বিশ্বে গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্টদের যে অবস্থা হয়েছে, আওয়ামী লীগেরও সে রকম অবস্থা হওয়া উচিত বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, গণহত্যা যে আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছে, তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। সেই জায়গা থেকে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের একধরনের শাস্তি নিশ্চিত হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিন আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।

তবে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে উদ্ধৃত করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, যাঁরা আওয়ামী লীগ করেছেন, কিন্তু কোনো প্রকার অন্যায় এবং গণহত্যা কিংবা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন, তাঁরা ক্ষমা চেয়ে আবার মূল ধারায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারেন।

ব্যক্তিগতভাবে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তবে তিনি এ–ও বলেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে হয়নি। জনপ্রতিনিধি নির্বাচন অথবা প্রশাসক (পূর্ণকালীন) নিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলো পরিচালনা করার বিষয়ে খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত আসবে বলেও জানান তিনি।

সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগের লোকজন অংশগ্রহণ করেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনাদের অবস্থান কী অথবা জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে আপনাদের ভাবনা কী?

জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, যে ধরনের গণহত্যা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে সংঘটিত করেছে এবং আপনারা দেখেছেন যে জাতিসংঘের মানবাধিকার রিপোর্টে (জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন) এসেছে, এই গণহত্যা যে আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছে, তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। সেই জায়গা থেকে পুরো পৃথিবীতে এ রকম গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্টদের যে নজির, আওয়ামী লীগেরও সে রকম অবস্থাই হওয়া উচিত।’

আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা তো গণতন্ত্রের দিক দিয়ে ইউরোপের দেশগুলোকে অনেক এগিয়ে রাখি বা মডেল হিসেবে দেখি। তো জার্মানিতে ফ্যাসিস্টদের কী হয়েছিল বা ইতালিতে কী হয়েছিল, আমাদের সামনে সে নজিরগুলো আছে। যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবেও এই গণহত্যা ডকুমেন্টটেডও হয়েছে, সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি, দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের একধরনের শাস্তি নিশ্চিত হওয়া উচিত। এখন সেটি কোন প্রক্রিয়ায় হতে পারে, কী ধরনের শাস্তি হতে পারে, এটার ব্যাপারেও সবার মতামত নেওয়ার ব্যাপার আছে। আশা করি, তারপর সরকার একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারে।’

তখন সাংবাদিকেরা আবার প্রশ্ন করেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যদি তাঁরা (আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী) বিক্ষিপ্তভাবে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে সরকারের অবস্থান কী হবে? এই প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘দেখুন, যাঁরা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত এবং বিভিন্ন সময়ে, বিগত ফ্যাসিবাদের সময়ে জনগণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই এখন পলাতক অবস্থায় আছেন। গণহত্যার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা আছে বিধায় তাঁরা পলাতক অথবা কারাগারে রয়েছেন। ইতিমধ্যে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, যাঁরা আওয়ামী লীগ করেছেন, কিন্তু কোনো প্রকার অন্যায় এবং গণহত্যা কিংবা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন, তাঁরা ক্ষমা চেয়ে আবার মূল ধারায় (মেইনস্ট্রিম) স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারেন এবং সেই জায়গা থেকে যদি কেউ নির্বাচন করেন, তাতেও কোনো বাধা নেই। কিন্তু কেউ যদি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন, এই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে তো কোনোভাবেই নির্বাচনে আসতে পারবেন না।’

আরও পড়ুনস্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার পক্ষে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ৩ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট গণহত য আওয় ম অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে

সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।

শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।

পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।

শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহরুখ খান: গণহত্যার সময় বিলিয়নিয়ার হওয়ার অর্থ কী
  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল