বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানো ও সুদের হার কমানোর দাবি
Published: 22nd, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। পাশাপাশি আর্থিক খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা ফেরানো, ঋণের সুদহার কমানো এবং বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নীতি-সহায়তার ধারাবাহিকতা চেয়েছে সংগঠনটি। এ জন্য বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ভ্যাট কমানোর ওপর জোর দিতে বলেছে তারা। এ ছাড়া শিল্প খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সহায়ক জ্বালানি মূল্য নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে ডিসিসিআই।
‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা (জুলাই-ডিসেম্বর, অর্থবছর ২০২৪-২৫)’ শীর্ষক এক সেমিনারে এই আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সংগঠনের ঢাকার মতিঝিলের নিজস্ব মিলনায়তনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ দুই অঙ্কে উন্নীত করতে হবে। খেলাপি ঋণ কমাতে নজরদারি বাড়াতে হবে। তিনি বাজারে অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙতে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং নিত্যপণ্যে ভ্যাট হ্রাসের পাশাপাশি বিলাসবহুল পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
তাসকীন আহমেদ স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নীতিসহায়তার ধারাবাহিকতা, অবকাঠামো খাতের সমন্বিত উন্নয়ন এবং দেশি পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে আফ্রিকার বাজারে মনোনিবেশে জোর দেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্প খাতের ঋণপ্রাপ্তিতে বিদ্যমান নীতিমালা সহজীকরণ, স্বল্প সুদে অর্থায়নের বিকল্প ব্যবস্থা প্রবর্তন ও ডিজিটাল ফাইন্যান্সিং ব্যবস্থার সম্প্রসারণ অপরিহার্য বলে মত দেন তিনি।
আলোচনায় পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ-সংকটের কারণে শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে বিধিনিষেধের ফলে আমাদের সরবরাহে স্বল্পতা দেখা দেয়, যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। চলতি বছরের মধ্যে রিজার্ভ ২৫-২৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হলে শিল্প খাতে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ডলারের স্বল্পতা কেটে যাবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এম মাশরুর রিয়াজ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি রিজার্ভ বৃদ্ধি, শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং কারখানায় অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেন। বলেন, এগুলো করতে পারলে রপ্তানি পাঁচ-সাত বিলিয়ন বৃদ্ধি পাবে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বা উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে গতানুগতিক বাজেট প্রণয়ন করা হলে বিদ্যমান সংকট সমাধান করা সম্ভব হবে না। নতুন বাজেটে ঘাটতি বেশি হলে এবং সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বাড়লে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হবে না। এ ছাড়া রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে বিদ্যমান ভ্যাট-ব্যবস্থার অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি অভিমত দেন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিল্প খাতে আমাদের কমপ্লায়েন্স বাড়ানোর পাশাপাশি গবেষণার ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি খাতের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। এ ছাড়া সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) ও জয়েন্ট ভেঞ্চার বা যৌথ উদ্যোগে জোর দেওয়া উচিত। আমাদের ওষুধ ও চামড়া খাতের ওপর আরও অধিক গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) সায়েরা ইউনুস বলেন, বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতার কারণে আমাদের পণ্য আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে এবং সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতিতে সুদের হার সমন্বয়ের চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে পণ্যের আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হ্রাস পায়নি। আশা করছি, ২০২৬ সালে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে এবং বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ দুই অঙ্কে উন্নীত হবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো.
আব্দুর রহিম খান জানান, লজিস্টিক পলিসি ও বাণিজ্য সহায়তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে সামগ্রিক বাণিজ্য ব্যয় ১০-১৫ শতাংশ কমানো সম্ভব। হালকা প্রকৌশল শিল্পকে গেমচেঞ্জার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ খাতের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গাজীপুরে একটি টেকনোলজি সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
সেমিনারে ঢাকা চেম্বারের সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
এএ
উৎস: SunBD 24
কীওয়ার্ড: ব সরক র ব যবস থ আম দ র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচন ২৭ নভেম্বর
প্রতিষ্ঠার দুই দশক পর প্রথমবারের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৭ নভেম্বর এই বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
টানা ৩০ ঘণ্টা অনশনে তিন জবি শিক্ষার্থী অসুস্থ
‘নভেম্বরে সম্পূরক বৃত্তির আশ্বাস দিয়েছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যক্রম শুরু হবে। কমিশন পরবর্তী ১১ দিনের মধ্যে তফসিল প্রস্তুত ও ঘোষণা করবে। এছাড়া কমিশন ধাপে ধাপে নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এর মধ্যে থাকবে— জকসু নির্বাচন নীতিমালা ও আচরণবিধি প্রণয়ন; ছাত্র সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠন ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে মতবিনিময়; ভোটার তালিকা প্রণয়ন, খসড়া প্রকাশ ও সংশোধন; চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ; মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই ও আপত্তি নিষ্পত্তি; প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ ও প্রচারণা কার্যক্রম।
সবশেষে ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ, একই দিনে অফিসিয়াল ফলাফল প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। দীর্ঘ আন্দোলন, দাবি-দাওয়া ও শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে অবশেষে প্রথমবারের মতো জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলো প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংবিধি ও বিধি অনুযায়ী রোডম্যাপের প্রতিটি ধাপ বাস্তবায়িত হবে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী