গাইতে গাইতেই মারা যেতে চাই, এটাই এখন একমাত্র ইচ্ছে, আবেগঘন আশা ভোসলে
Published: 17th, February 2025 GMT
বয়স ৯১, তবে এই বয়সে এসেও একাই নিজের সুরেলা কণ্ঠে মঞ্চ জমিয়ে দিতে পারেন আশা ভোসলে। সম্প্রতি ‘কাপল অব থিংস উইথ আরজে আনমোল অ্যান্ড অমৃতা রাও’-এর পডকাস্টে এসে সুরকার স্বামী আর ডি বর্মনকে নিয়ে নানা কথা বলেছেন আশা।
আর ডি বর্মনের বিনয়ী স্বভাবের কথা মনে করে আশা ভোসলে বলেন, ‘তাঁর আইকনিক মর্যাদা থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজেকে কখনো বিশাল কিছু মনে করতে না। উনি জানতেনও না যে উনি কত বড় সংগীত পরিচালক। যে ধরনের সংগীত তৈরি করেছেন, তা নিয়ে কোনো অহংকার ছিল না। মানুষ টাকার জন্য পাগল, তবে আমি যদি তাঁকে একটা হিরেও দিই, তো উনি বলতেন, “এটি কী? এটা কি পাথর! পরিবর্তে এর চেয়ে একটা ভালো গান রেকর্ড করো।” গান রেকর্ড করা ওঁর কাছে হিরের চেয়েও মূল্যবান ছিল।’
আশা তাঁদের ডাকনাম সম্পর্কেও কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘আগে আমি তাঁকে পঞ্চম বলে ডাকতাম। তারপর আমি একটা গান গেয়েছিলাম, “বাবুয়া”। এর পর থেকে তিনি আমাকে ওই নামেই ডাকতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা আরও ছোট হয়ে বাব হয়ে গিয়েছিল। তবে লোকজনের সামনে উনি আমাকে আমার নাম ধরেই ডাকতেন।’
মঞ্চে গান গাওয়ার সময় মানসিক চাপের কথাও সামনে এনেছেন আশা। তাঁর কথায়, ‘স্টুডিওতে একজন সংগীত পরিচালক উপস্থিত থাকলে সবকিছু সহজে হয়ে যায়। তবে মঞ্চে তিনি থাকেন না। মঞ্চে আবেগ পুরো বিষয়টা দখল করে রাখে। গলা আটকে যায়, কণ্ঠস্বর কাঁপে। স্মৃতিগুলো ভেসে আসে—সেই রাতগুলো, সেই চিঠিগুলো, বালিশের কাছে রাখা সেই গোলাপগুলো। শ্রোতারাও তাদের নিজস্ব অতীতকে পুনরুজ্জীবিত করে তাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে।’
ভোসলে তাঁর সবচেয়ে বড় ইচ্ছার কথাও সবার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন। জোর দিয়ে বলেন যে তাঁর এখন একমাত্র ইচ্ছা হলো শেষনিশ্বাস পর্যন্ত গান গাওয়া।
আরও পড়ুনকলকাতায় জ্যোতিষীর কাছে আশা ভোঁসলে২৮ জানুয়ারি ২০১৬তাঁর কথায়, ‘একজন মায়ের ইচ্ছা কী? তাঁর সন্তানেরা ভালো থাকুক? একজন ঠাকুমার ইচ্ছা? তাঁর নাতি-নাতনিরা সুখে থাকুক। এখন আমার একমাত্র ইচ্ছা হলো, আমি যেন গান গাইতে গাইতেই মারা যাই। আমার শেখার মতো আর কিছুই বাকি নেই। আমি আমার পুরো জীবন গেয়েছি। আমি মাত্র তিন বছর বয়স থেকে শাস্ত্রীয় সংগীত শেখা শুরু করি। প্লেব্যাক করছি ৮২ বছর হয়ে গেছে। অর এখন ইচ্ছা হলো, আমি গাইতে গাইতে মরতে চাই। এটাই আমাকে সবচেয়ে সুখী করবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
মাকিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে চুক্তি বাতিলকারী দেশগুলোর জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর তার সেই বার্তাটি হচ্ছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দাঙ্গাবাজ দেশ, যাকে বিশ্বাস করা যায় না।
শুল্ক স্থগিতাদেশের সময় চীন ছাড়া সবদেশকে বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য ট্রাম্প যে ৯০ দিনের সময়সীমা দিয়েছেন, সেই সময়ের মধ্যে চীনা কর্মকর্তারা বিদেশী সরকারগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, একবার এই চুক্তিগুলো কার্যকর হয়ে গেলে, তিনি চান মার্কিন মিত্ররা ‘একটি দল হিসেবে চীনের সাথে যোগাযোগ করুক’, যাতে মার্কিন পক্ষ আলোচনায় আরো বেশি সুবিধা পায়।
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত মার্কিন মিত্ররা নিরাপত্তার জন্য ওয়াশিংটনের উপর নির্ভর করে এবং অর্থনৈতিকভাবে ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার জন্য তাদের উৎসাহ রয়েছে। অবশ্য চীন আরো সমান তালে শুল্ক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের শেষ বাণিজ্য যুদ্ধের পর থেকে বেইজিং মার্কিন রপ্তানি থেকে তার অর্থনীতিকে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশটিতে নিবেদিতপ্রাণ এবং সক্রিয় সৈন্য সংখ্যার বিচারে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক বাহিনী রয়েছে।
শি ট্রাম্পের সাথে ফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং তার সরকার ‘পাল্টাপাল্টি’ শুল্ক বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র জোর দিয়ে বলছে যে, অন্য পক্ষ, অর্থাৎ চীনকে উত্তেজনা কমানোর প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে, চীন নিজেকে নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উপস্থাপন করছে এবং অন্যান্য দেশকে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
সাংহাইয়ের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর আমেরিকান স্টাডিজের পরিচালক উ জিনবো বলেন, “এটি কেবল চীন-মার্কিন সম্পর্কে নয়। এটি আসলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে।”
গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতিবিদদের সাথে দেখা করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া উ জানান, অন্যান্য সরকারেরও বুঝতে হবে বেইজিংয়ের প্রচেষ্টা তাদের উপকার করেছে।
তিনি বলেন, “যদি চীন আমেরিকার বিরুদ্ধে না দাঁড়াত, তাহলে আমেরিকা কীভাবে তাদের ৯০ দিনের বিরতি দিত। চীনের উপর শুল্ক আরোপের ফলে ট্রাম্প অন্যান্য দেশের উপর শুল্ক আরোপ বন্ধ করার জন্য আবরণ পেয়েছেন। তাদের এটা উপলব্ধি করা উচিত।”
চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই সোমবার ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ব্রিকস ব্লকের দেশগুলোকে ট্রাম্পের দাবি প্রতিহত করার জন্য বেইজিংয়ের সাথে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “আপনি যদি নীরব থাকেন, আপস করেন এবং পিছু হটতে চান, তাহলে এটি কেবল বুলিকে আরো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।”
তার এই বক্তব্যের কয়েক ঘন্টা পরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইংরেজি সাবটাইটেলসহ একটি ভিডিওতে ওয়াশিংটনকে ‘সাম্রাজ্যবাদী’ শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, গত শতাব্দীতে জাপানি রপ্তানি সীমিত করার মার্কিন পদক্ষেপ তোশিবার মতো কোম্পানিগুলোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
ওয়াং ই বলেছেন, “একজন ধর্ষকের কাছে মাথা নত করা ঠিক তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বিষ পান করার মতো, এটি কেবল সংকটকে আরো গভীর করে তোলে। চীন পিছু হটবে না যাতে দুর্বলদের কণ্ঠস্বর শোনা যায়।”
ঢাকা/শাহেদ