তাদের সবাই পেছনে ফেলে এসেছেন জীবনের সোনালি দিন। কর্মময় জীবন বার্ধক্যের অবসরে হয়ে পড়েছে একঘেয়ে। পাশের গ্রামে বাড়ি হলেও দেখা হয় ৬ মাসে-৯ মাসে। তরুণ-যুবাদের আয়োজনে ‘মুরব্বিদের মিলনমেলা’ বছরে একদিন তাদের এক শামিয়ানার নিচে আসার সুযোগ হয়। সেখানেই সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার আলাপ হয় চেনাজনের সঙ্গে; অচেনা সমবয়সী মানুষের সঙ্গে আলাপ হয়
সংসার-সংকটের।
মেহেরপুর সদরের কুতুবপুর ইউনিয়নের কুলবাড়িয়া গ্রামের ঈদগাহে শুক্রবার নানা বয়সী প্রায় ৮০০ প্রবীণ সমবেত হয়েছিলেন। তাদের জন্য আয়োজনটি করেছেন ওই গ্রামের তরুণ-যুবা কিছু সংগঠক। দই-চিড়া, মিষ্টি-কলায় সকালের নাশতার মধ্য দিয়ে দিনের আড্ডা জমে ওঠে। বেলা গড়াতে গড়াতে দুপুর হলে শুরু হয় মধ্যাহ্ন ভোজনের। সেখানে সাদা ভাতের সঙ্গে ছিল খাসির মাংস, ডাল-ভাজি ও সবজি। বিশ্বজুড়ে সেন্ট ভ্যালেনটাইনস ডে হিসেবে পরিচিত ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে রূপ নিয়েছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে। এই দিবসে উপজেলার ৪৫টি গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের মধ্যে ভালোবাসা পৌঁছে দেওয়ার অংশ হিসেবে ‘মুরব্বিদের মিলনমেলা’র আয়োজন বলে জানিয়েছেন সংগঠকরা। তাদের আয়োজনে আপ্লুত অংশ নেওয়া প্রবীণ ব্যক্তিরা।
১১ বছর ধরে এমন আয়োজন চলছে কুলবাড়িয়া ঈদগাহে। সাত-আট বছর ধরে এখানে আসছেন পাশের কাথলী ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া গ্রামের হাফিজুর রহমান। বিমানবাহিনীর এই অবসরপ্রাপ্ত সদস্যের বয়স এখন ৭০ ছুঁইছুঁই। মিলনমেলায় এসে তাঁর খুশি আর ধরে না। হাফিজুর রহমান বলেন, অনেক মুরব্বির সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে, কোলাকুলি করে আনন্দ পেয়েছি। গ্রামে গ্রামে যেন যুবকরা এমন আয়োজন করে– সেই আহ্বান জানান তিনি।
একসঙ্গে সমবয়সী বা বেশি বয়সী এত মানুষের দেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার বলে মনে করেন গাড়াবাড়িয়ার আরেক বাসিন্দা ওবাইদুল ইসলাম (৬২)। পেশায় তিনি বীমাকর্মী। তরুণ-যুবাদের নিয়ে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এখন তো সবাই সারাক্ষণ মোবাইল ফোনেই ডুবে থাকে। আগের মতো
মাঠ-ঘাটে খেলাধুলা নেই। প্রবীণ কারও সঙ্গে কথাই বলতে চায় না। সালাম বিনিময়ও যেন উঠে গেছে। এমন সময়ে কুলবাড়িয়ার যুবকরা তাদের
মতো প্রবীণদের ভালোবাসার অন্যরকম দিন
উপহার দিয়েছেন।
মেহেরপুর ছহিউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রেজা এ আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা। তাঁর ভাষ্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতায় আহ্বান জানিয়েছিলেন, ‘ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা/ ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ/ আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।’ যারা মাচায় ঝিমান, ঠিকমতো চলতে পারেন না, তাদের প্রতিটা মুহূর্ত গ্রাস করছে বার্ধক্য। তারা এই সময়ে পৌঁছে পরিবার বা সামাজিকভাবে ভালোবাসার আবহ পেতে চান। এভাবেই বেঁচে থাকার অবলম্বন খোঁজেন।
মিলনমেলার প্রধান উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের মা-বাবার প্রতি সম্মান জানাতেই তাদের সমবয়সীদের একত্র করে থাকি। ৪৫টি গ্রামের মুরব্বি সমবয়সী ব্যক্তিদের সঙ্গে এখানে আড্ডায় মেতে ওঠেন। গ্রামেরই কিছু উদ্যোগী মানুষ এ মিলনমেলার পেছনে আছেন। অনুষ্ঠানে ষাটোর্ধ্ব মানুষদেরই দাওয়াত করা হয়।’ এক শামিয়ানার নিচে এনে ভালোবাসা দিবসের উপহার দেওয়ার চেষ্টা থেকেই এমন আয়োজন।
বেশ কয়েক বছর ধরে এ আয়োজনে অংশ নিয়ে আসছেন মেহেরপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড.
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে কুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক আবু তাহের বলেন, অহরহ খবরে আসে, শোনা যায়– বৃদ্ধ বাবা-মাকে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে, বয়স্কনিবাসে রেখে এসেছে, লাশ নিতে অপারগতা প্রকাশ করছে সন্তানরা। মনে হয় বৃদ্ধ বাবা-মা তাদের একটু সহানুভূতি, আদর-ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন। ভালোবাসা প্রকাশের ধরন বিচিত্র। একেকজনের কাছে একেক রকম। এই ভালোবাসার গল্প একটু ভিন্নমাত্রার, অকৃত্রিম।
মেহেরপুরের বিশিষ্ট সংস্কৃতিকর্মী ওহিউল ইসলাম (৬৬) বলেন, বর্তমান সমাজে প্রবীণরা অসহায় জীবনযাপন করেন। ছেলেমেয়েরা প্রতিষ্ঠিত হলেই বাবা-মাকে ফেলে কর্মক্ষেত্রে চলে যান। সন্তানের ফেরার আশায় বাড়ির চেয়ারে বা খাটের ওপর বসে থাকে। নিঃসঙ্গ জীবনযাপন এখন বেঁচে থাকার যন্ত্রণা। এমন সময়ে ফুলবাড়িয়া গ্রামবাসীর এমন ভালোবাসা প্রবীণদের আপ্লুত করে। তিনিও কয়েকবার গিয়েছিলেন।
মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ, লেখক ও গবেষক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল আমিন (ধূমকেতু) বলেন, ‘অনেক সন্তান তাদের বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেন। বিষয়গুলো খুবই কষ্টদায়ক। আমরাও বৃদ্ধ হব। আমাদের সন্তানদের যদি মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারি, তাহলে আমাদেরও একই দশা হবে। তাই দেশের প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি, পারিবারিক-সামাজিক মূল্যবোধ ও মানবিক শিক্ষায় সন্তানদের গড়ে তোলা জরুরি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম লনম ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন চালু
তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে।
রোববার তেহরান দূতাবাস এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিকের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দূতাবাস ইমার্জেন্সি হটলাইন স্থাপন করেছে। ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিকদের নিম্নোক্ত মোবাইলফোন নম্বরগুলোতে হোয়াটসঅ্যাপসহ সরাসরি যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
+ ৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮ ও +৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫।