে।

মে দিবসের ইতিহাস তুলে ধরে নেতারা আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও দেশের শ্রমজীবী মানুষের ৮৫ শতাংশ শ্রম আইনের সুরক্ষার বাইরে। শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শ্রম খাতের দুর্দশার যে ভয়ানক চিত্র ফুটে উঠেছে, তা প্রমাণ করে স্বাধীনতা–পরবতী প্রতিটি সরকার শ্রম শোষণকে তীব্র থেকে তীব্রতর করার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।

এ সময় গ্রেপ্তার সব শ্রমিকের মুক্তি, শ্রমিক নিপীড়ন বন্ধ এবং মে দিবসের প্রকৃত চেতনায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ