প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গানের রিমেক নেই, করা যাবেও না: কবীর সুমন
Published: 15th, February 2025 GMT
বরেণ্য গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় বেশ কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা গেছেন। ৮৩ বছর বয়সী এই সংগীতশিল্পীর প্রয়াণে শোক নেমে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ তথা বাংলা ভাষাভাষী দুই দেশের মানুষের মাঝে। তার চলে যাওয়া নিয়ে শোকে মুহ্যমান সংগীতাঙ্গনের সবাই।
তার সৃষ্টিকর্মকে স্মরণ করে আবেগতাড়িত হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র, কবীর সুমন, নাট্যকার ও চিত্রসাংবাদিক অশোক মজুমদারসহ অনেকেই।
প্রতুল মুখোপাধ্যায় স্মরণে নাট্যকার ও পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ শিক্ষা ও বিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, প্রতুলদা বাংলা গানের কাছে, বাঙালির কাছে অমর। প্রতুলদার থিওরি ছিল, কোনো মিউজিক্যাল বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই তিনি দিব্যি গান গাইতেন। প্রতুলদাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করায়, তিনি বলেছিলেন- পাখি তো গান গায়, তার কি কোনো বাদ্যযন্ত্র লাগে? কোনো মিউজিশিয়ান লাগে? তবে বড় আক্ষেপ, একুশে ফেব্রুয়ারিতে আর তার কণ্ঠ শোনা যাবে না।
নাট্যকার ও চিত্রসাংবাদিক অশোক মজুমদার প্রিয় শিল্পীর প্রয়াণে বাকরুদ্ধ। তিনি বলেন, প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে যারা চেনেন তারা জানেন যে উনি আদতে একজন গানভোলা মানুষ। গানই তার জীবন। তাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েও চিকিৎসা নিয়ে কোনোই মাথাব্যথা নেই। শুধু গান গাইতে পারলেই খুশি। জুনিয়র ডাক্তার, নার্স এমনকি সিনিয়র ডাক্তার, স্পেশালিস্ট সবাই প্রতুলদার কাছে গান শোনার আবদার করতেন। আমরাও অন্যসময় তাই করতাম। সবসময় তিনি বলতেন, আমি তো গানটা নিয়েই বাঁচি। আর কিছু পারি না। গাইতে পারলেই আমার চলে যাবে।
সোশাল মিডিয়ায় লোপামুদ্রা মিত্র লিখেছেন, যাদের জন্য আমি বাংলায় গান গাই, তাদের মধ্যে প্রতুলদা একজন। গান তার নেশা ছিল। নিজের মতো গান গেয়ে যেতেন। প্রচার নিয়ে ভাবতেন না। প্রচারবিমুখ ছিলেন বরাবরই। এজন্য তাকে হিংসা হতো।
তিনি আরও বলেন, প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ১৯৯৩ সাল থেকে পরিচয় লোপামুদ্রার। ১৯৯৩ সালের বইমেলায় তার সঙ্গে প্রথম কথা হয়েছিল। বইমেলায় খালি গলায় গানের আসর বসত। সেই অনুষ্ঠানে সুমন-নচিকেতা-অঞ্জনও ছিলেন। তিনি নিজে কবিতায় সুর দিয়ে গান তৈরি করতেন। সব মিলিয়ে আমার কাছে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন তিনি।
তার খালি গলার গান প্রসঙ্গে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কবীর সুমন বলেন, খুব ভুগছিলেন প্রতুলদা। তিনি শান্তি পেলেন। তিনি ছিলেন একজন আনপ্যারালাল পারফর্মার। এমন কিছু কবিতায় তিনি সুর দিয়েছেন যেমন বাবরের প্রার্থনা, যেগুলো প্রতুলদা ছাড়া অন্য কেউ ভাবতে পারবেন না। তার সঙ্গে একটি দুটি অনুষ্ঠানে আমি কিবোর্ডও বাজিয়েছি। সে বহুদিন আগের কথা। অনেকে হয়ত জানেনও না। তিনি খালি গলাতেও সুরে গাইতেন। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গানের কোনও রিমেক নেই। করা যাবেও না। ‘ছোকরা চাঁদ’ গানটার কথা মনে করে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। ওটাও কবিতা থেকেই করা।
প্রসঙ্গত, ১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে জন্ম প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের। বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। মা বাণী মুখোপাধ্যায় ও প্রতুলকে নিয়ে দেশভাগের পর তিনি ওপার বাংলায় চলে যান। থাকতে শুরু করে চুঁচুড়ায়। অল্প বয়স থেকে কবিতায় সুর দিতেন প্রতুল। কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতা দিয়ে শুরু।
প্রতুল নিজেও গান লিখতেন, অথচ প্রথাগত সংগীতশিক্ষা ছিল না। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও চিকিৎসকদের ‘আমি বাংলায় গান গাই’ শোনান তিনি। তবে এই একটিই নয়, প্রতুল অনেক জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা।
তার প্রথম অ্যালবাম ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’ (১৯৮৮)। তবে সেটি একক অ্যালবাম নয়। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ‘যেতে হবে’ প্রতুলের প্রথম একক অ্যালবাম, আর শেষ অ্যালবাম ‘ভোর’ (২০২২)। এই অ্যালবামে সংকলিত হয়েছে তাঁর অপ্রকাশিত গানগুলো।
‘আমি বাংলায় গান গাই’ ছাড়াও তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘আলু বেচো’, ‘ছোকরা চাঁদ’, ‘তোমার কি কোনো তুলনা হয়’, ‘সেই মেয়েটি’, ‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ’ ইত্যাদি। নিজের গানে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার কখনোই পছন্দ করেননি তিনি। কিন্তু তাঁর গাওয়া গান মগ্ন করে রাখত শ্রোতাকে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জনপ র য়
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।গত মঙ্গলবার এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দিুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে।
এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দু’জন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগনি। দোলার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগীর পেশায় ব্যবসায়ী।
সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী।
এ বিষয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজে এর একটা ব্যাখ্যা রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আমি ১০ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করছি। নো মেট্রো অন ডিইউ মুভমেন্ট, রামপাল বিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করাসহ অন্যান্য সকল আন্দোলনে আমি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যতম মামলা তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার এনসিপি কমিটি গঠনে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কিভাবে আমাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।’
সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, ‘আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভাল হতো। যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’