ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে প্রতিপক্ষ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটা সমঝোতায় উপনীত হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে আটলান্টিক অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করছে তাঁর প্রশাসন। ট্রাম্পের এমন সব পদক্ষেপ ইউরোপের নেতাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

গত মঙ্গলবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের নেতৃত্বে রাশিয়ার এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। সেখানে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের আলাপ ও ইউরোপীয় মিত্রদের ছাড়াই তাঁর শান্তি আলোচনায় বসার আগ্রহে শুধু যে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ জন্ম নিয়েছে তা নয়, উদ্বিগ্ন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, কিয়েভকে যুক্ত না করে কোনো চুক্তি করা হলে তা ইউক্রেন মেনে নেবে না।

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এটি এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হলো, যখন গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাপ করেন। আলাপে তিন বছরের ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ইউরোপীয় মিত্রদের ছাড়াই শান্তি আলোচনায় বসতে সম্মত হন তাঁরা। ট্রাম্প এ–ও বলেছেন, তিনি সৌদি আরবে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন।

পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের এ আলাপ ও ইউরোপীয় মিত্রদের ছাড়াই তাঁর শান্তি আলোচনায় বসার আগ্রহে শুধু যে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ জন্ম নিয়েছে তা নয়, উদ্বিগ্ন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, কিয়েভকে যুক্ত না করে কোনো চুক্তি করা হলে তা ইউক্রেন মেনে নেবে না।

সপ্তাহান্তে অনুষ্ঠিত মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে ইউক্রেন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয়.

..ইউরোপকে নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে অবশ্যই ইউরোপের জন্য আসন থাকতে হবে।’

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি কী এবং নতুন বাস্তবতায় কীভাবে সাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন ইউরোপের নেতারা?

ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে ইউক্রেন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয়...ইউরোপকে নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে অবশ্যই ইউরোপের জন্য আসন থাকতে হবে।ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট রিয়াদে মার্কিন–রুশ বৈঠকের আলোচ্যসূচি কী ছিল

রিয়াদে লাভরভের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে মার্কো রুবিও ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজ ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ।

ওয়াশিংটন–মস্কোর চিড় ধরা সম্পর্ক মেরামতের লক্ষ্য ছাড়াও ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে একটি সম্ভাব্য বৈঠকের প্রস্তুতির ক্ষেত্র তৈরি করেছে রিয়াদের বৈঠক। এ প্রসঙ্গে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় প্রাথমিকভাবে রুশ–মার্কিন সম্পর্কের জটিলতা কাটানোর ওপর মনোযোগ দেওয়া হবে।

মস্কো থেকে আল–জাজিরার সংবাদদাতা ইয়ুলিয়া শাপোভালোভা বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন, যা একেবারে তলানিতে পৌঁছেছে, তা–ই এ বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে।’

রিয়াদ বৈঠকে আমন্ত্রণ না পেয়ে কেন উদ্বিগ্ন ইউরোপ ও ইউক্রেন

গত সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করা জেলেনস্কি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বৈঠকে ইউক্রেন নিয়ে গ্রহণ করা কোনো সিদ্ধান্ত মানবেন না তিনি।

আরও পড়ুনক্ষমতায় বসেই অনেক কিছু বদলে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ২১ জানুয়ারি ২০২৫

এ–সংক্রান্ত আলোচনাগুলোয় ইউরোপ ও ইউক্রেনকে বাদ দেওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারাও। নিজেরা আলোচনার অংশ হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন তাঁরা।

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গতকাল বুধবার পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের একপক্ষীয় আলাপ–আলোচনার পর জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, ‘বেঁধে দেওয়া কোনো শান্তি (শান্তি উদ্যোগ) কখনোই আমাদের সমর্থন পাবে না।’

পরে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলোচনায় জেলেনস্কি অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।’ তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। ইউক্রেনবিষয়ক মার্কিন দূত কিথ কেলগও এই বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন যে ইউক্রেনের ওপর কোনো চুক্তি চাপিয়ে দেওয়া হবে না।

এদিকে প্যারিসে ইউরোপের নেতাদের নিয়ে এক বৈঠক আয়োজনের পরদিন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘ইউক্রেনে আমরা জোরালো ও টেকসই শান্তি চাই। এটি অর্জনে রাশিয়াকে অবশ্যই হামলা বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইউক্রেনবাসীর জন্য শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তাও অবশ্যই থাকতে হবে।’

তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত ইউক্রেন নীতি ট্রাম্প প্রশাসনের বদলে ফেলা ও ১৯৪৯ সাল থেকে চলে আসা ট্রান্স–আটলান্টিক জোটের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন আনার পর ইউরোপের নেতারা প্রতিক্রিয়া দেখাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

টিমোথি অ্যাশ চাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের একজন সহযোগী ফেলো। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, ইউরোপের নেতারা এ জন্য উদ্বিগ্ন যে ইউক্রেন বা ইউরোপ—কাউকেই রিয়াদ বৈঠকে ডাকা হয়নি। তাঁদের ধারণা, ইউক্রেনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন ট্রাম্প। গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বার্তায়ও একই রকম ফলাফল আসার আশঙ্কা তাঁদের।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ট্রাম্প ফিলিস্তিনের গাজা নিয়ে তাঁর এক পরিকল্পনায় বলেন, এ উপত্যকার বাসিন্দাদের অন্য দেশে চলে যেতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র এ ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এটিকে মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্রসৈকতে রূপ দেবে।

আরও পড়ুনপুতিন ও ট্রাম্প সাত দিনে যেভাবে দুনিয়া কাঁপিয়ে দিলেন১২ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের নীতিবদলে ইউরোপের সাড়া

তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত ইউক্রেন নীতি ট্রাম্প প্রশাসনের বদলে ফেলা ও ১৯৪৯ সাল থেকে চলে আসা ট্রান্স–আটলান্টিক জোটের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন আনার পর ইউরোপের নেতারা প্রতিক্রিয়া দেখাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

রোববার মার্কিন দূত কেলগ ঘোষণা দেন, ইউক্রেন নিয়ে শান্তি আলোচনার টেবিলে ইউরোপকে ডাকা হবে না। এর আগে গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ অযৌক্তিক। রাশিয়ার সঙ্গে কোনো চুক্তি হলে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা পাঠানোর সম্ভাবনাও নাকচ করে দেন তিনি। ইতিমধ্যে ট্রাম্পও বলেছেন, ন্যাটোতে ইউরোপের ব্যয় বাড়ানো উচিত।

ইউরোপের নেতারা এ জন্য উদ্বিগ্ন যে ইউক্রেন বা ইউরোপ—কাউকেই রিয়াদ বৈঠকে ডাকা হয়নি। তাঁদের ধারণা, ইউক্রেনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন ট্রাম্প। গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বার্তাতেও একই রকম ফলাফল আসার আশঙ্কা তাঁদের।টিমোথি অ্যাশ, চাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো

ট্রাম্প ও তাঁর শীর্ষ সহযোগীদের কাছ থেকে এ ধরনের বার্তা পেয়ে সোমবার প্যারিসে সমবেত হন ইউরোপের নেতারা। লক্ষ্য ছিল, ট্রাম্পের উদ্যোগে নিজেদের সাড়া কী হবে, তা ঠিক করা। মাখোঁর সঙ্গে এ বৈঠকে যোগ দেন জার্মানি, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, ইতালি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের নেতারা। ছিলেন ন্যাটো ও ইইউর নেতারাও।

চাথাম হাউসের অ্যাশ বলেন, ইউরোপ এখন বুঝতে শুরু করেছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাছে আস্থায় রাখার মতো অংশীদার নয়। ইউরোপের নেতাদের পাশ কাটিয়ে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের চালানো আলাপ–আলোচনাকে জোটের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের (যুক্তরাষ্ট্র) বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবেও দেখছেন কেউ কেউ।

এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার এক্সে পোস্ট করা বার্তায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেন, ‘আমাদের ইউরোপের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরালো করা দরকার।’

আরও পড়ুনবাইডেনকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার কাজটাই শুধু ভালো পেরেছেন জেলেনস্কি: ট্রাম্প৪ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প র স ড ন ট ইউর প র ন ত দ র ইউক র ন য দ ধ ইউর প র ন ত র ইউক র ন ন য় ইউর প য় ন ইউর প বল ছ ন ও ইউর গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু

সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।

তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।

এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।

এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’

যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকা

ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।

তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।

ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদা

ঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।

১০ নারী প্রার্থী

ঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।

মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধ

মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ