পর্যটক আকর্ষণে নকল তুষারে ঢাকা হলো গ্রাম
Published: 19th, February 2025 GMT
সাদা তুষারে ঢেকে আছে পুরো গ্রাম। তুষারে ঢাকা মনোমুগ্ধকর এমন ভূপ্রকৃতির জন্য চীনের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ সিচুয়ানের একটি গ্রাম বিখ্যাত। প্রতিবছর দেশি-বিদেশি বহু পর্যটক এই দৃশ্য উপভোগ করতে ওই গ্রামে আসেন। বিশেষ করে জানুয়ারির শেষ দিকে চীনা নববর্ষের সময়।
চান্দ্র নববর্ষ উদ্যাপন করতে চীনে লম্বা ছুটি থাকে। ওই সময় স্থানীয় পর্যটকেরা যেমন ভ্রমণে বের হন, তেমনি বিদেশি পর্যটকেরাও চীন ভ্রমণে আসেন।
এ বছরও ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে চান্দ্র নববর্ষ এসেছে, সরকার থেকে লম্বা ছুটিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিচুয়ান প্রদেশের ওই গ্রামের ভাগ্য আগের মতো সুপ্রসন্ন ছিল না।
এ বছর চীনের আবহাওয়া অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ছিল, এ কারণে পর্যাপ্ত তুষারপাত হয়নি। তাই নিরুপায় গ্রামবাসী পর্যটক টানতে অভিনব এক উপায় খুঁজে বের করেন। তাঁরা তুলা ও সাবান পানি দিয়ে নকল তুষার তৈরি করেন এবং পুরো গ্রাম নকল তুষারে ঢেকে দেন।
কিন্তু চেংদু স্নো ভিলেজ ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে গ্রামবাসীর নকল তুষার তৈরির পরিকল্পনা মোটেও ভালো লাগেনি। সেখানে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকেরা অনলাইন এর তীব্র সমালোচনা শুরু করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইচ্যাটে চেংদু স্নো ভিলেজের বেশ কিছু ছবি দেখা যায়। সেগুলোয় মাঠজুড়ে সাদা তুষারের চাদর বিছানো আছে, কিন্তু পাশের গাছগাছালি তেমন একটা তুষারে ঢাকা পড়েনি। বাড়ি-ঘরের চালে তুষারের মোটা স্তর পড়ে আছে। কিন্তু খুব কাছ থেকে দেখলে, সেগুলো যে তুলা তা বোঝা যায়।
ওই সব ছবির নিচে মন্তব্যের ঘরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। একজন লিখেছেন, ‘তুষার ছাড়াই তুষার গ্রাম’।
অনলাইনে বেশির ভাগ মানুষ সমালোচনা করা শুরু করলে চেংদু স্নো ভিলেজ কর্তৃপক্ষ পুরো এলাকা থেকে নকল তুষার সরিয়ে ফেলে। শুধু তা–ই নয়, গ্রামবাসী এমন কাজের জন্য তাদের উইচ্যাট অ্যাকাউন্টে ক্ষমা চেয়ে একটি পোস্টও দিয়েছেন। ৮ ফেব্রুয়ারি দেওয়া ওই পোস্টে তাঁরা লিখেছেন, তুলা ও সাবান পানি দিয়ে নকল তুষার তৈরি করার জন্য তাঁরা দুঃখিত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নকল ত ষ র
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’