আসন্ন রমজানে গ্রাহকদের দুশ্চিন্তা
Published: 22nd, February 2025 GMT
যখন গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট বিশেষ কোনো খাতে থাকে, অন্য খাতে সরবরাহ কিছুটা কমিয়ে সামাল দেওয়া যায়। কিন্তু সংকটটা সব খাতে বিস্তৃত থাকলে আর সামাল দেওয়ার সুযোগ থাকে না। বহু বছর ধরেই দেশে গ্যাসের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ফলে এক খাতে সরবরাহ কমিয়ে অন্য খাতে বাড়ানোর কৌশল নিয়েছিল সরকার। বর্তমানে পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে কোনো হিসাব-নিকাশই মিলছে না।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। এখন সরবরাহ হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৬৫ কোটি ঘনফুট। পবিত্র রমজান মাসে এটি বেড়ে ২৮০ থেকে ২৮৫ কোটি ঘনফুট হতে পারে। শীতের মৌসুমে বাসাবাড়ি ও দাপ্তরিক কাজে বিদ্যুতের চাহিদা তুলনামূলক কম থাকায় শিল্প খাতে সরবরাহ কিছুটা বাড়ানো গিয়েছিল। কিন্তু গরম শুরু হতেই বাসাবাড়ি ও সরকারি–বেসরকারি দপ্তরে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবে শিল্পে সরবরাহ কমিয়ে আনতে হবে, যদি না বাইরে থেকে আমদানি বাড়ানো যায়।
চলতি বছর শীতের পুরো সময়টা বাসাবাড়িতে গ্যাসের সংকট ছিল। অনেক এলাকায় দিনের বেলা গ্যাস পাওয়া যেত না। রাতে রান্না করতে হতো। এই পটভূমিতে মার্চের শুরুতেই পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে। এ সময় গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট থাকলে ইফতার ও সাহ্রির সময় মানুষের ভোগান্তি বাড়তে পারে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো.
সে ক্ষেত্রে বাসাবাড়িতে গ্যাসের দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। প্রতিবছরই গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও উৎপাদন কমছে। জনজীবন ও অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, দেশে একসময় দিনে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হতো। ২০১৮ সালের পর থেকে উৎপাদন কমতে থাকে। ঘাটতি পূরণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এলএনজি আমদানি করে। অথচ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা নতুন গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করেনি।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও জ্বালানি খাতে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের জ্বালানি নীতি বাতিল করলেও চুক্তিগুলো বহাল রেখেছে। জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বক্তব্যে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এসি না চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করি, এসি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হলে কিছুটা বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। কিন্তু তাতে রোজায় যে বাড়তি বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে, সেটা পূরণ হবে কি?
গ্যাস-বিদ্যুৎ নিয়ে অতীত সরকারের ভুল নীতি থেকে বেরিয়ে এসে অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকার বাসাবাড়িতে গ্রাহকেরা নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও কেন গ্যাস পাচ্ছেন না, সেই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজতে হবে। গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও গ্যাস অপচয় রোধে জোরালো ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার আসে, সরকার যায়, কিন্তু ঢাকা শহরের বিদ্যুৎ ও গ্যাসের গ্রাহকদের প্রি–পেইড মিটার চালুর কাজটি এখনো শেষ করা যায়নি। একই পরিমাণ গ্যাস–বিদ্যুৎ খরচ করে কাউকে বেশি, কাউকে কম বিল পরিশোধ করতে হয়। ঢাকা শহরের কয়েক লাখ গ্রাহকের প্রিয় মিটার চালু করতে কত বছর লাগে?
রোজায় মানুষের ভোগান্তি যাতে না হয়, সে জন্য বাসাবাড়িতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরবর হ ক রমজ ন সরক র ঘনফ ট উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’
জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।