দিনে আশপাশের বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে রাখা হয় ড্রেজার। রাত হতেই সক্রিয় হয়ে ওঠে চক্রের সদস্যরা। ড্রেজার যথাস্থানে বসিয়ে শুরু হয় বালু উত্তোলন। এতে ভাঙনের কবলে পড়েছে নদীতীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা। কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামে রাতে মেঘনা নদী থেকে এভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মচ্ছব চলছে। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বালু তোলায় নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার মানুষ।
সম্প্রতি সমন্বয় সভার পর প্রায় ২০ দিন এ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। দুদিন ধরে রাতে চক্রের সদস্যরা ফের বালু তুলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের রামপ্রসাদের চরে মেঘনা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। তারা সারারাত বালু তুলে ভোর হলে পালিয়ে যায়। এতে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছেন রামপ্রসাদের চর, নলচর ও চালিভাঙ্গার বাসিন্দারা।
বালুখেকোরা খুবই ভয়ঙ্কর উল্লেখ করে চালিভাঙ্গা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আজমগীর হোসেন বলেন, ‘আমি অনেকবার অভিযান চালিয়েছি। কিন্ত তারা রাতে বালু উত্তোলন করে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী যদি সহায়তা করে, সঙ্গে স্থানীয় জনগণ যদি থাকে– তাহলে বালু উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব হবে। সম্প্রতি আমি নৌপথে চাঁদাবাজি বন্ধে অভিযান চালিয়েছিলাম। সেখানে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল চাঁদাবাজরা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার ভাষ্য, এ চক্রকে প্রতিহত করা কঠিন। দুই-তিন মাস পর পর তারা ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব অবৈধ ড্রেজার চালায়। মধ্যরাতে প্রতিবাদ করতে গেলে প্রাণও হারাতে হতে পারে। 
কিছুদিন পর পরই একটি চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ করেন চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি মাহবুবা ইসলাম মিলি। তিনি বলেন, ‘বালুখেকোদের বিরুদ্ধে বলায় হয়তো আমার হুমকির মুখে থাকা লাগতে পারে। এভাবে চলতে থাকলে এলাকার জমি শেষ হয়ে যাবে।
উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ছাত্রদের নিয়ে বিষয়টি আলোচনা হয়। তখন বালুখেকোরা বলেছিল, তারা আর উত্তোলন করবে না। ২০ দিন ধরে বন্ধও ছিল। এ তথ্য জানিয়ে ইউএনও হ্যাপী দাস বলেন, ‘আমি সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। শিগগিরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কোস্টগার্ডের (লে.

) কমান্ডার মো. আহসান বলেন, ‘চালিভাঙ্গা এলাকা আমাদের সীমানার বাইরে। তারপরও আমরা অভিযান চালাই। জেলা প্রশাসন থেকে যদি আমাদের এ এলাকার সঙ্গে যুক্ত করে, তাহলে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করব।’
বাঞ্ছারামপুর, হোমনা ও মেঘনার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মো. আদিল বলেন, অভিযান চালালেও রাতে বালুখেকোরা এ কাজ করে। নৌপথে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান চালালে এলাকার কিছু মানুষ আক্রমণ চালায়। শিগগিরই বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ এল ক র

এছাড়াও পড়ুন:

সাজেকে নিহত খুবি শিক্ষার্থী রিংকীর মরদেহ নেওয়া হবে গাইবান্ধা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সেশনাল ট্যুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকীর মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তার বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে।

এছাড়া শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে এদিন সকল ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সেশনাল ট্যুরের সময় রাঙামাটির সাজেক যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকী নিহত হন। দুর্ঘটনায় নিহত রুবিনা আফসানা রিংকির মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাদের বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে। এই দুর্ঘটনায় আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদেরকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনজনকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হচ্ছে ।”

তিনি বলেন, “এই শোকাবহ ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে, সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত আছেন। তিনি নিজে এবং সহকারী পরিচালকসহ কর্মকর্তারা খাগড়াছড়ি রওনা হয়েছেন।”

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে নিহত শিক্ষার্থীর আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। 

এদিকে, সাজেকে শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সেশনাল ট্যুর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার কাকলি রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ ৪র্থ বর্ষ টার্ম-২ এর সেশনাল ট্যুরে অংশগ্রহণরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। শিক্ষার্থীর এই অকাল মৃত্যুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে শোকাহত এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল দূরপাল্লার সেশনাল ট্যুর স্থগিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার পথে চান্দের গাড়ি পাহাড়ের খাদে পড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হন। এসময় আহত হয়েছেন আরো ১১ জন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সাজেকের হাউসপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

নিহত রুবিনা আফসানা রিংকী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। আহতরা সবাই একই বিভাগের শিক্ষার্থী।

ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ