চুক্তি মেনে জিম্মি মুক্তিতে রাজি হামাস
Published: 13th, February 2025 GMT
মধ্যস্থতাকারীদের দৌড়ঝাঁপের পর যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি মেনে আগামী শনিবার তিন ইসরায়েলি নাগরিককে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। আজ বৃহস্পতিবার হামাসের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ইসরায়েলও চুক্তি মেনে গাজায় তাঁবু, জেনারেটরসহ মানবিক ত্রাণসহায়তা প্রবেশে বাধা না দিতে সম্মত হয়েছে।
গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীন শনিবার আরও তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা। তবে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে অভিযোগ এনে গত সোমবার অনির্দিষ্টকালের জন্য জিম্মি মুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয় হামাস।
হামাসের এ ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, শনিবার দুপুরের মধ্যে হামাস সব জিম্মিকে মুক্তি না দিলে গাজায় ‘নরক নেমে আসবে’। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস যদি জিম্মি মুক্তির সময়সীমা মেনে না চলে, ‘তীব্র লড়াই’ শুরু করবে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি গাজার ভেতরে ও আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীকে জড়ো হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পরই গাজা সীমান্তবর্তী ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতিরিক্ত সেনা পাঠানো ও রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
গাজায় প্রায় ১৫ মাসের ধ্বংসযজ্ঞের পর ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। প্রথম ধাপে ৪২ দিন এই যুদ্ধবিরতি চলার কথা। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে অন্যতম মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর ও কাতার। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে দেশ দুটি।
হামাসের মুখপাত্র আবদেল লতিফ কানৌ বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে আগ্রহী। দখলদারেরও (ইসরায়েল) চুক্তির শর্ত পুরোপুরি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নে, মানবিক সহায়তা–সংক্রান্ত শর্ত মানতে তাদের (ইসরায়েল) চাপ দিচ্ছে মধ্যস্থতাকারীরা। শনিবার বন্দিবিনিময়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
ফিলিস্তিনি একটি সূত্র বলেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মানবিক সহায়তা–সম্পর্কিত শর্ত মেনে চলার বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ‘প্রতিশ্রুতি’ পেয়েছে মধ্যস্থতাকারীরা।
আরও পড়ুনশনিবারের মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি না দিলে যুদ্ধবিরতি বাতিল, ইসরায়েলের হুঁশিয়ারি১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫মিসরের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, রাফাহ ক্রসিংয়ে বুলডোজার ও ভ্রাম্যমাণ ঘর বহনকারী ট্রাকসহ নির্মাণসামগ্রীবাহী গাড়িবহর মিসর থেকে গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখপাত্র ওমের দোসত্রি বলেছেন, রাফাহ ক্রসিং হয়ে গাজায় ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘গাজায় কোনো ধরনের ভ্রাম্যমাণ ঘর বা ভারী যন্ত্রপাতি ঢুকতে দেওয়া হবে না। এ নিয়ে কোনো সমন্বয় হয়নি। কেবল আহত ও অসুস্থ ব্যক্তিদের সরিয়ে নিতে রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়া হয়েছে। গাজায় অন্য সব সহায়তা প্রবেশ করবে কারেম সালেম ক্রসিং হয়ে।’
যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তির অধীন এখন পর্যন্ত ১৬ ইসরায়েলিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। এ ছাড়া নিজেদের উদ্যোগে পাঁচ থাই নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে সংগঠনটি। বিনিময়ে কয়েক শ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ৩৩ ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।
পশ্চিম তীরে বাস্তুচ্যুত ৪৫ হাজারআল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে বড় ধরনের অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ২১ জানুয়ারি প্রথমে জেনিন শরণার্থীশিবিরে ‘আয়রন ওয়াল’ নামে এ অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এরপর আরও কয়েকটি শহরে এ অভিযান বিস্তৃত করা হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, দখলকৃত পশ্চিম তীরের উত্তরাংশে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে ৪৫ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই অভিযান বন্ধে ইসরায়েলের ওপর কঠোর বৈশ্বিক চাপ প্রয়োগেরও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
এদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, পশ্চিম তীরের উত্তরাংশে তিন সপ্তাহ ধরে চলা এই অভিযানে ৬০ ‘সন্ত্রাসীকে’ হত্যা করা হয়েছে। ২১০ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভবনসহ ৩০টি ‘সন্ত্রাসী স্থাপনা’ ধ্বংস করা হয়েছে। ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী আরও জানিয়েছে, নুর শামস শরণার্থীশিবিরে গতকাল বুধবার মুখোমুখি লড়াইয়ে খুব কাছ থেকে তিন ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা।
ফিলিস্তিন প্রিজনার্স সোসাইটি (পিপিএস) এক প্রতিবেদনে বলেছে, আয়রন ওয়াল অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ৩৮০ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। জেনিন, তুলকারেম ও তুবাস এলাকা থেকে বেশির ভাগ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুনচতুর্থ দফায় ৩ ইসরায়েলি ও ১৮৩ ফিলিস্তিনি মুক্ত ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র প
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় দফা দাবিতে ‘আমরা ভোলাবাসী’র আন্দোলন ‘সরকারি আশ্বাসে’ স্থগিত
ভোলায় গ্যাস ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবিতে চলমান ছয় দফা আন্দোলন স্থগিত করেছে ‘আমরা ভোলাবাসী’। সরকারি আশ্বাসের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন নেতারা।
সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও আমরা ভোলাবাসীর জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সদস্য রাইসুল আলম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. এনামুল হক, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মোতাসিন বিল্লাহ, ভোলা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী, ভোলা আলিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মোবাশ্বিরুল হক নাঈম, ইসলামী আন্দোলনের ভোলা উত্তর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তরিকুল ইসলাম, ভোলা সদর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. কামাল হোসেন ও আমরা ভোলাবাসীর সদস্যসচিব মীর মোশাররফ হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ভোলার গ্যাস স্থানীয়ভাবে ব্যবহারের দাবিসহ ছয় দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে দাবি আদায়ে অগ্রগতি হয়েছে।
আমরা ভোলাবাসীর দাবির মধ্যে রয়েছে, ভোলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন, বিদ্যমান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার সুবিধা নিশ্চিত করা, ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণ, ঘরে ঘরে গ্যাস সরবরাহ, গ্যাসভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন ও নদীভাঙন প্রতিরোধ।
সংগঠনটি জানায়, আন্দোলনের আগে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে মাত্র আট চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ জন। আরও চিকিৎসক, নার্স ও যন্ত্রপাতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। মেডিকেল কলেজ স্থাপনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে নতুন মেডিকেল কলেজ হলে, সেটি ভোলায় হবে। ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রেও ফিজিবিলিটি স্টাডি ও নকশা সম্পন্ন হয়েছে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
সার কারখানা ও ইপিজেড স্থাপনের জন্য জমি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নেতারা। গ্যাস–সংযোগের বিষয়ে জানানো হয়, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানিকে ডিমান্ড নোট জমা দেওয়া ২ হাজার ১৪৫ গ্রাহককে গ্যাস–সংযোগ দেওয়া হবে এবং ন্যায্যমূল্যে ২০ হাজার সিলিন্ডার বিতরণ করা হবে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে আবার কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।