শাসন-প্রশাসন কিছুই মানছে না অবাধ্য বালুখেকো চক্র
Published: 15th, February 2025 GMT
পরিবেশ অধিদপ্তর ও তা রক্ষায় নিরন্তর কাজ করে যাওয়া পরিবেশবাদীদের কথা তো দূরে, প্রশাসনের শাসন ও বারণও মানছে না বালুখেকোরা। লাগামহীন চলছে তাদের কুশিয়ারার বুক খুবলে খাওয়া।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলাসংলগ্ন কুশিয়ারা নদী থেকে নিয়মিতভাবে তোলা হচ্ছে মাটি-বালু। প্রশাসনের নানা উদ্যোগেও দমানো যাচ্ছে না বালুখেকো চক্রকে। বিগত সরকারের সময় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব চক্র চালানো হতো বলে জেনে গেছে। সে ক্ষেত্রে স্থানীয়দের প্রশ্ন, কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় না থাকা অবস্থায় এই চক্র চলছে কীসের বলে? আগেও প্রশাসন এসব কাজের মূল হোতাদের নাগাল পেত না, এখনও পায় না।
কুশিয়ারা থেকে অব্যাহত এই বালু উত্তোলনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। নদ-নদী থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বলছে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। কেন এই চক্রের কাছে প্রশাসন, আইন, সিস্টেম এত শক্তিহীন হয়ে গেল তা খুঁজে দেখা প্রয়োজন।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের ১১ জনের বিরুদ্ধে জগন্নাথপুর থানায় মামলা হয়েছে। নবীগঞ্জ থানায় এর আগেও বহুবার এমন মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রের সঙ্গে হলেও কুশিয়ারা নদীতে বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন। কয়েক বছর ধরে কুশিয়ারা ও এর তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে অনুমোদন ছাড়াই বালু উত্তোলন চলছে। এতে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে নদীর ভাঙন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়ায় এ বালু লুটের কার্যক্রম চলে। যখন যে আসে, সে-ই এ ছায়ায় চলে যায়। তারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও স্থানীয়রা বিরোধিতা করলেও দমানো যাচ্ছে না চক্রটিকে। এদিকে নদীভাঙনে বিপর্যস্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফরিদুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কুশিয়ারা থেকে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। এর পরও প্রতিদিন শতাধিক ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করা এ চক্রটি নদী ধ্বংস করছে। প্রতিবছরই নদীভাঙনের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যক্তিস্বার্থে বালু উত্তোলনে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। অবৈধ এ বালু উত্তোলন বন্ধে নৌপরিবহন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নবীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত কুশিয়ারা নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ড্রেজার ও লম্বা পাইপ ব্যবহার করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। দুর্গাপুর এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম মিয়া জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় এসব মেশিন ও ড্রেজার স্থাপন করা হয়। এরপর নিজেদের ইচ্ছেমতো বালু উত্তোলন করে চক্রের সদস্যরা।
শফিক মিয়া জানান, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীতীরবর্তী বাড়িঘর, রাস্তা, জমিসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আখতার জানান, কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বিভিন্ন নদী থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এই চক্রকে থামাতে বেলা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। নবীগঞ্জ এলাকার কুশিয়ারা নদীর বিষয়টি দেখা হচ্ছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের ঘটনা অনুসন্ধানে বেলার অনুসন্ধানী দল নদীতীরবর্তী এলাকা পরিদর্শনে সত্যতা খুঁজে পেয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও হবিগঞ্জ বাপার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, অননুমোদিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীগুলোর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে, নদীর দুই পার ভেঙে পড়ছে। এতে নদীর পারসংলগ্ন কৃষিজমিসহ সবকিছুই হুমকির সম্মুখীন।
খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর উপপরিচালক মামুনুর রশিদ জানান, বিদ্যমান খনি ও খনিজসম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২সহ অন্যান্য আইন অনুযায়ী অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। বিষয়টি আরও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর হবিগঞ্জের উপপরিচালক আকতারুজ্জামান জানান, তিনি এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে এখনই পারবেন না। ফাইলপত্র দেখে বলতে হবে। বালু উত্তোলনে পরিবেশ আইন মেনে বালু তোলার কথা। ১৭৭টি ফাইল আছে। এর মধ্যে কুশিয়ারা নদীর ফাইল আছে কিনা জানি না। এখানে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই। এটি জেলা প্রশাসক ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। কেউ যদি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র চায়, সে ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক আবু সালেহ কাইয়ুম জানান, বালু তোলার জন্য তারা একটি এন্টারপ্রাইজকে শুধু অনুমতি দিয়েছেন। তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেবেন। অন্য কেউ সেখান থেকে বালু তোলার কথা নয়।
এ ব্যাপারে কথা বলতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে পাল্টা আঘাতের মাত্রা ক্রমাগত বাড়িয়ে দিয়ে যেন জবাব দিচ্ছে মানুষের শোষণ আর নিপীড়নে জর্জরিত কুশিয়ারা নদী। অপরিকল্পিতভাবে মাটি ও বালু উত্তোলনে অস্তিত্ব সংকটে পড়া নদীটি নিজের সঙ্গে ধ্বংসের পথে নিয়ে চলেছে দুই কূলের বসতি, স্থাপনা, ফসলি জমিসহ সবকিছুই।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজায় অরাজকতা রোধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান মহিলা পরিষদের
প্রতিবছর বাঙালি হিন্দুদের সর্বজনীন দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে নানা সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটে। আসন্ন দুর্গাপূজায় যেন কোনো ধরনের অরাজকতা না ঘটে, সে জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। ‘বৈচিত্র্যকে সম্মান করি, সাম্প্রদায়িকতা পরিহার করি, সম্প্রীতি বজায় রাখি’ শিরোনামে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ঢাকার পাশাপাশি দেশের সব জেলায় একযোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, সহসভাপতি মাখদুমা নার্গিস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদা রেহানা বেগম, আন্দোলন উপপরিষদ সম্পাদক রাবেয়া খাতুন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও আন্দোলন উপপরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা দাশ পুরকায়স্থ বক্তব্য দেন। মহিলা পরিষদের প্রোগ্রাম অফিসার নুরুননাহার তানিয়া মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবার জন্য সমতা, ন্যায়বিচার নিশ্চিতের মাধ্যমে মর্যাদাকে সর্বাগ্রে স্থান দেওয়া হয়েছে। এ দেশে নানা জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও সংস্কৃতির লোকের বসবাস। সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাষ্ট্রের পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠন ও সুশীল সমাজকে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা আরও কার্যকর হওয়া আবশ্যক। রাষ্ট্রকাঠামো এমন হওয়া উচিত, যাতে সবাই মিলে নিজ নিজ উৎসব নির্বিঘ্নে পালন করতে পারে।’