ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতিতে বদল: ইউরোপের ক্ষুব্ধ নেতারা কীভাবে সাড়া দিচ্ছেন
Published: 20th, February 2025 GMT
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে প্রতিপক্ষ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটা সমঝোতায় উপনীত হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে আটলান্টিক অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করছে তাঁর প্রশাসন। ট্রাম্পের এমন সব পদক্ষেপ ইউরোপের নেতাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
গত মঙ্গলবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের নেতৃত্বে রাশিয়ার এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। সেখানে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের আলাপ ও ইউরোপীয় মিত্রদের ছাড়াই তাঁর শান্তি আলোচনায় বসার আগ্রহে শুধু যে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ জন্ম নিয়েছে তা নয়, উদ্বিগ্ন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, কিয়েভকে যুক্ত না করে কোনো চুক্তি করা হলে তা ইউক্রেন মেনে নেবে না।সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এটি এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হলো, যখন গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাপ করেন। আলাপে তিন বছরের ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ইউরোপীয় মিত্রদের ছাড়াই শান্তি আলোচনায় বসতে সম্মত হন তাঁরা। ট্রাম্প এ–ও বলেছেন, তিনি সৌদি আরবে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন।
পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের এ আলাপ ও ইউরোপীয় মিত্রদের ছাড়াই তাঁর শান্তি আলোচনায় বসার আগ্রহে শুধু যে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ জন্ম নিয়েছে তা নয়, উদ্বিগ্ন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, কিয়েভকে যুক্ত না করে কোনো চুক্তি করা হলে তা ইউক্রেন মেনে নেবে না।
সপ্তাহান্তে অনুষ্ঠিত মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে ইউক্রেন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয়.
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি কী এবং নতুন বাস্তবতায় কীভাবে সাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন ইউরোপের নেতারা?
ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে ইউক্রেন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয়...ইউরোপকে নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে অবশ্যই ইউরোপের জন্য আসন থাকতে হবে।ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট রিয়াদে মার্কিন–রুশ বৈঠকের আলোচ্যসূচি কী ছিলরিয়াদে লাভরভের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে মার্কো রুবিও ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজ ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ।
ওয়াশিংটন–মস্কোর চিড় ধরা সম্পর্ক মেরামতের লক্ষ্য ছাড়াও ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে একটি সম্ভাব্য বৈঠকের প্রস্তুতির ক্ষেত্র তৈরি করেছে রিয়াদের বৈঠক। এ প্রসঙ্গে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় প্রাথমিকভাবে রুশ–মার্কিন সম্পর্কের জটিলতা কাটানোর ওপর মনোযোগ দেওয়া হবে।
মস্কো থেকে আল–জাজিরার সংবাদদাতা ইয়ুলিয়া শাপোভালোভা বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন, যা একেবারে তলানিতে পৌঁছেছে, তা–ই এ বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে।’
রিয়াদ বৈঠকে আমন্ত্রণ না পেয়ে কেন উদ্বিগ্ন ইউরোপ ও ইউক্রেন
গত সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করা জেলেনস্কি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বৈঠকে ইউক্রেন নিয়ে গ্রহণ করা কোনো সিদ্ধান্ত মানবেন না তিনি।
আরও পড়ুনক্ষমতায় বসেই অনেক কিছু বদলে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ২১ জানুয়ারি ২০২৫এ–সংক্রান্ত আলোচনাগুলোয় ইউরোপ ও ইউক্রেনকে বাদ দেওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারাও। নিজেরা আলোচনার অংশ হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন তাঁরা।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গতকাল বুধবার পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের একপক্ষীয় আলাপ–আলোচনার পর জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, ‘বেঁধে দেওয়া কোনো শান্তি (শান্তি উদ্যোগ) কখনোই আমাদের সমর্থন পাবে না।’
পরে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলোচনায় জেলেনস্কি অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।’ তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। ইউক্রেনবিষয়ক মার্কিন দূত কিথ কেলগও এই বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন যে ইউক্রেনের ওপর কোনো চুক্তি চাপিয়ে দেওয়া হবে না।
এদিকে প্যারিসে ইউরোপের নেতাদের নিয়ে এক বৈঠক আয়োজনের পরদিন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘ইউক্রেনে আমরা জোরালো ও টেকসই শান্তি চাই। এটি অর্জনে রাশিয়াকে অবশ্যই হামলা বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইউক্রেনবাসীর জন্য শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তাও অবশ্যই থাকতে হবে।’
তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত ইউক্রেন নীতি ট্রাম্প প্রশাসনের বদলে ফেলা ও ১৯৪৯ সাল থেকে চলে আসা ট্রান্স–আটলান্টিক জোটের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন আনার পর ইউরোপের নেতারা প্রতিক্রিয়া দেখাতে হিমশিম খাচ্ছেন।টিমোথি অ্যাশ চাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের একজন সহযোগী ফেলো। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, ইউরোপের নেতারা এ জন্য উদ্বিগ্ন যে ইউক্রেন বা ইউরোপ—কাউকেই রিয়াদ বৈঠকে ডাকা হয়নি। তাঁদের ধারণা, ইউক্রেনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন ট্রাম্প। গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বার্তায়ও একই রকম ফলাফল আসার আশঙ্কা তাঁদের।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ট্রাম্প ফিলিস্তিনের গাজা নিয়ে তাঁর এক পরিকল্পনায় বলেন, এ উপত্যকার বাসিন্দাদের অন্য দেশে চলে যেতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র এ ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এটিকে মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্রসৈকতে রূপ দেবে।
আরও পড়ুনপুতিন ও ট্রাম্প সাত দিনে যেভাবে দুনিয়া কাঁপিয়ে দিলেন১২ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের নীতিবদলে ইউরোপের সাড়াতিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত ইউক্রেন নীতি ট্রাম্প প্রশাসনের বদলে ফেলা ও ১৯৪৯ সাল থেকে চলে আসা ট্রান্স–আটলান্টিক জোটের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন আনার পর ইউরোপের নেতারা প্রতিক্রিয়া দেখাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
রোববার মার্কিন দূত কেলগ ঘোষণা দেন, ইউক্রেন নিয়ে শান্তি আলোচনার টেবিলে ইউরোপকে ডাকা হবে না। এর আগে গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ অযৌক্তিক। রাশিয়ার সঙ্গে কোনো চুক্তি হলে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা পাঠানোর সম্ভাবনাও নাকচ করে দেন তিনি। ইতিমধ্যে ট্রাম্পও বলেছেন, ন্যাটোতে ইউরোপের ব্যয় বাড়ানো উচিত।
ইউরোপের নেতারা এ জন্য উদ্বিগ্ন যে ইউক্রেন বা ইউরোপ—কাউকেই রিয়াদ বৈঠকে ডাকা হয়নি। তাঁদের ধারণা, ইউক্রেনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন ট্রাম্প। গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বার্তাতেও একই রকম ফলাফল আসার আশঙ্কা তাঁদের।টিমোথি অ্যাশ, চাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলোট্রাম্প ও তাঁর শীর্ষ সহযোগীদের কাছ থেকে এ ধরনের বার্তা পেয়ে সোমবার প্যারিসে সমবেত হন ইউরোপের নেতারা। লক্ষ্য ছিল, ট্রাম্পের উদ্যোগে নিজেদের সাড়া কী হবে, তা ঠিক করা। মাখোঁর সঙ্গে এ বৈঠকে যোগ দেন জার্মানি, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, ইতালি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের নেতারা। ছিলেন ন্যাটো ও ইইউর নেতারাও।
চাথাম হাউসের অ্যাশ বলেন, ইউরোপ এখন বুঝতে শুরু করেছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাছে আস্থায় রাখার মতো অংশীদার নয়। ইউরোপের নেতাদের পাশ কাটিয়ে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের চালানো আলাপ–আলোচনাকে জোটের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের (যুক্তরাষ্ট্র) বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবেও দেখছেন কেউ কেউ।
এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার এক্সে পোস্ট করা বার্তায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেন, ‘আমাদের ইউরোপের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরালো করা দরকার।’
আরও পড়ুনবাইডেনকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার কাজটাই শুধু ভালো পেরেছেন জেলেনস্কি: ট্রাম্প৪ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প র স ড ন ট ইউর প র ন ত দ র ইউক র ন য দ ধ ইউর প র ন ত র ইউক র ন ন য় ইউর প য় ন ইউর প বল ছ ন ও ইউর গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
সকালের সবচেয়ে বরকতময় সময় ব্যবহারের ৭ কৌশল
সকাল মানুষের জীবনের একটি মূল্যবান সময়, যা দিনের বাকি অংশের জন্য সুর নির্ধারণ করে। সকাল আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার, শরীর ও মনকে প্রস্তুত করার এবং দিনের লক্ষ্য অর্জনের একটি সুবর্ণ সুযোগ।
সামাজিক মাধ্যম, কাজের চাপ এবং পারিবারিক দায়িত্ব আমাদের অনেক সময় কেড়ে নেয়, তাই সকালকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে আমরা জীবনকে আরও উৎপাদনশীল করতে পারি।
১. আল্লাহর সঙ্গে দিনের শুরুফজরের নামাজের ১৫-২০ মিনিট আগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া এবং দোয়া করা জীবনকে আমূল বদলে দিতে পারে। এই সময়টি শান্ত ও পবিত্র, যখন আল্লাহর সঙ্গে কোনো বাধা থাকে না।
কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি রাতে, যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আমাদের রব নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?”’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫)।
তাহাজ্জুদের সময় আপনার হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করুন। এতে মানসিক শান্তি বাড়বে এবং দিনের জন্য ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। যদি আপনি নতুন হন, সপ্তাহে এক দিন থেকে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে এটি অভ্যাসে পরিণত করুন।
ফজরের আগে অবশিষ্ট সময়ে কোরআন তিলাওয়াত করুন, কারণ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ভোরে কোরআন পড়া (ফেরেশতাদের) দ্বারা প্রত্যক্ষ করা হয়।’ (সুরা ইসরা. আয়াত: ৭৮)।
আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫২. ফজরের পর ঘুম থেকে দূরে থাকুনফজরের নামাজের পর ঘুমিয়ে পড়া অনেকের অভ্যাস, কিন্তু এটি সকালের বরকতময় সময় নষ্ট করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১)।
এই সময়ে বড় বড় কাজ সহজে সম্পন্ন করা যায়, কারণ এতে আল্লাহর বিশেষ বরকত রয়েছে।
আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন। মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১ফজরের পর ঘুমের প্রলোভন এড়াতে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। এই সময়ে পড়াশোনা, কোরআন মুখস্থ করা বা কোনো ব্যক্তিগত প্রকল্পে কাজ করা যায়। এটি দিনের বাকি সময়ে অবসরের জন্য সময় বাঁচায় এবং আগামী দিনে আরও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করে।
বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।
৩. করণীয় তালিকা তৈরি করুনএকটি করণীয় তালিকা তৈরি করা দিনের পরিকল্পনাকে সুসংগঠিত করে। আমরা প্রায়ই মনে মনে কাজের পরিকল্পনা করি, কিন্তু মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা সীমিত। একটি ডায়েরি বা ফোনের নোট অ্যাপে কাজের তালিকা লিখে রাখলে সময় ও শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। সম্পন্ন হওয়া কাজগুলো তালিকা থেকে কেটে দেওয়ার একটা আলাদা আনন্দ আছে।
এই তালিকায় দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যও অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমন কোরআনের একটি নির্দিষ্ট অংশ মুখস্থ করা বা একটি নতুন দক্ষতা শেখার পরিকল্পনা। এটি আপনাকে দিনের শুরুতে ফোকাসড রাখবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।
আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।৪. সকালে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুনসকালের মূল্যবান সময় সামাজিক মাধ্যমে বা ফোনে অযথা স্ক্রল করে নষ্ট করা উচিত নয়। অনেকে সকালে ফোন হাতে নিয়ে ‘শুধু একটু দেখে নিই’ ভেবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হারিয়ে ফেলেন। এটি মানসিক চাপ বাড়ায় এবং সকালের শান্তি নষ্ট করে।
নিয়ম করুন, সকালের নাশতা বা কিছু কাজ শুরু না করা পর্যন্ত ফোন বা সামাজিক মাধ্যমে যাবেন না। সকালে খবর পড়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, এটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে। যখন ফোন ব্যবহার করবেন, তখন ইতিবাচক ও প্রেরণাদায়ক কনটেন্ট দেখুন, যা আপনার দিনকে উজ্জ্বল করবে।
৫. শরীরচর্চা করুনশরীরচর্চার উপকারিতা আমরা সবাই জানি। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন অনেকে বাড়ি থেকে কাজ করছেন, শরীরচর্চা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। বাড়িতে কাজ করার ফলে ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথা, পেশির সমস্যা বাড়ছে।
সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।
ইউটিউবে হাজারো ধরনের ব্যায়ামের ভিডিও পাওয়া যায়, যা বাড়িতে সামান্য জায়গায় করা যায়। যদি বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকে, তবে সকালে ৩০ মিনিট হাঁটুন। লক্ষ্য হলো শরীরকে সচল রাখা এবং শক্তি বৃদ্ধি করা।
আরও পড়ুনসুস্থ জীবন যাপনে মহানবী (সা.)-এর ৯ অভ্যাস২৪ জুলাই ২০২৫সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।৬. পুষ্টিকর নাশতা গ্রহণব্যস্ততার কারণে অনেকে সকালের নাশতা বাদ দেন, কিন্তু গবেষণা বলছে, পুষ্টিকর নাশতা দিনভর মনোযোগ বাড়ায়, অপ্রয়োজনীয় চিনির লোভ কমায় এবং শক্তি জোগায়। নাশতায় উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন ওটস বা মাল্টিগ্রেইন রুটি, স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন অ্যাভোকাডো বা বাদাম, গ্রিক ইয়োগার্ট এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করুন।
সময় কম থাকলে একটি স্মুদি তৈরি করুন—পালংশাক, আপেল এবং হিমায়িত কলা ব্লেন্ড করে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর নাশতা তৈরি করা যায়। এটি দিনের শুরুতে সবুজ শাকসবজি গ্রহণের একটি সহজ উপায়।
৭. নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনবাড়ি থেকে কাজ করার সময় অনেকে ক্যাজুয়াল পোশাকে থাকেন। বরং সকালে সুন্দর পোশাক পরুন, যা আপনার মেজাজ উজ্জ্বল করবে। একটু পছন্দের সুগন্ধি ব্যবহার করলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১নবীজি (সা) বলেছেন, ‘আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা শুধু বাহ্যিক নয়, বরং এটি আপনার মানসিক প্রস্তুতি ও দিনের জন্য উৎসাহ বাড়ায়।
সকাল আমাদের দিনের ভিত্তি। ইসলাম আমাদের শেখায় যে সকাল আল্লাহর বরকত নিয়ে আসে। তাহাজ্জুদ, ফজরের পর জাগ্রত থাকা, করণীয় তালিকা তৈরি, স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা, শরীরচর্চা, পুষ্টিকর নাশতা এবং নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন—এই সাতটি অভ্যাস আমাদের সকালকে উৎপাদনশীল করবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সূত্র: দ্য মুসলিম ভাইব ডট কম
আরও পড়ুনরহমতের দুয়ারে হাজিরা১৫ জুন ২০২৪