খননযন্ত্রের আঘাতে ফেটেছে ওয়াসার পাইপ, চট্টগ্রামের ৩০ এলাকায় পানি নেই
Published: 19th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে ফুটো হয়ে গেছে ওয়াসার মূল সঞ্চালন পাইপলাইন। গত সোমবার দুপুরে নগরের কুয়াইশ এলাকায় মাটি খোঁড়ার যন্ত্রের (এক্সকাভেটর) আঘাতে পাইপ ফেটে যায়। এর পর থেকে নগরের অন্তত ৩০ এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পাইপ মেরামত করা সম্ভব হয়নি।
‘চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ওয়াসার প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, এ প্রকল্পের আওতায় কুয়াইশ এলাকায় একটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলছিল। এতে এক্সকাভেটর ব্যবহার করা হয়। সেই এক্সকাভেটরের আঘাতে ১ হাজার ২০০ মিলিমিটার ব্যাসের মূল সঞ্চালন পাইপ ফুটো হয়ে গেছে। এ কারণে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ থেকে সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে।
ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, এ কাজ করার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পাইপলাইনের অবস্থান ও নকশা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কুয়াইশ এলাকায় নির্বাহী প্রকৌশলী গিয়ে পাইপের অবস্থান দেখিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হলো। এখন মাটি খনন করে পাইপটি মেরামত করতে হচ্ছে। আজ রাতের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।
গতকাল মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে ওয়াসা এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত পাইপলাইন দ্রুত মেরামতের কাজ চলছে।
পানির সংকটে ভোগান্তিওয়াসার কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ ও ২ থেকে আসে ১৪ কোটি করে মোট ২৮ কোটি লিটার পানি। এর বাইরে মদুনাঘাট পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার ও মোহরা পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার পানি পাওয়া যায়। এ ছাড়া গভীর নলকূপ থেকে আসে ৪ কোটি লিটার পানি। ওয়াসার দৈনিক উৎপাদন–সক্ষমতা ৫০ কোটি লিটার। বর্তমানে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার বন্ধ। তাই ১৪ কোটি লিটার পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
ওয়াসার প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নগরের উত্তর হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর, আগ্রাবাদ, জামালখান, লালখানবাজার, মাদারবাড়ি, জিইসি, মুরাদপুর, কদমতলী, ধনিয়ালাপাড়া, নয়াবাজার, আনন্দবাজার, ২ নম্বর গেট, বায়েজিদ, অক্সিজেন, রৌফাবাদ, রুবি গেট, হিলভিউ, মোমেনবাগ, বহদ্দারহাট, চকবাজার, নন্দনকাননসহ অন্তত ৩০ এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, নগরে এমনিতেই পানির সংকট; সব এলাকায় ওয়াসার পানি পৌঁছায় না। কোথাও সপ্তাহে এক দিন, কোথাও দুই দিন পানি পাওয়া যায়। সোমবার দুপুর থেকে এক ফোঁটা পানিও মিলছে না। এ কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ করে পানি সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় বিপদে পড়েছেন তাঁরা। সোমবার দুপুর থেকেই ভোগান্তি শুরু। কেনা পানিতে রান্না করতে হচ্ছে। একই এলাকার গৃহিণী সালমা আক্তার বলেন, ঘরে পানি জমানো ছিল না। হুট করে পানি চলে যাওয়ায় বিপদে পড়তে হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’
জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।