মেঘনা নদীতে রাতে বালু উত্তোলন, ভোরে উধাও
Published: 17th, February 2025 GMT
দিনে আশপাশের বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে রাখা হয় ড্রেজার। রাত হতেই সক্রিয় হয়ে ওঠে চক্রের সদস্যরা। ড্রেজার যথাস্থানে বসিয়ে শুরু হয় বালু উত্তোলন। এতে ভাঙনের কবলে পড়েছে নদীতীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা। কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামে রাতে মেঘনা নদী থেকে এভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মচ্ছব চলছে। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বালু তোলায় নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার মানুষ।
সম্প্রতি সমন্বয় সভার পর প্রায় ২০ দিন এ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। দুদিন ধরে রাতে চক্রের সদস্যরা ফের বালু তুলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের রামপ্রসাদের চরে মেঘনা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। তারা সারারাত বালু তুলে ভোর হলে পালিয়ে যায়। এতে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছেন রামপ্রসাদের চর, নলচর ও চালিভাঙ্গার বাসিন্দারা।
বালুখেকোরা খুবই ভয়ঙ্কর উল্লেখ করে চালিভাঙ্গা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আজমগীর হোসেন বলেন, ‘আমি অনেকবার অভিযান চালিয়েছি। কিন্ত তারা রাতে বালু উত্তোলন করে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী যদি সহায়তা করে, সঙ্গে স্থানীয় জনগণ যদি থাকে– তাহলে বালু উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব হবে। সম্প্রতি আমি নৌপথে চাঁদাবাজি বন্ধে অভিযান চালিয়েছিলাম। সেখানে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল চাঁদাবাজরা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার ভাষ্য, এ চক্রকে প্রতিহত করা কঠিন। দুই-তিন মাস পর পর তারা ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব অবৈধ ড্রেজার চালায়। মধ্যরাতে প্রতিবাদ করতে গেলে প্রাণও হারাতে হতে পারে।
কিছুদিন পর পরই একটি চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ করেন চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি মাহবুবা ইসলাম মিলি। তিনি বলেন, ‘বালুখেকোদের বিরুদ্ধে বলায় হয়তো আমার হুমকির মুখে থাকা লাগতে পারে। এভাবে চলতে থাকলে এলাকার জমি শেষ হয়ে যাবে।
উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ছাত্রদের নিয়ে বিষয়টি আলোচনা হয়। তখন বালুখেকোরা বলেছিল, তারা আর উত্তোলন করবে না। ২০ দিন ধরে বন্ধও ছিল। এ তথ্য জানিয়ে ইউএনও হ্যাপী দাস বলেন, ‘আমি সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। শিগগিরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কোস্টগার্ডের (লে.
বাঞ্ছারামপুর, হোমনা ও মেঘনার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মো. আদিল বলেন, অভিযান চালালেও রাতে বালুখেকোরা এ কাজ করে। নৌপথে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান চালালে এলাকার কিছু মানুষ আক্রমণ চালায়। শিগগিরই বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’