‘কম টাকায় চাইল-ডাইল কিনি কোনোমতে বাঁচি আচি। দুই মাস ধরি টিসিবির মাল নিয়া হামার এত্তি ট্রাক আইসে না। সামনোত রোজার মাস, মাল না পাইলে মোর মতোন গরিব মাইনসের মরণ দশা হইবে।’ টিসিবির পণ্য না পাওয়ায় আক্ষেপের সঙ্গে এভাবে কথাগুলো বলেন রংপুর নগরীর বাহাদুর সিংহ এলাকার সুবিধাভোগী সৈয়দা বেগম।

শুধু তিনি নন, হঠাৎ করে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় চলতি বছরের প্রথম দুই মাস টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ থাকায় বিশেষ করে আসন্ন রমজান মাস ঘিরে চরম উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছে দরিদ্র পরিবারগুলো।

জানা যায়, জেলায় ২ লাখ ৮৫ হাজার পরিবারের মাঝে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের ৬৬ পয়েন্টে ডিলারের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করা হয় ৯৯ হাজার ২৬৮ পরিবারকে। ৪৭০ টাকার প্যাকেজে ছিল দুই কেজি ডাল, দুই লিটার ভোজ্যতেল ও পাঁচ কেজি চাল। অভিযোগ রয়েছে, টিসিবির সুফলভোগীর অধিকাংশ রাজনৈতিক বিবেচনায় তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এ জন্য পুরোনো কাগজের কার্ড বাতিল করে নতুন স্মার্ট কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যাচাই-বাছাই শেষে স্মার্ট কার্ডের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে ২৫ হাজার ৭২টি পরিবার। তবে কার্ড বিতরণ না হওয়ায় পণ্য বিক্রি বন্ধ রেখেছে টিসিবি। কবে নাগাদ শুরু হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে পরিবারগুলো।

টিসিবির সুফলভোগীদের রংপুর সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তম এলাকার বাসিন্দা একরামুল হক বলেন, ‘ওইসব পণ্য বাইরে থেকে কিনলে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি লাগে।’ 

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ না করার কারণে টিসিবির কার্যক্রম বন্ধ থাকা সত্যি দুঃখজনক।’

টিসিবি রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগে ম্যানুয়ালি টিসিবির কার্যক্রম পরিচালিত হতো। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এলাকায় সুবিধাভোগীরা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে  পেরেছে। তবে বর্তমানে স্মার্ট কার্ড ছাড়া সুফলভোগীরা পণ্য কিনতে পারবে না। গত বছরের ১০ জানুয়ারি প্রথম ধাপে সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য মোট বরাদ্দের ২০ হাজার ৪০৩টি এবং ওই বছরের ১২ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৪ হাজার ৬৬৯টি ফ্যামিলি স্মার্ট কার্ড জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু ডিসেম্বরের পর থেকে সিটি করপোরেশন এলাকায় নতুন করে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়নি। সে কারণে পণ্য বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। টিসিবি তাদের নিবন্ধিত ২১৪ জন ডিলারের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করলেও কার্যক্রম পরিচালনা করে সিটি করপোরেশন। আর জেলা প্রশাসন এই কার্যক্রম সমন্বয় করেন।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা জানান, জেলা প্রশাসন থেকে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড কয়েক মাস আগে পেয়েছি। এতদিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সুবিধাভোগীদের মাঝে স্মার্ট কার্ড বিতরণের সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাইনি। এখন চিঠি পেয়েছি এবং কার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে। আগামী রমজানে পণ্য বেচা যাবে বলেও জানান তিনি।

টিসিবির কার্যক্রমে সমন্বয়কারী রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রমিজ আলম বলেন, খুব দ্রুত টিসিবি এবং সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে টিসিবি রংপুরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘কার্ড বিতরণ না হওয়ায় সিটি করপোরেশন এলাকায় পণ্য বিক্রি বন্ধ থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে ৬৬০ টাকার প্যাকেজে রয়েছে ২ লিটার ভোজ্যতেল, ২ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি, ২ কেজি ছোলা এবং ৫ কেজি চাল।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক র ড ব তরণ পর ব র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম

ঈদের বন্ধের আমেজ কাটতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো। ক্রেতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে বেড়েছে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিনের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। পেঁয়াজ, রসুন ও চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও নিম্নমুখী।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর নগরের কাঁচাবাজারে সবজির সরবরাহ কমে যায়। ফলে দাম ছিল কিছুটা বাড়তি। গত রোববার ও সোমবারের দিকে নগরের আড়তগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে। অধিকাংশ সবজির দামও ৪০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে গত মঙ্গলবার থেকে আবারও বাজারে পুরোদমে সবজির সরবরাহ শুরু হয়েছে। যার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।

আজ শুক্রবার নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি আড়তে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে। বেশির ভাগ সবজির দাম প্রতি কেজি ১০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে খুচরা বাজারগুলোতে প্রায় দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা যায়। নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, সাব এরিয়া ও কাজির দেউড়ি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৬০ টাকার বেশি। লাউ, মিষ্টিকুমড়া ও ফুলকপির দাম কিছুটা কম। এসব সবজির দাম ৫০ টাকার আশপাশে। খুচরা বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। পরিবহন খরচ ও আগে কেনার অজুহাতে বাড়তি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদার নুরুল ইসলাম বলেন, বাজারে সব সবজির দাম কম। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তাদের ভোগান্তি হচ্ছে। আড়তের দামের দ্বিগুণ দামে তাঁরা সবজি বিক্রি করছেন।

সবজির বাজারের পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন ও চালের দামও নিম্নমুখী। খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে আজ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫২ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। অন্যদিকে রসুনের কেজি আড়তে ছিল ৮৫ থেকে ১১০ টাকা। খুচরায় সেটি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।

পাহাড়তলী চালের আড়তে মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা) কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে জিরাশাইল ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত তিন দিন আগ থেকে চালের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম কমেছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের সরবরাহ যথেষ্ট আছে। চালের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই এখন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুপেয় পানির সংকট, কাজে আসছে না কোটি টাকার প্রকল্প
  • নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
  • সুপারম্যানের কাছে আছে পৃথিবীর শক্তি সংকটের সমাধান
  • ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কী কী ঘটতে পারে?
  • ইরান–ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা রূপ নিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে
  • ইরানে হামলার আগে গোপনে ইসরায়েলে হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
  • ভারত থেকে আইফোন রপ্তানি কেন বাড়ছে
  • সুনামগঞ্জে তাজা গ্রেনেড উদ্ধারের পর নিষ্ক্রিয় করল সেনাবাহিনী
  • কমেছে সবজির দাম
  • বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম