বাজারে তেলের চাহিদা বাড়তি, সরবরাহ স্বাভাবিকের মতো
Published: 25th, February 2025 GMT
সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে দেশে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার টন। গত ছয় বছরের মধ্যে এক মাসের হিসাবে এটিই সর্বোচ্চ আমদানি। আবার একই সময়ে সয়াবিন তেল উৎপাদনের কাঁচামাল সয়াবিনবীজ আমদানিও ছিল ৩১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আমদানি হওয়া এই তেল প্রক্রিয়াজাত শেষে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বাজারে থাকার কথা। কিন্তু জানুয়ারির বিপুল আমদানির পরও বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ সংকটের পেছনে দুটি কারণের কথা জানা গেছে। প্রথমত, বাজারে খোলা সয়াবিন তেল হিসেবে যে তেল বিক্রি হয়, তার বড় অংশ সুপার পাম তেল। পাম তেল ভালোভাবে পরিশোধন করে তা সুপার পাম হিসেবে বিক্রি করা হয়, যা দেখতে প্রায় সয়াবিন তেলের মতো। তবে শীতকালে এই তেল জমাট বেঁধে যায়। এ কারণে শীতকালে সয়াবিন হিসেবে সুপার পাম তেলের বিক্রি কমে যায়। আর বেড়ে যায় বোতলজাত বা প্রকৃত খোলা সয়াবিন তেলের বিক্রি।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সয়াবিন তেলের জাহাজ আসতে শুরু করেছে। গত রোববার বন্দরে আসা একটি জাহাজ থেকে টি কে গ্রুপের সয়াবিন তেল খালাস শুরু হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই বাজারের সংকট কেটে যাবে। শফিউল আতহার, পরিচালক, টি কে গ্রুপদ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে, জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ আমদানি হলেও ফেব্রুয়ারির প্রথম তিন সপ্তাহে আমদানি ছিল খুব কম। এ সময়ে আমদানি হয়েছে ২৫ হাজার টন তেল। এদিকে রমজানকে সামনে রেখে ফেব্রুয়ারিতে বাজারে তেলের চাহিদা বেড়ে যায়, কিন্তু বাড়তি সেই চাহিদা সামাল দেওয়ার মতো ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ধারাবাহিকতা ছিল না। এতে সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে আমদানি করা তেলের মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান তাদের কারখানায় পরিশোধনের জন্য ১ লাখ ১৭ হাজার টন সয়াবিন তেল খালাস করে। এর আগে সর্বশেষ এক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। ওই সময় ১ লাখ ৪৬ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছিল।
এনবিআরের হিসাবে, অপরিশোধিত সয়াবিন ছাড়াও জানুয়ারিতে সয়াবিনবীজ আমদানি হয়েছে তিন লাখ টন। ২০২২ সালের জুনের পর এই আমদানিও ছিল সর্বোচ্চ। আমদানিকারকেরা বলছেন, তিন লাখ টন সয়াবিনবীজ থেকে ৪৫ হাজার টন সয়াবিন তেল পাওয়ার কথা। এতে সবমিলিয়ে জানুয়ারিতে সরবরাহ করার মতো তেলের জোগান ছিল ১ লাখ ৬২ হাজার টন।
ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ২৩–২৪ লাখ টন। সেই হিসাবে ভোজ্যতেলের মাসিক চাহিদা ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টন। তার মধ্যে সয়াবিন তেলের গড় চাহিদা ৭৯ থেকে ৮৭ হাজার টন। রমজানে এই চাহিদা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ে। রমজানে সয়াবিনসহ অন্যান্য তেল মিলিয়ে ভোজ্যতেলের চাহিদা বেড়ে তিন লাখ টনে উন্নীত হয়।
এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে আমদানি করা অপরিশোধিত সয়াবিন ও সয়াবিনবীজ থেকে পরিশোধিত যে তেল পাওয়া গেছে, তা এক মাসের স্বাভাবিক চাহিদা সমান। অথচ রমজানকে সামনে রেখে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে বাজারে সয়াবিন তেলের চাহিদা বেড়ে যায়। বাড়তি সেই চাহিদা পূরণের মতো সরবরাহ প্রস্তুতি ছিল না আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর।
জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের আরএম এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার শাহেদ উল আলম বলেন, প্রতিবছর শীত মৌসুমে সয়াবিনের চাহিদা থাকে বেশি। এবার রোজার আগে এ চাহিদা আরও বেড়েছে। জানুয়ারির মতো ফেব্রুয়ারিতে আমদানি বাড়তি থাকলে বাজারে তেলের এ সংকট হতো না।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি দোকানে গিয়ে সয়াবিনের মজুত পেয়েছি। এ কারণে এসব দোকানকে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া সয়াবিন পরিশোধন কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। বাজারের সংকট দূর করতে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
সংকট দ্রুত কাটার আশা
এদিকে শীত মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে সুপার পাম আবারও সয়াবিন রূপে ফিরতে শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে এসে আমদানিও বাড়তে শুরু করেছে। তাই খুব দ্রুত সয়াবিন তেলের সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন পরিশোধন কোম্পানি ও ব্যবসায়ীরা।
টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সয়াবিন তেলের জাহাজ আসতে শুরু করেছে। গত রোববার বন্দরে আসা একটি জাহাজ থেকে টি কে গ্রুপের সয়াবিন তেল খালাস শুরু হয়েছে। সামনে আরও তেল আসবে। আমাদের আমদানি করা তেল দ্রুত আমরা বাজারে সরবরাহের চেষ্টা করছি। আশা করছি, শিগগিরই বাজারের সংকট কেটে যাবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ জ র টন পর শ ধ ত ল আমদ ন সরবর হ ল খ টন রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল রিচার্ড কোরেল ভেবেছিলেন, দেশটির পারমাণবিক বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানি সহজভাবেই শেষ হবে। তবে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের আগের দিন বুধবার রাত ৯টা ৪ মিনিটে সে আশা ভেঙে গেছে।
ওই সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা অবিলম্বে শুরু করতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের পেছনে থাকতে পারে না।
ট্রাম্প বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় এবং চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিনেটে সশস্ত্র বাহিনী কমিটির প্রায় ৯০ মিনিটের শুনানিতে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বারবার কোরেলকে প্রশ্ন করা হয়। ট্রাম্পের মন্তব্যে অনেক আইনপ্রণেতাই এ সময় ছিলেন বিভ্রান্ত। এ থেকে বোঝা যায়, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন ও এর বাইরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করেননি যে ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার পরীক্ষা করতে বলছেন, নাকি বিস্ফোরক পরীক্ষায় ৩৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্পের নির্দেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যা শীতল যুদ্ধের ভয়ংকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড কোরেলকে প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা শুরু করলে তা কি বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।
কোরেল বলেন, ‘যদি আমাকে স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের (স্ট্র্যাটকম) কমান্ডার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, আমার কাজ হবে, পারমাণবিক পরীক্ষাবিষয়ক যেকোনো আলোচনা সম্পর্কে সামরিক পরামর্শ দেওয়া।’
ভাইস অ্যাডমিরাল কোরেলকে গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প স্ট্র্যাটকমের প্রধান করার জন্য মনোনীত করেন। স্ট্র্যাটকম পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধ ও আক্রমণের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে। কোরেল পুরো শুনানিতে সতর্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় ও চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টশুনানির এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প কি পারমাণবিক ডিভাইসের বিস্ফোরক পরীক্ষা নয়, বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা বলছেন কি না।
জবাবে কোরেল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য জানি না, তবে এটি এমন একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমি তা মেনে নিই।’
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে গত বৃহস্পতিবার মুখোমুখি বৈঠকে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিং