এসির তাপমাত্রার নির্দেশনা না মানলে সেই এলাকায় অতিরিক্ত লোডশেডিং: উপদেষ্টা
Published: 21st, February 2025 GMT
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, রমজান মাসে সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের মাধ্যমে সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহে গ্রাম ও শহরের মধ্যে কোনো বৈষম্য করা হবে না।
আজ শুক্রবার বিকেলে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ এলাকায় ৬৮ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ কথাগুলো বলেন।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমানে শীতকালে সারা দেশে ৯–১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। গরমকালে এই চাহিদা ১৭–১৮ হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়। এ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে অর্থের ব্যবস্থা করেছি। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেসব উপকরণ দরকার, যেমন গ্যাস ও কয়লার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে জনগণের সহযোগিতা পেলে আমার মনে হয় না আর লোডশেডিংয়ের প্রয়োজন হবে।’
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, শীত ও গরমকালের মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবহারের চাহিদার পার্থক্য হয় দুটি কারণে। এর মধ্যে একটি হলো সেচ। সেচের জন্য প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অতিরিক্ত লাগে। এ সেচের বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অন্য কারণটি হচ্ছে এয়ার কুলিং বা এসি। এ জন্য প্রায় পাঁচ–ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসির তাপমাত্রা যদি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি থাকে, তাহলে দু–তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।
সাশ্রয় করা বিদ্যুৎ দিয়ে অতিরিক্ত চাহিদার অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পারব উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ জন্য উপদেষ্টা পরিষদের সবার কাছে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বাণিজ্য উপদেষ্টার মাধ্যমে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সব ব্যাংক এবং সচিবালয়ের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আধা সরকারি পত্র দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।’ বাসাবাড়িতে এটা কার্যকর করতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের এ পদ্ধতি কার্যকরের বিষয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু ফিডারের মাধ্যমে প্রতিটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। যেসব এলাকায় আমাদের অনুরোধ না মেনে এসির তাপমাত্রা নির্দেশনার অতিরিক্ত দিয়ে ব্যবহার করবে, সেসব এলাকায় ফিডারগুলোতে চাপ অনুভব হবে। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত বিদ্যুতের ব্যবহার নির্ধারণ করা যাবে। আমরা বলে দিয়েছি, যারা এই নির্দেশনার বাইরে যাবে, সেসব এলাকায় ফিডারগুলোতে অতিরিক্ত লোডশেডিং দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, এখনো বিদ্যুৎ খাতে সরকারিভাবে ৪২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। এই ভর্তুকি থেকে কাটিয়ে উঠতে কোম্পানির দামে বিদ্যুৎ কেনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ সময় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এহছানুল হক, সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গণপতি রায়, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কামরুল ইসলাম, সাসেক প্রকল্প-৩-এর ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সিরাজগঞ্জ শহরের যমুনা নদীর হার্ড পয়েন্টে সাত দিনব্যাপী সপ্তম জাতীয় কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ক্যাম্পের (কমডেকা) সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব যবস থ উপদ ষ ট ব যবহ র এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’
জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।