বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের উত্তেজনা এখন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকেও ছাপিয়ে যায়। সম্প্রতি তাতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে রাজনীতি। ভারতের সঙ্গে যে কোনো খেলায় বাংলাদেশ জয় পেলে অনেকটা রাষ্ট্রীয় উৎসবের উপলক্ষ তৈরি করে।
ক্রিকেটের যুব এশিয়া কাপের পর নারী সাফ ফুটবলে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জয়ে দেশজুড়েই ছিল উৎসবের বাতাবরণ। আজ আরব আমিরাতের দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির যে ম্যাচ খেলবে, এ নিয়েও উত্তেজনায় ফুটছে জাতি। দেশে-প্রবাসে স্লোগানে মুখরিত হবে জাতি। নাজমুল হোসেন শান্তর বিশ্বাস, গ্যালারির সমর্থন মাঠে তাদের ভালো খেলার প্রেরণা জোগাবে। উভয় দিক থেকেই ভারতকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চান তারা।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে বাংলাদেশ কোনো ওয়ানডে ম্যাচ খেলেনি। কারণ, ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠে ছিল বিপিএলের খেলা। টানা টি২০ ক্রিকেট খেলায় বিশ্রাম নেওয়ারও প্রয়োজন ছিল। ফলে নিজেদের মধ্যে ম্যাচ সিনারিও প্র্যাকটিস করে দুবাই গেছেন শান্তরা। কোচ ফিল সিমন্সও প্রস্তুতি নিয়ে খুশি ছিলেন না। তার ওপর পাকিস্তান শাহিনসের কাছে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে ৭ উইকেটে হেরেছে। এই হার শেষে কাল না হলেই ভালো। যদিও অধিনায়ক শান্ত বলছেন সমস্যা হবে না, ‘প্র্যাকটিস ম্যাচের হারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কারণ, সেখানে আমরা অনেক কিছু দেখেছি। বোলিং বা ব্যাটিং করার সুযোগটা দেওয়া হয়েছে অনেককে। সাধারণ প্র্যাকটিসের জন্যই এটা করা। আমার মনে হয় না, সমস্যা হবে। টুর্নামেন্টের জন্য আমাদের প্রস্তুতি ভালো।’
ভারত টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট। তাদের চাওয়া পূরণ করতে হাইব্রিড মডেলে হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। বিরাট কোহলিরা নিজেদের সব ম্যাচ দুবাইয়ে খেলবেন। বিষয়টি বাড়তি সুবিধা দেবে ভারতকে। এ ছাড়া দুবাইয়ে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে রোহিত শর্মাদের। এই ম্যাচে বাংলাদেশকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে। গতকাল ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক শান্ত বলেছেন, যে কোনো পরিস্থিতি জয় করতে প্রস্তুত তারা। এক দিনের ম্যাচ হওয়ায় আশাবাদীও তারা, ‘এই সংস্করণে আমাদের দলের ভারসাম্য আছে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা এই টুর্নামেন্টে যে কোনো দলকে হারাতে পারি। সব দলই শিরোপা জেতার সক্ষমতা রাখে। আমরা নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে, যে কোনো দিন, যে কোনো দলকে হারাতে পারব।’ বাংলাদেশকে ভালো করতে হলে তিন বিভাগে অলআউট ক্রিকেট খেলতে হয়। তাই তো মরুর বুকে জয়ের ফুল ফোটাতে সতীর্থদের অলআউট খেলার আহ্বান শান্তর, ‘আমাদের ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং– তিন বিভাগে ভালো খেলতে হবে। গত কয়েক বছর এই সংস্করণে যেভাবে খেলেছি, আমার মনে হয়, আমরা ভালো দল। যেটা বললেন কন্ডিশনে মিল আছে, সেদিক থেকে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আশা করি, কালকের (আজ) ম্যাচে ভালো কিছু হবে।’
ভারতের পেস বিভাগে খাদ তৈরি হয়েছে জাসপ্রিত বুমরাহ চোটে পড়ায়। তারা বোলিং বিভাগ সাজিয়েছে পেস-স্পিনের মেলবন্ধনে। বাংলাদেশও বোলিং ইউনিট সাজিয়েছে পেস এবং স্পিনে। তবে বেশি গুরুত্ব পাবে পেস বিভাগ। ফোকাসে আছেন নাহিদ রানা। তাসকিন আহমেদ দারুণ ছন্দে আছেন। কন্ডিশন বুঝে খেলতে পারলে ভারতের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ জয় করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন শান্ত, ‘উইকেট যে রকম থাকবে, ওই অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করব আমরা। তবে আমার মনে হয়, ওপরের দিকে যারা ব্যাটিং করে, তাদের লম্বা ইনিংস খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ। যখন ওপরের শুরুটা ভালো করতে পারব, তখনই বড় রান করা সম্ভব। অবশ্যই কাল উইকেট কন্ডিশন মেলানোর পর ওইভাবে আমরা ব্যাটিংটা করার চেষ্টা করব।’ এক দিনের ক্রিকেটে এ দুই দলের শেষ পাঁচ ম্যাচের তিনটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। সেদিক থেকে আশার আকাশে রুপালি চাঁদ উঁকি দিতেই পারে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে।
এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র্যান্ডেল।
এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব।
১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।
রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”
গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”
ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”
ঢাকা/তারিকুল/এস