‘চ‌্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আপনাদের লক্ষ‌্য কি?
নাজমুল হোসেন শান্ত: আমরা চ‌্যাম্পিয়ন হওয়ার জন‌্য খেলবো।

বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের এমন আত্মবিশ্বাসী উত্তর শোনার জন‌্য সামনে বসা ক্রীড়া সাংবাদিকদের কেউই প্রস্তুত ছিল না। কেননা নিজেদের সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ‌্যের ফরম‌্যাটেই অচেনা বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সবশেষ সিরিজে ৩-০ ব‌্যবধানে হোয়াইটওয়াশ। সেখানে চ‌্যাম্পিয়নস ট্রফিতে চ‌্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখা আকাশছোঁয়ার মতো।

পায়ের নিচে মাটি শক্ত না হলে আকাশ যে ছোঁয়া যায় না তা হাড়ে হাড়েই টের পেল নাজমুল হোসেন শান্ত অ‌্যান্ড কোং। চ‌্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম দুই ম‌্যাচ বাজেভাবে হেরে, অসহায় আত্মসমর্পণ করে এক ম‌্যাচ আগেই বিদায় নিশ্চিত করেছে। তাতে একটা বিষয় সামনে এসেছে স্পষ্টভাবে, গড়পড়তা পারফরম‌্যান্সে বর্তমান সময়ের ক্রিকেটে টিকে থাকা সম্ভব না কোনোভাবেই।

আরো পড়ুন:

অস্ট্রেলিয়া-দ.

আফ্রিকার ম্যাচে বৃষ্টির বাগড়া

আমাদের দুটি বড় জুটির প্রয়োজন ছিল: শান্ত

দুই ম‌্যাচেই বোলাররা যা করার করেছেন। ব‌্যাটসম্যানরা ছিলেন স্রেফ অসহায়। প্রস্তুতি ম‌্যাচ থেকে ব‌্যাটিংয়ে যে করুণ দশা শুরু হয়েছিল তা গতকাল নিউ জিল‌্যান্ডের বিপক্ষে ম‌্যাচেও ধরা পড়েছে প্রবলভাবে। আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে। ডট বলের স্রোতে ভেসে গেছে ইনিংসের চেহারা। অহেতুক শট খেলতে গিয়ে বিলিয়ে এসেছেন উইকেট।

স্বপ্ন দেখতে হলে জোর থাকতে হয়। সেই লক্ষ‌্য পূরণে জেদ থাকতে হয়। মুখের কথায় যতটা বিশ্বাস ছড়ানো যায় কিন্তু ২২ গজে সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন থাকতে হয়। বাংলাদেশ দলের পারফরম‌্যান্স, মাঠে শরীরি ভাষা, লক্ষ‌্যে পৌঁছানোর লড়াই কোনোকিছুতেই বাংলাদেশ রেসে ছিল না। বরং নিজেদের পারফরম‌্যান্সকে হাস‌্যরসে পরিণত করেছেন।

নিজেরা ক্রিকেট খেলেন বলে বাইরের সমালোচনা গায়ে মাখাতে পছন্দ করেন না। সমর্থকদের আয়নায় মুখ দেখতে বলতেও দ্বিধা করেন না। পেইন কিলার নিয়ে লুকিয়ে মাঠে নামার মতো ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলেন নির্ধিদ্বায়। সাফল‌্য বলে কয়ে আসে না। এর জন‌্য যে নিবেদন থাকতে হয়, কষ্ট করতে হয়, ভাবনার গভীরতা থাকতে হয় তার ধারে-কাছেও নেই ক্রিকেটাররা। তাইতো এখন সমালোচনা বেড়ে গেছে বহুগুণ। হাসি আর ট্রলের ঝড় বইছে।

তবে দলের প্রত‌্যেক ক্রিকেটারের ভাবনা, স্বপ্ন চ‌্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো ছিলই বলে মনে করছেন শান্ত, ‘‘আমার কাছে এরকম মনে হয় না (চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা বলায় দল চাপে পড়েছে)। কারণ, দলে যতগুলি ক্রিকেটার ছিল, সবাই এই স্বপ্ন নিয়েই এসেছিল। আমার মনে হয় যে, যদি বড় স্বপ্ন না-ই দেখি, তাহলে আসলে কীভাবে খেলব! এখানে তো শুধু লড়াই করতে আসিনি, জিততে এসেছি।”

৫০ ওভারের ম্যাচে যদি ৩০ ওভার থেকে রানই না আসে, তাহলে আর বাকি থাকে কী! নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ইনিংসে ১৮১ বলে কোনো রান আসেনি। ভারতের বিপক্ষে সংখ্যাটা ছিল ১৫৯। দুবাইয়ের সেদিনের উইকেট কিছুটা কঠিন থাকলেও রাওয়ালপিন্ডিতে রানের পসরা সাজানো উইকেটে খেলেছে বাংলাদেশ। তারপরও ব্যাটিংয়ের এই দশা!

ডট বলের ব‌্যাখ‌্যায় শান্ত সামনে আনলেন ধারাবাহিক উইকেট হারানোর প্রসঙ্গটি, “এই অভ্যাসটা তৈরি করা জরুরি যে, নিয়মিত আমরা কীভাবে তিনশ করতে পারি। আমরা হয়তো একদিন-দুদিন তিনশ করি। এখান থেকে বের হওয়ার জন্য অনুশীলনে বলেন, নিয়মিত কীভাবে ভালো উইকেটে খেলা যায়, নিয়মিত বড় দলের বিপক্ষে এই ধরনের স্কোর গড়া যায়, এটাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আজকের ম্যাচে ডট বল হওয়ার কারণ, আমরা মাঝের ওভারগুলোয় কিছুক্ষণ পরপরই উইকেট দিয়ে দিয়েছি।”

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রফরম উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়

অভাগাদের বছরে ‘কুফা’ কাটানোর তালিকায় সর্বশেষ নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে গতকাল অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টেস্টের রাজদণ্ড হাতে পেয়েছে টেম্বা বাভুমার দল। প্রোটিয়াদের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসর শেষ হয়েছে।

তবে এর রেশ থাকতেই চলে এসেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসর বা চক্র। ২০২৫-২৭ চক্রের শুরুটা হচ্ছে বাংলাদেশকে দিয়েই। আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এটিই প্রথম সিরিজ।

ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বছর পার দিলেও রেকর্ড ভালো নয়। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আসার পর থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ক্রমশ উন্নতির দিকে।

প্রথম চক্রে (২০১৯-২১) কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দ্বিতীয় চক্রে (২০২১-২৩) মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক জয় বাদ দিলে বলার মতো কিছু নেই। প্রথম দুই চক্র শেষ করতে হয়েছে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে।

তবে তৃতীয় চক্রে (২০২৩-২৫) বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বেশ আশাব্যঞ্জক। ১২ টেস্ট খেলে জিতেছে চারটিতে। এর মধ্যে গত বছর পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের সুখস্মৃতিও আছে। পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান ছিল সাত নম্বরে; পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপরে। তিন চক্র মিলিয়ে বাংলাদেশ খেলেছে ৩১ টেস্ট। জিতেছে পাঁচটি, ড্র করে দুটি আর হেরেছে ২৪টি।

এবার কী হবে? শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে আশার বাণীই শুনিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল। তিনি বলেছেন, ‘গত চক্রে আমরা চারটা ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্য থাকবে এই চক্রে কীভাবে আরও একটা-দুইটা ম্যাচ বেশি জিততে পারি।’ সেটা কতটুকু সম্ভব, সময়ই বলে দেবে।

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের তিন চক্রের মতো এবারও অংশ নিচ্ছে ৯ দল। প্রত্যেক দল খেলবে ছয়টি করে সিরিজ—তিনটি নিজেদের মাঠে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। পয়েন্ট সিস্টেমেও কোনো পরিবর্তন আসেনি (জিতলে ১২, ড্র করলে ৪, টাই করলে ৬ পয়েন্ট)।

তবে এবার ম্যাচের সংখ্যা গত দুবারের চেয়ে একটি বেড়েছে। ফাইনালসহ মোট ম্যাচ হবে ৭১টি, সিরিজ ২৭টি। প্রত্যেক সিরিজেই সর্বনিম্ন দুই ও সর্বোচ্চ পাঁচটি ম্যাচ হবে।

চতুর্থ চক্রের ফাইনালও লর্ডসে আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ম্যাচ হবে ২০২৭ সালের জুনে। ফাইনালের আগে শেষ সিরিজ হবে সেই বছরের মার্চে; পাকিস্তানে দুটি টেস্ট খেলতে যাবে নিউজিল্যান্ড।

এবার সবচেয়ে বেশি ২২ ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। সবচেয়ে কম ১২টি করে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা, যাদের সিরিজ দিয়েই শুরু হচ্ছে এবারের চক্র। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ দলের টেস্ট সিরিজ এই একটিই। নাজমুল-মুশফিক-তাইজুলদের বাকি পাঁচ সিরিজই ২০২৬ ও ২০২৭ সালে। সব সিরিজেই দুটি করে ম্যাচ।

২০২৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ মার্চে, ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই বছরের আগস্টে দল যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। ২০০৩ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেটিই হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রথম টেস্ট সিরিজ।

এই চক্রে বাংলাদেশের ঘরের মাঠে দ্বিতীয় সিরিজ খেলবে ২০২৬ সালের অক্টোবরে; খেলতে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের মাসে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। বাংলাদেশের শেষ সিরিজ দেশের মাটিতেই; ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসবে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালের পর এটিই হবে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ।

অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো খবর হলো ২০২৫-২৭ চক্রে বাংলাদেশ যে ছয় দলের বিপক্ষে খেলবে, এর চারটির বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তারা হারেনি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করেছে আর পাকিস্তানকে করেছে ধবলধোলাই (দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়)। সিরিজ হেরেছে শ্রীলঙ্কা আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন অধিনায়ক কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তামিমের
  • টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়
  • ব্রাজিলে আলোকাড়া রিবেইরোয় চোখ আর্সেনাল-নাপোলির
  • ব্রাজিলে আলো কাড়া রিবেইরোয় চোখ আর্সেনাল-নাপোলির
  • রিবেইরোয় চোখ আর্সেনাল-নাপোলির 
  • কোচ কাবরেরার পদত্যাগ দাবি, অনিশ্চয়তায় ভবিষ্যৎ