চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী বহিষ্কারের প্রতিবাদে ১৫৪ নাগরিকের বিবৃতি
Published: 18th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ ছাত্রীকে বহিষ্কারের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৫৪ জন নাগরিক। তাঁরা বলেছেন, একটি অস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে, যথাযথ তদন্ত না করে এবং কোনো রকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই একযোগে এসব শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, ঘটনার পুনঃ তদন্ত এবং অপেশাদার আচরণের জন্য প্রক্টরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের সামনে একদল ছাত্রের নৌকার ভাস্কর্য ভাঙতে যাওয়ার ঘটনায় প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। একজন সহকারী প্রক্টর ছাত্রীদের গালিগালাজ করে কথা বলেছেন এবং আওয়ামী লীগের দোসর ট্যাগ দিয়েছেন, যা ছাত্রীদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান প্রক্টর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ কথা বলেছেন, নারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে যৌন হয়রানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, যা প্রশাসনিক শিষ্টাচারের সব সীমা অতিক্রম করেছে।
তাঁরা বলেন, ছাত্রী হলের প্রাঙ্গণে মধ্যরাতে ভাঙচুর করতে যাওয়া, সাংবাদিকদের হেনস্তা করার অভিযোগ, একজন নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সহকারী প্রক্টরের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ, দুজন প্রক্টরের অশালীন বক্তব্য ও ফেসবুকে নারী শিক্ষার্থীদের জঘন্য ভাষায় আক্রমণ—এসব বিষয়ে যথাযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন ছিল, যা হয়নি।
ছাত্রীদের দেওয়া এই শাস্তির গ্রহণযোগ্যতা নেই উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় ও ছাত্রীদের প্রতি প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের স্পষ্ট বিদ্বেষ পরিলক্ষিত হওয়ায় যে তদন্ত ও শাস্তি হয়েছে, তার গ্রহণযোগ্যতা নেই। অবিলম্বে এই শাস্তি প্রত্যাহার করে নির্দোষ শিক্ষার্থীদের হয়রানি থেকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।
বিবৃতি দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, নৃবিজ্ঞানী ও লেখক রেহনুমা আহমেদ, শিক্ষক সামিনা নিত্রা, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম, চিন্তক আ আল মামুন, লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, চলচ্চিত্রকার লাবনী আশরাফি, কবি রহমান মুফিজ, শিক্ষক তানিয়াহ মাহমুদা, নাট্য নির্দেশক দীপক কুমার গোস্বামী, চলচ্চিত্রকার রাফসান আহমেদ, সাংবাদিক অনিক রায়, গবেষক মীর হুযাইফা আল মামদূহ, কবি সাইয়েদ জামিল, লেখক পারভেজ আলম, ফাহমিদুল হক, ফিরোজ আহমেদ, শিক্ষক সেলিম রেজা নিউটন, অর্থনীতি গবেষক মাহা মির্জা, লেখক দিলশানা পারুল, অধিকারকর্মী ফারজানা মাহবুবা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম, লেখক এবাদুর রহমান ও চিন্তক তুহিন খান রয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর মুসলিমদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় ও তাঁদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। মানবাধিকারকর্মীদের আশঙ্কা, উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা পেহেলগামের হামলাকে ব্যবহার করে দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর দমন–পীড়ন আরও বৃদ্ধি করছে।
কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরের কাছে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে একজন বাদে বাকি প্রায় সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। পর্যটক হিসেবে তাঁরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পেহেলগামে গিয়েছিলেন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ জোরালোভাবে নাকচ করে দিয়েছে।
পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার জবাবে ভারত সামরিকভাবে পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে তাদের ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া হবে। পাকিস্তান সরকারের একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন ভারত শিগগিরই সামরিক হামলা চালাতে পারে।
এই মুহূর্তে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মূলত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন আন্তসীমান্ত নদীগুলোর পানিপ্রবাহ বন্ধের হুমকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে বিজেপি সরকার ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমদের হয়রানি করছে। তারা এটিকে ‘অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান’ বলে দাবি করছে।
মোদির বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে কর্তৃপক্ষ এই সুযোগে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ এবং ‘রোহিঙ্গাদের’ বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। রোহিঙ্গারা মূলত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন। ‘পাকিস্তানি’ বা ‘বাংলাদেশি’ তকমা অনেক সময়েই হিন্দুত্ববাদীরা ভারতের অভ্যন্তরীণ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে।
উত্তর প্রদেশ ও কর্ণাটক—এই দুই রাজ্যে মুসলিমদের হত্যার খবর পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমের খবরে সেগুলোকে বিদ্বেষমূলক অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরে ইতিমধ্যেই শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে যাঁদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক সরকারি কর্মকর্তার মতে, প্রায় দুই হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে, যা অনেকটা সমষ্টিগত শাস্তির মতো।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি