দেশে গরম পড়তে শুরু করায় বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় এরই মধ্যে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম: ‘গ্যাস-বিদ্যুতে ভয়াবহ ভোগান্তির আশঙ্কা’। অন্যান্য সংবাদপত্রেও রয়েছে এ ধরনের খবর। বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের যথেষ্ট সক্ষমতা নেই, তা কিন্তু নয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সক্ষমতাও রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না মূলত প্রাথমিক জ্বালানির অভাবে। অভাবটা আসলে অর্থের। এই অর্থের যথেষ্ট জোগান থাকলে অর্জিত সক্ষমতা ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নেওয়া যেত। তাতে অর্থনীতি ও জনজীবনে সুফলও মিলত। বাস্তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অর্জিত সক্ষমতার অনেকখানি অব্যবহৃত থাকায় উল্টো গুনতে হচ্ছে ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’। 

বিদ্যুৎ সংকটের সঙ্গে গ্যাসের সম্পর্ক নিবিড়। সিংহভাগ বিদ্যুৎ আমরা উৎপাদন করি গ্যাস দিয়ে। এর বড় চাহিদা রয়েছে শিল্প খাতেও। ভারী শিল্পের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে দ্রুত। এ অবস্থায় বাসাবাড়িতে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের নীতি থেকে সরে আসে সরকার। সেখানে উৎসাহিত করা হচ্ছে এলপি গ্যাস ব্যবহারকে। গ্যাসের উল্লেখযোগ্য চাহিদা রয়েছে সার কারখানায়। কিন্তু সব সার কারখানা একযোগে চালিয়ে এর উৎপাদন কাম্য পর্যায়ে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে না কখনোই। এ মুহূর্তে খবর– সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে সামনে এটা জোগানো হবে বিদ্যুতে। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে পূর্ণ ক্ষমতায় চালু রাখার চেষ্টা থাকবে মার্চ থেকে। কয়লা, ফার্নেস অয়েল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টাও থাকবে। এসব জ্বালানিতে আমরা আবার ব্যাপকভাবে আমদানিনির্ভর। ‘আমদানি সক্ষমতা’র প্রশ্ন ওঠে স্বভাবতই। গ্যাসও দেশীয় উৎস থেকে যথেষ্ট মিলছে না। দেশীয় উৎস থেকে সিংহভাগ গ্যাস আবার জোগায় বিদেশি কোম্পানি। তাদের বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। বিদেশি যেসব উৎস থেকে এলএনজি এনে পরিস্থিতি সামলানো হচ্ছে, সে ক্ষেত্রেও রয়েছে বকেয়া বিলের সংকট। এ নিয়ে ‘সরবরাহ সংকট’ দেখা দিলে কী হতে পারে পরিস্থিতি, সে প্রশ্নও সামনে এসেছে। 

বিদ্যুৎ খাতেও বকেয়া বিল পরিশোধের সংকট কম নেই। বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা অন্তত অর্ধেক পাওনা টাকা চাইছে, যাতে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। ভারত থেকেও (প্রধানত আদানি) উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদ্যুৎ আমরা আনছি। তারাও বকেয়া পরিশোধে চাপ দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে বিগত সরকারের আমলে সম্পাদিত চুক্তি প্রশ্নবিদ্ধ হলেও, এ মুহূর্তে আদানির বিদ্যুৎ আমাদের লাগছে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের হিসাবায়ন নিয়ে মতভেদ আছে তাদের সঙ্গে। গোটা জ্বালানি খাত বিগত সরকার যেভাবে সাজিয়েছিল, তাতেও আছে গুরুতর প্রশ্ন। সম্পাদিত চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। তবে এ মুহূর্তে জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে– সামনেই লোডশেডিং কতটা বাড়বে। মার্চের শুরুতে রমজানও শুরু হচ্ছে। এ সময় গ্যাস সরবরাহে সংকট আরও বাড়বে কিনা– এ প্রশ্নও উপস্থিত। 
শীতেও গ্যাস সংকট কম মোকাবিলা করতে হয়নি এবার। শিল্পে তো বটেই; বাসাবাড়িতে গ্যাসের ঘাটতি অনেক ভুগিয়েছে। এলপি গ্যাসে রান্না এবং রেস্তোরাঁর ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে মানুষের। তাতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে চলমান মূল্যস্ফীতিতে। আর শিল্পের অন্যান্য সংকটের সময় যুক্ত হয়েছে গ্যাসের ঘাটতিজনিত সমস্যা। গ্যাস সংকটে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোনো কোনো শিল্পাঞ্চলে চলমান অস্থিরতা পেয়েছে নতুন মাত্রা। সামনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেশি গ্যাস জুগিয়ে শিল্পে সেটা কমানো হলে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, কে জানে! প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকেও গ্যাসের চাহিদা অনেক। বস্ত্র, সিরামিক, সিমেন্ট, স্টিলের মতো শিল্প গ্যাসের ওপর বিপুলভাবে নির্ভরশীল। এদিকে সরকার আবার শিল্পে (প্রধানত নতুন সংযোগে) ব্যবহৃত গ্যাসের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে চাইছে। এতে স্বভাবতই তীব্র আপত্তি রয়েছে উদ্যোক্তাদের। তবে মূল সমস্যা হলো, উচ্চ দামেও চাহিদামতো গ্যাস পাচ্ছে না শিল্প খাত। বিগত সরকারের আমলে এর দাম তো কম বাড়ানো হয়নি। তখন সংশ্লিষ্ট সবাই এটা মেনে নিয়েছিলেন এই প্রতিশ্রুতিতে– ‘নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস’ মিলবে। কিন্তু বাসাবাড়িতে বাঁধা বিল পরিশোধকারীরাও গ্যাস ঠিকমতো পাচ্ছে না। 

গ্যাসের চাহিদা সঠিকভাবে নির্ণীত হয়নি বলেই মনে হয়। বিদ্যুতের চাহিদাও কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা রয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে বলেই দাবি। এ অবস্থায় গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহে কতটা কী ঘাটতি হচ্ছে, তা নিশ্চয় স্বচ্ছভাবে জানানো হবে। আগাম তথ্য পরিবেশন করে বিভিন্ন খাতকে প্রস্তুত রাখার ব্যাপারও রয়েছে। তাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়তো কিছুটা সুবিধা হবে। সংকটকালে গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতে অপচয় রোধের কথাটি বলা হয়ে থাকে। সম্প্রতি জ্বালানি উপদেষ্টা জোর দিয়েছেন এসির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে এনে দুই হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ওপর। তাদের ধারণা, সামনে লোডশেডিং দুই হাজার মেগাওয়াটের মধ্যেই থাকবে। সব খাতে এসির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে তাহলে আর লোডশেডিংয়ের প্রয়োজন হবে না– এটাই তাঁর অভিমত। এমন অভিমত অতীতেও কম শোনা যায়নি। বাস্তবতা হলো, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কঠিন। সরকারি সংস্থা প্রদত্ত হিসাবে গরমিলও থাকে। উপদেষ্টা পরিষদ না চাইলেও আমলারা সংকটের তীব্রতা কিছুটা হলেও আড়াল করতে চাইবে। কিন্তু গ্যাস-বিদ্যুৎ না পেলে সংশ্লিষ্ট সবাই ঠিকই বুঝতে পারবে এর তীব্রতা। এসব জরুরি সেবা ঘিরে অতীতে বড় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে মানুষ অবশ্য অনুধাবন করছে, এসবের জন্য বর্তমান সরকার দায়ী নয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা বরং হিমশিম খাচ্ছে।

রমজানে পণ্যের বাজার শান্ত রাখতে এবার আগে থেকেই উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তবে ঘনায়মান গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট সুনিয়ন্ত্রণে থাকবে না বলে মনে হচ্ছে। বকেয়া বিল পরিশোধের সংকটে সরকার কেবল বিপিসির ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আনতে পেরেছে বলে জানা যায়। সংকট নাকি আরও বেড়েছে পিডিবি ও পেট্রোবাংলার ক্ষেত্রে। যেভাবেই হোক, এটাকে আর বাড়তে দেওয়া যাবে না। আদানি, শেভরন, কাতার এনার্জিসহ যারা বিপুল অর্থকড়ি পায়, তাদের বিল পরিশোধে অন্তত আশ্বস্ত করতে হবে সরকারকে। ডলারে অর্থ পরিশোধে সংকট থাকলে সেটারও দ্রুত নিরসন জরুরি। প্রাথমিক জ্বালানি আমদানি যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়। দূরের উৎস থেকে জ্বালানি আমদানিতে বেশি সময় লাগলে সেটাও সংকট বাড়িয়ে তোলে। এলএনজি পরিশোধনে নিয়োজিত আমাদের দুটি টার্মিনালই ভাসমান। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এগুলো অকেজো হয়েও সংকট বাড়ায়। সামনে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে ওঠার সময়ে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহও স্বাভাবিক রাখতে হবে। কূপ খনন আর সংস্কার করে উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়াস জোরদার করা চাই। অন্তর্বর্তী সরকার এ ক্ষেত্রে রেখে যেতে পারে কিছু অনুসরণযোগ্য পদচ্ছাপ। 
আমরা ধান-চাল উৎপাদনে কিছুটা সংকটে আছি। এ অবস্থায় চলমান বোরো মৌসুমে সেচে বিদ্যুৎ সরবরাহও স্বাভাবিক রাখতে হবে। নইলে ডিজেল ব্যবহারে খরচ বাড়বে কৃষকের। বিদ্যুতের অভাবে গ্রামীণ অকৃষি খাতও যেন বাড়তি সংকটে না পড়ে। এর কুপ্রভাব পড়বে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যে।

হাসান মামুন: সাংবাদিক, কলামিস্ট

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ য স সরবর হ ব ল পর শ ধ পর স থ ত উৎস থ ক ব যবহ র ক ষমত সরক র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না

চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।

বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।

বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।

জ্বালানি তেল

বিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।

এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।

কৃষিপণ্য

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।

খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।

২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।

চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।

দেশে কেন দাম বেশি

বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।

আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।

দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।

সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
  • জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন
  • বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
  • নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • ২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
  • যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প